Islami Banking

টেকসই অর্থনীতির জন্য ইসলামী ব্যাংকিং এর বহুল প্রচলন অপরিহার্য

‘বড় হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা’ শীর্ষক একটি সুন্দর নিবন্ধ দৈনিক প্রথম আলো ২৮ জুন’ ২১ সানাউল হক সাকিব লিখেছেন। প্রবন্ধের শেষে লেখক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক নিমিটেড (এসআইবিএল)-এর সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান এর বক্তব্যটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শফিকুর রহমান বলেছেন-

“আসলে ইসলামী ব্যাংকিং হলো কাগজে কলমে। বাস্তবে ইসলামী ব্যাংকিং মানা হয় না। মানার চেষ্টাও নেই। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে দেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বাজার বড় হচ্ছে। এছাড়া কার্যক্রম শুরুর প্রায় ৪০ বছর এসেও এখনো ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য কোন পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা ও আইন করা হয়নি। ইসলামী ব্যাংকের জন্য পৃথক আইন এখন সময়ের দাবী।”

কথাটির কিছু অংশের সত্যতা রয়েছে। পুরোপুরি সত্য নয়। তবে শেষের বাক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী ব্যাংকের জন্য এখন পৃথক আইন অত্যন্ত জরুরী। দেশে বর্তমানে দশটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। আর দুটি পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহ্ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অন্যান্য সুদি ব্যাংক-এর ইসলামী ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডো রয়েছে অনেক। আরো অনেক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডো চালু করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক-এ আবেদন করে রেখেছে।


দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত১৯৮৩ সালে মূলত বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বিশ্বে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত শুরু হয় ১৯৬৩ সালে মিসরের ‘মিটগামার লোকাল সেভিংস ব্যাংক’ এর মাধ্যমে। তারপর মালয়েশিয়ায় ‘মুসলিম লিগ্রিমস সেভিংস কর্পোরেশন’ নাম শরীয়াহ্ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় না হলেও পৃথিবীতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে প্রায় ছয় শত বছর পূর্বে।ইসলামী ফিক্বহের কিতাবাদি থেকে জানা যায় সাহাবায়ে কেরামের আমলে ইসলামী ব্যাংকিং-এর কিছু কিছু সেবার প্রচলন ছিল; যদিও এর ধরন ছিল কিছুটা ভিন্নতর। এ ক্ষেত্রে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম রা. ও ইবনে আব্বাস রা. এর নাম হাদীস ও ফিক্বহের কিতাবাদিতে পাওয়া যায়।
তবে ইসলামী ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বড় নীতি হলো, সুদমুক্ত লেনদেন তথা বিনা সুদে আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগ প্রদান। ইসলাম সুদ সম্পর্কে কি বলেছে সে সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা দেয়া যেতে পারে।


সুদ সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্যঃ
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন পাকের মাধ্যমে আজ থেকে ১৪০০ শত বছর পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে সুষ্পষ্ট নিদের্শনা রসুলে পাক সাল্লালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারা ২৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-

“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং দান সদকাকে বাড়ীয়ে দেন। আর কোন অকৃতজ্ঞ পাপিষ্ঠকে ভালোবাসেন না।”


সূরা বাকারায় ২৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আবারও বলেছেন-

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর সুদেও যে বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও; যদি তোমরা মুমিন হও।”

সুদ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসের বক্তব্যঃ
পবিত্র কোরআনের মাত্র দুটি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূরায় সুদ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র হাদীসেও সুদের অপকারিতা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। সিহাহ্ সিত্তাসহ হাদীসের প্রসিদ্ধ-অপ্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলোতে সুদের বিরুদ্ধে শতাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

“হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সুদ দাতা, সুদ গ্রহীতা, সুদের চুক্তিপত্রের লেখক ও সাক্ষী সকলের উপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, এরা সকলে সমান অপরাধী।” (সহীহ বুখারী, হাসিদ নং ৫৯৬২)


অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

“হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সুদ দাতা ও সুদ গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিসম্পাত করেছেন।” (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমেদ বা হাকী)

সুদের বিকল্প ব্যবসাঃ
ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সুদ ছাড়া কিভাবে অর্থনীতি চলবে তারও নির্দেশনা দিয়েছে। সূরা বাকারায় ২৭৫নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম ঘোষণা করে ব্যবসাকে হালাল ও বিকল্প উপায় বলে পথ নির্দেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সুদমুক্ত হালাল উপার্জনের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা হারাম ও সব ধরনের অবৈধ উপায়ে অর্জিত উপার্জন থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামী ব্যাংকিং এর সৃষ্টিঃ
মূলত কোরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস- এ সমুদয়ের আলোকে ইসলামী ব্যাংকিং বা ফাইন্যাসিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যার উৎস মূলে রয়েছে কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এর বিধিবদ্ধ বিধানসমূহ।সূদী ব্যাংকিং বা ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকিং বা ফাইন্যান্সিং-এ টাকার বিনিময়ে টাকার লেনদেন হয় না; বরং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শরীয়াহ্ অনুমোদিত মালের বিনিময়ে মুনাফায় অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। যাতে উক্ত লেনদেনে সুদ বা অবৈধ উপায়ের সংমিশ্রণ না ঘটে এ জন্য ইসলামি আইন শাস্ত্রবিদগণ কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস এর আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করেছেন।


ইসলামী ব্যাংকিং এর তুমুল জনপ্রিয়তাঃ
১৯৮৩ সালে প্রথম ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে ইসলামি ব্যাংকিং এর যাত্রা শুরু হয়। নতুন ব্যাংক। নতুন নিয়ম। কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই নতুন। শুরুতে সকলে আশংকা করছিলেন এ ধরনের ব্যাংক বাংলাদেশে বেশি দিন চলবে না, কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। খুব অল্প দিনেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে দারুন আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম হলো ইসলামী ব্যাংক। জনপ্রিয়তায় ক্রমেই ছাড়িয়ে যেতে থাকলো কনভেশনাল ব্যাংকগুলোকে। একের পর এক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকলো একাধিক ইসলামী ব্যাংক। আজ ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। আরও ইসলামী আদর্শে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোক্তাগণ আগ্রহী। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর অনুমোদন পাওয়ার ব্যপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাগণ।

এ দেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন। ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী। পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য এদেশের জনগণ উম্মুখ হয়ে আছে। তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ইসলামীব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ইসলামী ব্যাংক গুলো তাদের প্রোডাক্টগুলোকে সব শ্রেণীরমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ইসলামী ব্যাংক রয়েছে ১০টি। মোট শাখা রয়েছে ১ হাজার ৭শত ৫৫টি। জনবল রয়েছে ৪৩ হাজার ২ শত ৮৮জন। মোট আমানত রয়েছে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। বর্তমানে বিনিয়োগ রয়েছে ৩ লক্ষ ২২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৭ শতাংশ ইসলামী ব্যাংক গুলো সংরক্ষণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী মার্চ ২১ অনুযায়ী দেশের ব্যাংক সমূহের মোট আমানত ছিল ১২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক গুলোর রয়েছে ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। বিগত বছর ২০২০ সালে ডিসেম্বর ব্যাংক খাতে ইসলামী ব্যাংক গুলোর অংশ ছিল ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে আইবিবিএলের আমানত ১ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকা।

বিগত মার্চ ২১ এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গুলের অংশ ছিল ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রবাসী আয়ের ৩৩ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংক গুলোর মাধ্যমে। সব চেয়ে বেশী আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) মাধ্যমে।

বর্তমান দেশে মোট ব্যাংক শাখা রয়েছে ১০ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর এর শাখা রয়েছে ১ হাজার ৭৫৫টি। ইসলামী ব্যাংক গুলোর শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখার মাধ্যমে এই শরীয়াহ্ ভিত্তিক সেবা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটিএম ও সিআরএমের মাধ্যমে টাকা জমা ও উত্তোলনের সুবিধা তো রয়েছেই। এ ছাড়াও নন-ব্যাংকিং দুটি পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহ্ ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। যারা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে উজ্জল ভূমিকা রেখে চলেছে।

কতটুকু শরীয়াহ্ মোতাবেক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে?
এটা ঠিক যে,বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকসমূহ কতটুকু শরীয়াহ্ মেনে ব্যবসা করছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই প্রশ্ন উত্থাপনের আগে এই সত্যেরও মুখোমুখী হতে হবে যে, এই দেশে এত বড় ইসলামী ব্যাংকিং বাজার এত দ্রুত সম্প্রসারণের পরও ইসলামী ধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে কোন শিক্ষা ব্যবস্থা বাঅবকাঠামো গড়ে উঠেনি। পৃথক সিলেবাসে এবং পৃথক কারিকুলামে কোন স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ নিয়ে এখন অনেকে অনেক কথা বলছেন। এই শূণ্যতার কারণে ইসলামি শিক্ষার জ্ঞান সমৃদ্ধ কোন দক্ষ কর্মী দল গড়ে উঠেনি। অধিকাংশ সুদী ব্যাংক এর অফিসারদেরকে নিয়োগ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে। তারপরও ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ্ বোর্ড বা শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির তত্ববধানে মুফতি বা ফকীহ্ মুরাক্বিবগণ ব্যাংক এর কর্মীদেরকে শরীয়াহ্ ভিত্তিক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে ইসলামী ব্যাংকিং এ দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে মুরাক্বিব বা শরীয়াহ্ পরিদর্শকদের সংখ্যাও বেশ অপ্রতুল। এধরনের আরো অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই দেশে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা ধীরে ধীরে বেশ বড় হচ্ছে। বিনিয়োগও বাড়ছে। বাড়ছে দেশী- বিদেশী আয়ও ।


কিভাবে ইসলামী ব্যাংক সমূহ চলেঃ
বাংলাদেশ ব্যাংক এর একটি সার্কুলার মাধ্যমে দেশে ইসলামী ব্যাংক সমূহ চলেছে। কোন নির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা নেই। এখনো প্রক্রিয়াধীন। হয়তো খুব শীগগিরই ইসলামি ব্যাংকিং আইন পবিত্র জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাশ হয়ে আসবে। সেই দিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। তবে বর্তমানে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইসলামী ব্যাংক সমূহের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ্ বোর্ড কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হচ্ছে।


কিভাবে সুদের পরিবর্তে ইসলামী ব্যাংক লাভ দেয়ঃ
অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে যে, প্রচলিত ব্যাংকের মত ইসলামী ব্যাংক সমূহ সুদহার নির্ধারণ করে। প্রকৃত অর্থে সুদ নয়, ইসলামী ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানতের উপর মুনাফা দেয়। সে ক্ষেত্রে বিগত বছরের লাভ-ক্ষতির বিভিন্ন খতিয়ান পর্যালোচনা করে একটি প্রাক্কলিত মুনাফার হার ঘোষণা করে। বছর শেষে প্রাক্কলিত সে মুনাফা চুড়ান্ত হয়। চুড়ান্ত মুনাফার পর প্রাক্কলিত মুনাফার হারের চেয়ে কম-বেশি হলে তা পরবর্তী সময়ে গ্রাাহকের হিসাবে সমন্বয় করা হয়ে থাকে। ব্যবসায় মুনাফা কম-বেশী হতে পারে। তাই ইসলামী ধারার ব্যাংক সমূহের বছর শেষে মুনাফাও নির্দিষ্ট থাকে না। কিন্তু প্রচলিত ব্যাংকসমূহ নির্ধারিত হারে সুদ দিয়ে থাকে। এটা প্রচলিত ও ইসলামী -এই দুই ধারার বাংকিংয়ের মধ্যে প্রধানতম পার্থক্য।


ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রাতিষ্ঠানিক মূলনীতি হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়ের ভিত্তিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা। বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংক সমূহ সেই মূলনীতি মেনেই ব্যাংকিংয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শরিয়াহ্ কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া ইসলামি ব্যাংকসমূহ কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। দেশের প্রতিটি ইসলামী ব্যাংক এর একটি করে স্বাধীন, সক্রিয় শরীয়াহ্ কাউন্সিল রয়েছে। তাই শুধু নামে নয়, শরীয়াহ্ ভিত্তিক নীতিমালা ‘পরিপালনের’ মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংক সমূহ সুদ ভিত্তিক ব্যাংক সমূহের মধ্যে পার্থক্য বজায় রেখেছে। তবে ‘শরীয়াহ্ পরিপালন’ এর গুণগত মান আরো বহুলাংশে বাড়াতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।


সুকুক বা বন্ড চালুঃ
সম্প্রতি বাংলাদেশে সুকুক বন্ড চালু হয়েছে। সুকুক হচ্ছে এক ধরনের ইসলামী ফাইন্যান্সিয়াল সার্টিফিকেট। প্রচলিত সুদ ভিত্তিক বন্ডের বিকল্প হিসেবে শরীয়াহ্ নির্দেশিত বিধি প্রতিপালনের শর্তে ইসলামী সুকুক বন্ড পূজিঁ বাজারে লেনদেন হয়। সুকুকের বিক্রয় লদ্ধ লভ্যাংশ শরীয়াহ্ অনুমোদিত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। যেহেতু ইসলামী ব্যাংক গুলো প্রচলিত সুদ ভিত্তিক বন্ড ক্রয় বিক্রয় করতে পারে না। এতে তারল্য সংগ্রহে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে হয়। এজন্য সুকুক বা বন্ডের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারে। তাছাড়া সুকুকের ইস্যুয়ার ও ক্রেতার মধ্যে মধ্যস্থাতাকারী হিসেবে কাজ করে ইসলামী ব্যাংক গুলো কমিশনও লাভ করতে পারে।


ইসলামি বাংকিং সম্পর্কে সমালোচনাঃ
প্রতিটি কাজের সমালোচনা হতে পারে। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। এখনও সুদ ভিত্তিক ব্যাংক বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে। এখনও অধিকাংশ ব্যাংক সুদের ভিত্তিতে চলেছে। সারা বিশ্বের প্রায় সব ব্যাংক সুদ ভিত্তিক। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকও সুদ ভিত্তিক নীতিমালায় চলছে।
অনেকে বলছেন, “বাংলাদেশ মুসলিম দেশ, তাই এখানে ইসলামি ব্যাংকিং এর চাহিদা তুঙ্গে। এজন্য অনেক ব্যাংক সুদ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ছেড়ে পুরো শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক হচ্ছে। অনেকে এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে।” কেউ কেউ বলছেন, “বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং নামে যে ব্যবসা হচ্ছে তার পুরোটাই একটা কৌশল মাত্র। তাদের কাছে প্রচলিত ব্যাংক থেকে ভিন্ন কিছু নেই। আবার ইসলামি ব্যাংক হলে সিআরআর ও এসএলআরের সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। ইসলামি ব্যাংক ব্যবসার জন্য আলাদা কোন উদ্যোগের প্রয়োজন হয় না।” কথা গুলো বলেছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব। সূত্র-প্রথম আলো ২৮জুন’২১।


বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক সমূহ শুধু মাত্র মুরাবাহ পদ্ধতিতে ব্যবসা করে। মোশারাকা পদ্ধতি অর্থাৎ লাভ ক্ষতির ভিত্তিতে অধিকাংশ ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা করে না। কিন্তু ইসলাম লাভ-ক্ষতির চিরায়ত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মেনেই ব্যবসা করতে বলেছে। কিন্তু অনাকাংখিত সত্য হলো আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংক সমূহ শুধু লাভের চিন্তুা করে বিনিয়োগ করছে- এধরনের অভিযোগ অনেক বোদ্ধা ব্যাংকার বা অর্থনীতিবিদগণের। এর সত্যতা কিছুটা হলেও রয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। ইসলামী ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে হালাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি লাভের পথকে সহজ করা। শুধু দুনিয়াতে মুক্তি, দুনিয়াতে শুধু লাভ করতে হবে- এমন ধারণা ইসলামী অর্থনীতিতে নেই। লাভ-ক্ষতি আছে বলে ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। এ বার্তাটি সবার আগে বুঝতে হবে এবং মানতে হবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাগণকে। তারাই আগ্রাসী মুনাফার পেছনে ছুটতে বাধ্য করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে। প্রতিযোগিতা থাকতে হবে, মুনাফা করতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই; তবে ইসলামী শরীয়াহ্কে ক্ষুন্ন করে নয়। ইসলামী ব্যাংক সমূহের উদ্যোক্তাগণের মানসিকতা সুদী ব্যাংক এর উদ্যোক্তাদের মতো আগ্রাসী হবে না। তাদের ব্যক্তি জীবনে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হতে হবে। ব্যাংক এ এবং সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তারা শুধু নিছক ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাই নন, তাঁরা দেশে বলিষ্ঠ ও টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় একেকজন বীরতুল্য সৈনিকও বটে।


কাজেই অবধারিতভাবেই ইসলামী ব্যাংক সমূহের উদ্যোক্তাগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু দুনিয়ার অর্থ সম্পদের মালিক না হয়ে আখেরাতের মুক্তির চিন্তা করতে হবে। আখেরাতে যাবে আপনার আমার নেক আমল, ভালো কাজের ফলাফল, সাধারণ হত দরিদ্র মানুষকে সাবলম্বী করার ফলাফল, দুস্থ অসহায় মানুষের সেবার ফলাফল। তাই ইসলামী ব্যাংক সমূহকে অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গে মানবতার কল্যাণের দিকে খুব বেশি নজর দিতে হবে। মানবতার কল্যাণই ইসলামী ব্যাংকের মূল লক্ষ্য। যাকে ‘মাকাসিদে শরীয়াহ্’ বলা হয়। সেই লক্ষ্য থেকে কোন ক্রমেই ইসলামী ব্যাংক সমূহ দূরে সরে যেতে পারে না। যথার্থ আইনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক সমহূকে শরীয়াহ্ পালনে বাধ্য সময়ের অপরিহার্য দাবী।


পৃথক আইন ও নীতিমালা জরুরীঃ
এ কথা আগেই উল্লেখ করেছি যে, দেশে ইসলামী ব্যাংক পরিলানার কোন আইন নেই এবং এজন্য পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালাও নেই- দীর্ঘ দিন ধরে ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের জন্য রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক সমূহ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রনীত ২০০৯ সালের ইসলামি ব্যাংকিং গাইড লাইনের মাধ্যমে। পৃথক আইন না থাকার কারণে ব্যাংকগুলো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পার্শবর্তী দেশ থাইল্যান্ডে ইসলামী ব্যাংক চালু হয়েছে ২০০৩ সালে। অথচ সেখানে ইসলামী ব্যাংকিং আইন হয়েছে ২০০১ সালে। মালয়েশিয়ায় তাই হয়েছে। তাই দেশের বিশাল এই খাতকে নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য জাতীয় সংসদ কর্তৃক পৃথক আইন প্রণয়ন খুবই জরুরী। তা না হলে সমালোচনার শেষ হবে না। অনিয়ম ও দূর হবে না। ইসলামী ব্যাংকিং এর মূল প্রাণ ‘ইসলামী শরীয়াহ্ও’ ঠিক মত মানা হবে না। তখন দুনিয়াও আখেরাতের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে আল্লাহ পাকের নিকট কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।


সেন্ট্রাল শরিয়াহ্ বোর্ডঃ
ইসলামি ব্যাংক সমূহ পরিচালনার জন্য প্রতিটি ইসলামী ব্যাংক ও অ- ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা শরীয়াহ্ সুপারভাইজারী কমিটি রয়েছে। দেশের বিশিষ্ঠ ইসলামি চিন্তুাবিদ, আলেম, ইসলামী শিক্ষাবিদদের নিয়ে এই বোর্ড গঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে একটি শরীয়াহ্ বোর্ড রয়েছে। যাকে ‘সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামী ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ নামে সবাই চেনে। বর্তমানে এটি একটি ব্যয় বহুল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক ব্যাংক থেকে ১০/লাখ ৭ লাখ ও তুলনামূলক অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক সাড়ে ৩ লক্ষর টাকা চাঁদা গ্রহণ করে থাকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের দাবী আরো বেশি। এতে গ্রাহকদের লাভের পরিমাণ কমে যাবে। ব্যাংক এর ব্যয় বেড়ে যাবে। সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড এর কর্ম পরিধি আরো ছোট করা উচিত। খরচ কমানো উচিত। কোন ব্যাংক এবং লিজিং কোম্পানিকে কোন ক্রমেই এক লক্ষেরও অধিক বার্ষিক চাঁদা ধার্য করা উচিত নয়। তবে ব্যাংক যেহেতু বড়, তাদের জন্য কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে বর্তমানে যে হারে চাঁদা নেয়া হয় তা ঠিক নয়। খুব বেশি নেয়া হচ্ছে।


তাছাড়া সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড এর ইসলামী ব্যাংক সমূহে তদরকী বৃদ্ধি করা উচিত। ইসলামী শরীয়াহ্পরিপালন সঠিকবাবে হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত দেখা উচিত। তাছাড়া শুধু ইসলামী ব্যাংকিং করলে চলবে না। ইসলামের ফরজ, ওয়াজিব বিধান পালনে সক্রিয় করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সুদ দেয়া নেয়া হারাম। কিন্তু নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত আদায় ফরজ। তা পালনে সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডকে অনেক বেশী তদারকী করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলোতে নিয়মিত জামাআতে সালাত আদায় যে ব্যাধ্যতামূলক কাজ তা মনে করিয়ে দিয়ে ‘দাওয়াতে দ্বীনের দায়িতে’¡ সকলকে সক্রিয় করতে হবে।


সবার জন্য ইসলামী ব্যাংকিংঃ
দেশের ইসলামী ব্যাংক গুলোতে অমুসলিম কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। আর ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সব মানুষের বিশ্বসের কারণে এই সেবার দ্রæত বিকাশ ঘটেছে। ফলে প্রচলিত ধারার ব্যাংক গুলোর কেউ কেউ ইসলামী হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগ যে সব ব্যাংক পায়নি সে গুলো শাখা ও উইন্ডো খোলার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে, পাকিস্তনে ইসলামী ব্যাংক শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক গুলোর গ্রাহক ও অন্যান্য দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর মতো নয়। যেমন- বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাহকই মুসলিম অথচ মালয়েশিয়ায় ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই অমুসলিম। সেটিও মুসলিম প্রধান দেশ।
প্রচলিত ব্যাংকে যেমন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সেবা দিতে পারে তেমনি ইসলামী ধারার ব্যাংকও সবার জন্য উম্মুক্ত। অর্থাৎ আপনি মুসলিম নন, তাই ইসলামি ব্যাংক আপনার জন্য নয় – এটা ভাবার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশের সব ধর্মের নাগরিকগণই প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকের সেবা নিতে পারেন।


বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক এর এর সংখ্যা ১০টি। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর পর্যায়ক্রমে পতিষ্ঠিত হয়- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্ষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ষ্টান্ডার্ড ব্যাংক, গেøাবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।


অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, শরীয়াহ্ ভিত্তিক কোম্পানী রয়েছে- ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিঃ (আইএফআইএল) এবং হজ্জ্ব ফাইন্যান্স লিমিটেড। মাত্র দুইটি। ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিঃ বাংলাদেশের প্রথম শরীয়াহ্ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। যা ২০০১ সালে এদেশে কাজ শুরু করে। সুদ বিহীন ইসলামী শরীয়াহ্ ভিত্তিক অ-আর্থিক প্রতিস্ঠানের স্বপ্ন দেখে আমি এই প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আল্লাহ্ পাক এই উদ্যোগকে কবুল করুন-এই কামনা করি।


বাংলাদেশ ব্যাংক এর শরিয়াহ্ ভিত্তিক পরিদর্শনঃ
ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্যন্যা কার্যক্রম যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিরীক্ষকগণ পরিদর্শন করে থাকে, কিন্তু শরীয়াহ্ ভিত্তিক পরিদর্শন ব্যবস্থা নেই। এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ সে ধরনের আমেল মুফতি বা ইসলামী স্কলারগণের সমন্বয়ে পরিদর্শক দলও গড়ে তুলেনি। এটি খুবই প্রয়োজন। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা তদারকীর জন্য দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রায় সব ব্যাংক-এ রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সম্ভব এর ব্যাতিক্রম। দেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ও আলাদা ভাবে ইসলামী ব্যাংক সমূহের জন্য দক্ষ জন শক্তি তৈরীর প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠিনি। ইদানিং ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি দেশে প্রথমবারের মত ইন্সটিটিউড অব ইসলামিক ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি একটি সময়োপযোগী ও অসাধারণ উদ্যোগ বললে অত্যুক্তি হবে না। এখন এটি যত দ্রæত বাস্তবায়ি হবে ততই দেশ ও জাতি উপকৃত হবে, টেকসই অর্থনীতির জন্য বড় নিয়ামকের ভূমিকা পালনের অগ্রসর ভূমিকা রাখতে পারবে ইনশাআল্লাহ্।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments