পৃথিবীতে অবাক করার মত ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। পৃথিবী সৃষ্টির অবদি থেকে এমনি নানা অবাক করার মত কান্ড ঘটেছে। শিশু জন্ম গ্রহণ করে কথা বলেছে। অবাক করেছে পৃথিবীকে। পরবর্তীতে বিশ্বের মানুষের কল্যাণে নবী হয়ে আগমন করলেন। করোনা কালেও ঘটে চলেছে অবাক করার মত নানা সংবাদ।
বয়স মাত্র নয় বছর। ‘রায়ান কাজী’ নামের এই শিশুর আয় শুনলে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হবে। এই বয়সে এই বছরে তার পকেটে ২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। আর টাকায় ২৫১ কোটির বেশী। ২০২০ সালের সবচেয়ে বেশী আয়কারী ইউটিউবারদের তালিকা সবার ওপরে আছে আমেরিকার এই স্কুল বালক।
রায়ান কাজী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে থাকে। তবে যাদের ইউটিউবে নিয়মিত যাতায়াত, তারা অবশ্যই রায়ান সম্পর্কে জানেন। রায়ানের এই কীর্তি তাদের নিকট নতুন নয়। দুই বছর পূর্বে ২০১৮ সালে ইউটিউবে বেশী আয়কারীর তালিকায় রায়ান ছিল শীর্ষে। ২০১৭ সালেও ইউটিউবে সবচেয়ে বেশী আয় করে চমক দিয়েছিল। গত বছর ২০১৯ সালে রায়ানের এই খাতে আয় হয়েছে ২৬ মিলিয়ন ডলার। একই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালেও রায়ান সবাই টপকে শীর্ষে একজন ইউটিউব আয়কারী হিসাবে তৃতীয়বারের মত স্থান দখল করে বিশ^জুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।
এ বছর ইউটিউব থেকে ২৯.৫ মিলিয়ন ডলার আয় ছাড়াও আয় করেছে অন্য এক খাত থেকে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের খেলনা ও পোশাক এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার ব্র্যান্ডের পায়জামা থেকে রায়ানের আয় আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল নিকিলেডিওন তার সঙ্গে কয়েক মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। তবে চুক্তির অঙ্কটা অপ্রকাশিত রয়েছে। চ্যানেলটি নিজস্ব টিভি সিরিজ প্রচরের জন্য রায়ানকে মোটা অঙ্কে রাজি করিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ছোট বেলায় শিশুদের ভিডিও দেখে রায়ান মাকে বলে, কেন আমি ইউটিবকে নেই, যেখানে অন্যসব শিশুই আছে? এরপরই তিন বছর বয়সে ২০১৫ সালে রায়ানের মা-বাবা ইউটিউবে রায়ান টয়েস রিভিউ’ নামের একটি চ্যানেল খুলে দেন। পরে অবশ্য চ্যানেলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘রায়ানস ওয়ার্ড’। আজ পর্যন্ত এই চ্যানেলের সাবক্রইবার সংখ্যা চার কোটি অতিক্রম করেছে। ইউটিউবে সবাই তাকে প্রভাবশালী শিশু বলেই ডাকে।
তবে তার আসল নাম রায়ান ওয়ান। ইউটিউবে তার নামে গুয়ান বাদে কাজী জুড়ে দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত আয়ের কারণে তাকে নানা জামিলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমেরিকার ফেডারেল ট্রেড কমিশনের ধারণা, ইউটিউব কর্তৃপক্ষ রায়ানের আয়ের সঠিক তথ্য কর দেওয়ার ভয়ে দেয় না। কেউ কেউ রায়ানের খাবারের ভিডিওগুলোর খাদ্যমান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে এ বছর সবচেয়ে আয় করা ১০ ইউটিউবের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। রায়ানের পর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ২২ বছর বয়সী ইউটিউবার জিমি ডোনাল্ডসন ‘মি. বিস্ট’ নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এ বছর তিনি আয় করেছেন ২৪ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা ডুড পারফেক্টের আয় হচ্ছে ২৩ মিলিয়ন ডলার। গার্ডিয়ান ও ফোবার্স এর তথ্য অনুযায়ী বিশে^র সেরা ১০ জনের আয়ের তালিকা রীতিমত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
১. রায়ান কাজীঃ আয় ২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাবক্রাইবার সংখ্যা ৪১.৭ মিলিয়ন। ভিডিওর ভিউ ১২.২ বিলিয়ন।
২. মি. বিস্ট (জিমি ডোনাল্ডসন): আয় হচ্ছে ২৪ মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার ৪৭.৮ মিলিয়ন। ভিডি ভিউ ৩ বিলিয়ন।
৩. ডুড পারফেক্টঃ আয় ২৩ মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার ৫৭.৮ মিলিয়ন, ভিডিও ভিউ ৩ বিলিয়ন।
৪. রেছট অ্যান্ড লিংকঃ আয় ২০ মিলিয়ন ডলার, সাবক্রাইবার ৪১.৮ মিলিয়ন, ভিউওর ভিউ ১.৯ বিলিয়ন।
৫. মার্কি প্লায়ার (মার্ক ফিশব্যাক)ঃ আয় ১৯ দশমিক মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার ২৭.৮ মিলিয়ন, ভিডিওর ভিউ ৩.১ বিলিয়ন।
৬. গ্রিস্টন অসিমেন্টঃ আয় ১৯ মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার সংখ্যা ৩৩.৪ মিলিয়ন, ভিডিওর ভিউ ৩.৩ বিলিয়ন।
৭. নাসতিয়াঃ আয় হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার সংখ্যা হচ্ছে ১৯০.৬ মিলিয়ন। ভিডিওর ভিউ ৩৯ বিলিয়ন।
৮. বিনিপ্পি (স্টিভেন জন)ঃ আয় ১৭ মিরিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার ২৭.৪ মিলিয়ন। ভিডিওর ভিউ ৮.২ বিলিয়ন।
৯. ডেভিড ডব্রিকঃ আয় ১৬ মিলিয়ন ডলার। সাবক্রাইবার ১৮ মিলিয়ন। ভিডিওর ভিউ ২.৭ বিলিয়ন।
১০. জেফরি পিন ষ্টেইনগারঃ আয় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সাবক্রাইবার সংখ্যা ১৬.৯ মিলিয়ন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ভিডিওর ভিউ ৬০০ মিলিয়ন।
মানুষ যে অনেক কিচু করতে পারে তারই একটি উল্লিখিত বিরাট ঘটনা। যে ঘটনা থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম, আমাদের শিশুরা, আমাদের শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা অনেক অনেক বেশী উৎসাহ, অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারবে। আমরা বর্তমানে কোথায় রয়েছি। আমাদের দেশ কোথায় রয়েছে। আমাদের দেশের শিশুরা কিভাবে, কি ভাবছে! আমাদের সমাজ জীবনে আমাদের বড়দের ভাবনা কি হওয়া উচিত প্রভৃতি নানা প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের অগ্রসর হতে হবে। আমাদের আরও বেশী বেশী শিখতে হবে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অনেক অনেক দূর আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
‘রায়ান কাজী’ আমাদের কি শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদেরকে বেশ ভাবতে হবে। চিন্তা করতে হবে। আমাদের সমাজে, আমাদের মাঝেও রায়হান কাজী রয়েছে। বের হবে একদিন আমাদের দেশে ‘রায়হান কাজীর’ মত বিস্ময়কর শিশু। সেই সুন্দর দিনের অপেক্ষায়!
আমাদের করণীয় কিছু কথাঃ
১. উল্লিখিত বিস্ময়কর বালক বা ব্যক্তি সমন কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যে এমনি মেধা সম্পন্ন মানুষের জন্ম হচ্ছে না! হচ্ছে। পৃথিবীর সকল দেশে কিছু না কিছু মেধাবী মানুষের জন্ম হয়ে আসছে। মেধাবী মানুষের জন্য মেধাবী দেশ প্রয়োজন। উন্নত চিন্তা সম্পন্ন জাতি প্রয়োজন। স্বচ্ছ সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজন। উত্তম পরিবেশ অবশ্য থাকা উচিত। আমরা জাতি হিসাবে তখন অনেক অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে আছি। আবার অনেক দেশ থেকে নানা বিষয়ে এগিয়ে রয়েছি। আমাদের জনম খুব বেশী নয়। মাত্র ১৯৭১ সালে নতুন দেশ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। এই মাত্র ৫০ বছরের উৎসব পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। হয়তো এমন এক দিন আসবে আমাদের দেশে ও ‘রায়ান কাজী’ কত মেধাবী শিশুর জন্ম হবে। আমরা ধন্য হবো।
২. আমাদের মুক্ত চিন্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মুক্ত চিন্তা, স্বাধীন চিন্তা করার জন্য স্বাধীন পরিবেশ প্রয়োজন রয়েছে। সৎ মানুষের থেকে সৎ মানুষ বেরিয়ে আসে। উত্তম মানুষ উত্তম মানুষের পিতা হয়। তাই আমাদের সমাজ বিন্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সমাজকে তার গতিতে চলার রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা দিতে হবে। আইন ও আইনের প্রয়োগ সকলের জন্য সমানভাবে সুনিশ্চিত করতে হবে। তখনই মুক্ত বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্ম হওয়ার পরিবেশ তৈরী হবে।
৩. সততা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের উৎসেরও প্রয়োজন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে হালাল উপার্জনকে নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বলবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহে কি হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্য নিশ্চিত করেছে? তা নয়। তাদের ধর্ম বিশ্বাসে হয়তো এমনি নাই। কিন্তু আমরা যে ধর্ম বিশ্ববাসী, তাতে জীবনের জন্য হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্য গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তখন আল্লাহপাকের রহমত বর্ষিত হয়। মেধাবী মানুষের জন্ম মহান স্রষ্টার একান্তই সৃষ্টি। এই ধরনের কৃপার অধিকারী হওয়ার জন্য, আমাদের জন্য হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্য গ্রহণ জরুরী। যখন জাতি হিসাবে অতীতে আমাদের এই সকল নিশ্চিত ছিল, তখন আমাদের মাঝে এমনি মেধাবীর জন্ম নিয়মিত হয়েছে। বিশ^কে আমরা সেবা দিয়েছি। এমন এই সকল নীতি ও নৈতিকতা থেকে মুসলিম জাতি অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাই মেধার নাম আমাদের মধ্যে অনেক অনেক কম হচ্ছে। হয়তো একদিন আসবে আমাদের চিন্তা, চেতনা, চরিত্রের পরিবর্তন আসার পর আমাদের মাঝে এমনি মেধাবী শিশুর জন্ম হবে। সেই সুন্দর দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করবো।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।