বল বীর-
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্য গ্রন্থ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন আরশ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মমললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটিকা
দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির!
১৯২২ সালের ৬ই জানুয়ারি ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। উপরে কিছু অংশ লেখা হলো। ব্যাপক পাঠক প্রিয় ও জনপ্রিয় হয়ে উঠে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা। তখনকার ভারত বর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের মৌলিক ক্ষেত্র তৈরিতে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ এক অসাধারণ ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তাই তখনকার রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ নজরুলকে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসাবে আখ্যায়িত করে। কবি হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ই জ্যেষ্ঠ ১৩০৬, ২৪শে মে ১৮৯৯ সাল। জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গ, মহকুমা আসানসোল, চুরুলিয়া গ্রামে, থানা জামুরিয়া। ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতা কাজী ফকির আহমদ, মাতা জাহেদা খাতুন।
কবি নজরুল গবেষক আব্দুল মান্নান সৈয়দ ১৯৯৬ সালে ‘শ্রেষ্ঠ নজরুল’ গ্রন্থের ভুমিকায় নজরুল সম্পর্কে বলেন-
“আজ বিংশ শতাব্দীর এই সর্বশেষ দশকে এসে একে ঠিক অবিসংবাদিত সত্য বলে মনে হচ্ছে না যে, বাঙালির সমগ্র সংস্কৃতিকে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর একজনই সবচেয়ে ব্যাপক গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন- তিনি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাঙালি হিন্দু মুসলমানকে নজরুল ছাড়া আর কে এমনভাবে মেলাতে চেয়েছেন? বাঙালি মুসলমানদের চিরকালের উৎস ও কেন্দ্র নজরুল ছাড়া আর কে? শেষ পর্যন্ত মানতে বাধ্য হই আমরা, রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত প্রতিভার এই সব্যসাচীত্ব ও চূড়াবিহারী সাফল্য আর কারো অর্জনে নেই। কেমলমাত্র কবিতা ও সঙ্গীত দ্বারাই গত ৭৫ বছরের অধিক কাল ধরে তিনি অগনন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে আছেন। মাত্র ২৩ বছরের সৃষ্টিশীল জীবন তার ১৯১৯-৪২। কিন্তু তারই মধ্যে কতরূপে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন। একাধারে কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, শিশু সাহিত্যিক, গীতিকার, গীতালেখ্য ও গীতিনাট্য রচয়িতা, সুরকরা, স্বর লিপিকার, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ ,সঙ্গীত পরিচালক, সাংবাদিক, সম্পাদক, পত্রিকা পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক।”
কবি নজরুলের জীবন বড়ই কঠিন, কঠোর যুদ্ধের মধ্যে থেকে বেড়ে উঠা। ১৯০৮ সালে কবির পিতার মৃত্যুর পর তিনি শিশুকাল থেকে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে উঠেন। শিশুকাল থেকে আমরা কবি নজরুলকে জানি । তার কবিতা, ছড়ার সঙ্গে আমাদের বেড়ে উঠা। তাই আজও মনে পড়ে
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি লেবু? লাউ?
বেড়াল বাচ্চা? কুকুর ছানা? তাও?-
ডাইনী তুমি হে্যাঁৎকা পেটুক
খাও একা পাও যেথা যেটুক।
শিশুকালে মায়েদের মুখে মুখে বার বার বলতে শুনেছি কবি নজরুলের ছোটদের ছড়া, কবিতা। ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে মা যখন বলতেন
ভোর হলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠো রে
ঐ ডাকে
যুঁই শাখে
ফুল-খুকি ছোটো রে।
তখন কত মধুর শোনাতো। মুখে মুখে, শোনে শোনে ছড়াটি আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে। স্কুল জীবনে নজরুলের ছড়া, কবিতা ছাড়া কোন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো না। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে প্রতি বছর সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমরা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। আর সেই অনুষ্ঠানে নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘খুকি ও কাঠবেড়ালি’ লিচু-চোর, সংকল্প, প্রজাপতি, শিশু যাদুকর প্রভৃতি শিশু কিশোর কবিতা আমরা এক একজন আবৃত্তি করে পুরস্কার পেয়ে যেতাম। আমাদের মায়েরা গ্রামে, শহরে আজও নজরুলের সেই বিখ্যাত ‘ঘুম পাড়ানী গান’ গেয়ে শিশুদের দোলনায় দিয়ে ঘুম পাড়াতে চেষ্টা করে। কিনা সুন্দর সেই লাইনসমূহ :
ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি ঘুম দিয়ে যেয়ো
বাটা ভরে পান দেবো গাল বরে খেয়ো
ঘুম আয়রে, ঘুম আয় ঘুম।
ঘুম আয়রে, দুষ্টু খোকার ছুঁয়ে যা,
চোকের পাতা লজ্জাবতী লতার মত নুয়ে যায়।
ঘুম আয় রে, ঘুম আয় ঘুম।
আধুনিক বাংলা কবিতার দুশো বছরের ইতিহাসে কবি নজরুল ইসলাম অন্যতম প্রধান কবি। বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক ড. আনিসুজ্জামান বলেন
অবিসংবাদী রবি কাব্যচ্ছায়া থেকে তিনিই প্রথম বাংলা কবিতাকে মুক্ত করেন অন্য কয়েকটি ধারা প্রবাহিত করেন। নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেন ‘জাতীয়তাবাদী কাব্যনায়ক, বাংলা কবিতার প্রথম স্বার্থক সাম্যতন্দ্রের উদগাতা, নিপীড়িত ও শোষিত শ্রেণীর মানুষের বন্ধু, হিন্দু মুসলমান সৌভ্রাত্বের প্রতীক, আন্তর্জাতিক মিলনের পরিপোষক।
নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতা মুক্তি। এই কবিতা শ্রাবণ ১৩২৬ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায়’ প্রথম প্রকাশিত হয়। নজরুলের কবিতার যে মহত্বের সাক্ষ্য পাওয়া তাঁর সৃষ্টি তিনটি ধারার মধ্যে। এক. জাগরণের কবিতায় ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে দুই. সজ্জীবনী শোনিত প্রবাহিত তিন. ইমেজোচ্ছল কাব্যধারায়। নজরুল ছিলেন একাধারে বিশ ও ত্রিশ দশকের কবি, বিশের দশকের রাজা হয়ে তিনি ছিলেন কল্লোল যুগের অন্যতম নায়ক।
কবি নজরুলের আবির্ভাব রবীন্দ্র যুগে। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রধারা অনুসরণ করেন নাই। তিনি নতুন ধারার সাহিত্য রচনা করেন। তাঁর কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস নতুনত্বের সৃষ্টিতে উল্লাস বেয়ে বেড়িয়েছে। আপন ধারার অমর সৃষ্টি নজরুরের সাহিত্যকর্মে। তাই দেখা যায় কবি গুরুর ‘আজি হতে শতবর্ষ” কবিতা পড়ে কবি নজরুল ১৪০০ সাল নামে যে কবিতা লেখেন তাতে তার ব্যতিক্রমী সাহিত্য সৃষ্টির নতুনরূপ আমরা দেখতে পাই। কবি বলেন
আজি হতে শতবর্ষ আগে
যে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের
শত অনুরাগে,
আজি হতে শতবর্ষ আগে।
নজরুলের সাহিত্যে ইসলামী চেতনা, মুসলিম ঐতিহ্য ইতিহাস, আল্লাহ প্রতি অগাধ বিশ্বাস, সমাজ ও সংস্কৃতি অন্য রকম স্থান দখল করে রয়েছে। ইসলামী সঙ্গীত, গজল, গান বাংলা সাহিত্যে নজর অদ্বিতীয়। গানের রাজা নজরুল। চার হাজারের অধিক তিনি গান রচনা করেন। ইসলামী কবিতা, গান, গজল এর পাশাপাশি তিনি অন্য ধর্মের মূল বিষয় ও তার সাহিত্যে নিয়ে আসেন।
নজরুল মুসলিম জাতিকে তার হারানো জীবনের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে নতুন করে আবার কর্মময় জীবন শুরুর আহ্বান জানান। তাই কবিতার জাগরণের বার্তা আমাদের জীবনকে উজ্জীবিত করে। কবি বলেন-
জুলফিকার” আর “হায়দরী” হাঁক হেথা আজো হযরত আলীর
শাতিল আরব! শাতিল আরব!! জিন্দা রেখেছে তোমার তীর।
ললাটে তোমার ভাস্কর টিকা
বসরা-গুলের বহ্নিতে লিখা
ছোট গল্প, প্রবন্ধ সাথে সাথে অনুবাদ সাহিত্যে নজরুরের সাহিত্য কর্ম ভরপুর। আরবী, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ভাষায় নজরুল ছিলেন পারদর্শী। পবিত্র কোরআনের কাব্যিক রূপ নজরুল ছাড়া অন্য কেউ এত নিপুণভাবে দিতে পারেন নাই। পবিত্র কোরআনের ত্রিশ পারা তিনি কাব্যিক ভাষায় চমৎকারভাবে পাঠকের জন্য রুপ দেন।পবিত্র কোরআনের ছোট্ট সুরা ইখলাস নজরুলের কাব্যিক রূপ:
শুরু করিলাম পূত নামেতে আল্লার
শেষ নাই সীমা নাই যার করুণার!
বলো, আল্লাহ এক! প্রভু ইচ্ছাময়
নিষ্কাম নিরপেক্ষ, অন্য কেহ নয়।
করেন না কাহারেও তিনি যে জনন,
কাহারও ঔরস-জাত তিনি নন।
সমতল তাঁর
নাই কেহ আর।।
নজরুল সাহিত্যে গান, গজল ও ইসলামী সঙ্গীত এক বিশাল স্থান দখল করে আছে। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের চেয়ে এত বেশি গান আর কেহ রচনা করে যেতে পারেন নাই। এমন কি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে অনেক বেশি গানের স্রষ্টা কবি নজরুল ইসলাম। তাই তিনি বলেন-
“কাব্য ও সাহিত্য আমি কি দিয়েছি, জানি না, কিন্তু সঙ্গীতে যা দিয়েছি, সে সম্বন্ধে আজ কোন আলোচনা না হলেও ভবিষতে এ যখন আলোচনা হবে, ইতিহাস লেখা হবে, তখন আমার কথা সবাই স্বরণ করবে। এ বিশ্বাস আমার আছে”।
নজরুল আধুনিক বাংলা গান এর সঙ্গে সঙ্গে গজল, কোরাস, ইসলামী সঙ্গীত সৃষ্টিতে অতুলনীয়। আমাদের ঈদে, পর্বে, ধর্মীয় যে কোন অনুষ্ঠানে নজরুলের গান ছাড়া চলে না। আমাদের রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মহররমসহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নজরুলের গীত শুরু ও শেষে দর্শকের জন্য অতি আনন্দের। পবিত্র কোরআন, মহানবী (সাঃ) ,পবিত্র কাবা, পবিত্র মদীনা প্রভৃতি উল্লেখ করে নজরুলের গান আমাদের হৃদয়কে আপ্লুত করে। রমজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বেতার, টিভিগুলো সুরে সুরে বেজে উঠে-
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
শোন্্ আসমানী তাকিদ।
ধর্মের প্রতি নজরুলের বিশ্বাস, চিন্তা, ধারণা এত গভীর ছিল যা সমাজের উঁচু স্তরের দীনি ব্যক্তিদের থেকে থাকে। আল্লাহপাকের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও রসুলের প্রতি গভীর ভালবাসা তার কাব্যে, কবিতায়, গানে আমাদেরকে সব সময় স্মরণ করিয়ে দেয়। গভীর ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাস কবিকে সব সময় দৃঢ় শক্তির উপর দাঁড়িয়ে রেখেছিল। তাই তাঁর কবিতার সুর আমাদের মনকে করে দৃঢ়, শক্ত ও মজবুত।
রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করোনা বিচার।
বিচার চাহি না, তোমার দয়া চাহে এ গুনাহগার।
আমি জেনেশুনে জীবন ভরে
দোষ করেছি ঘরে পরে,
আশা নাই যে যাব তরে বিচার তোমার
বিচার যদি করবে কেন রহমান নাম নিলে।
ঐ নামের গুণেই তরে যাব, কেন এ জ্ঞান দিলে।
দ্বীন ভিখারী বলে আমি
ভিক্ষা যখন চাইব স্বামী
শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে পারবে না কো আর
কবি নজরুলের অপূর্ব সৃষ্টি ছোট গল্প, উপন্যাস ও বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রবন্ধসমূহ নজরুলকে তাঁর প্রকৃত স্বরূপে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়। তাঁর বিখ্যাত ছোট গল্প ব্যাথার দান, হেনা, রাক্ষুসী, শিউলিমালা, পদ্ম গোখরা প্রভৃতি পড়ে আমরা আনন্দ পাই। ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাস তখনকার সমাজের প্রকৃত চিত্র পাঠকে আজও মোহিত করে।
প্রবন্ধ রচনায় নজরুল ছিলেন বেশ সিদ্ধহস্ত নজরুলের বিখ্যাত প্রবন্ধসমূহ তখনকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতি চিত্রকে জাতির সামনে সুন্দরভাবে তোলে ধরে। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা চেয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জেলে খেটেছেন। নির্যাতিত হয়েছেন।
নজরুলের বিখ্যাত প্রবন্ধ “আমার লীগ কংগ্রেস’ প্রবন্ধে নজরুল বলেন-
“আমার কবিতা, আমার শক্তি নয়, আল্লাহর দেওয়া শক্তি আমি উপরক্ষ মাত্র! বীণার বেনুতে সুর বাজে কিন্তু বাজান যে-গুণী, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। আমার কবিতা যাঁরা পড়েছেন, তাঁরাই সাক্ষী: আমি মুসলিমকে সঙ্ঘবদ্ধ করার জন্য তাদের জড়ত্ব, আলস্য, কর্মবিমুখতা, ক্লৈব, অবিশ্বাস দুর করার জন্য আজীবন চেষ্টা করেছি। বাংলার মুসলমানকে শির উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য যে শির এক আল্লাহ ছাড়া কোন সম্রাটের কাছেও নত হয়নি- আল্লাহ যতটুকু শক্তি দিয়েছেন তাই দিয়ে বলেছি, লিখেছি ও নিজের জীবন দিয়েও তার সাধনা করেছি।”
কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। সব সময় আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বা বেসরকারিভাবে নজরুলকে রাষ্ট্রীয় কবির মর্যাদা দিয়ে আসছি। কিন্তু সেই দিন ২৯শে আগস্ট, কবির মৃত্যু দিবসে তাঁর সমাধিতে পুষ্প অর্পণের পর বিশিষ্ট কবি প্রেমিক, শিল্পী ফেরদৌসী রহমান বলেন কবি ও আজও রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় কবি হিসাবে স্বীকৃতির বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। এখনও সংসদ কর্তৃক আইন পাশের মাধ্যমে কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করা বাকী রয়েছে। শোনে খুবই অবাক হলাম। কেন বিষয়টি এমনিভাবে ঝুলে রয়েছে। সব সরকার তো কবিকে জাতীয় কবি হিসাবে মর্যাদা দিয়ে আসছেন। ১৯৭২ সালের ১৪শে মে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কবি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে জানুয়ারী মাসে শহীদ জিয়াউর রহমানের সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে একুশে পদক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর “আর্মি ক্রেস্ট” উপহার দেয়া হয়। ২৭ শে আগস্ট ১৯৭৬ , বাংলায় ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ সালে জিয়াউর রহমান নিজ হাতে কবিকে মসজিদ পাশে সমাহিত করেন। যা কবির শেষ ইচ্ছা পূরণের আকুলতা বাস্তবে রূপ পেল। কবির আল্লাহ প্রেম, ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং পরকালরমুখীর কামনায় তার কবিতায় যে সুর বেজে উঠে:
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর-আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।
কত পরহজেগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।”কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লাহর নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লাহর নাম জপতে চাই)।।
কবি আজ আমাদের মাঝে নাই। কিন্তু কবির আদর্শ, লেখা আমাদের মাঝে বিরাজমান। তাঁর কর্মময় জীবনের শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনের শিক্ষা। কবি নজরুলের জন্ম শত বার্ষিকীর চমৎকার স্লোগানটি আজ অনেক বেশি মনে পড়ে “বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং কাজী নজরুল ইসলাম এক ও অবিভাজ্য। এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হয় না। যত দিন যাচ্ছে এই উচ্চারণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন বলবার সময়, নজরুল বা নজরুল চর্চাকে ছোট করা, খাটো করা কিংবা সরিয়ে রাখা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অর্থ বাংলাদেশের অস্তিত্বের মৌল কাঠামোতে আঘাত করা। বাংলাদেশের বেচে থাকা, তার অহংকার এবং আত্মপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সংকুচিত করা, তাকে নিজ ভূমি থেকে উদ্বাস্তু করা।”
কবি নজরুল ইসলাম আমাদের আত্মার শক্তি। নজরুল চর্চা আজ আমাদের জাতীয় সত্তার বিকাশের জন্য অপরিহার্য। জাতি হিসাবে আমাদের বিকাশ, সমৃদ্ধি, সুখ, শান্তি সব কিছুই নজরুলের জন্য। যে কোন বিচারে নজরুল বিকল্প আমাদের নেই।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
It’s really highly appreciated.