Foreign investment in Bangladesh

বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহ বেশী

দেশে বিনিয়োগের বড় খরা চলছে। এই অবস্থার কবে উন্নতি হবে তা নিশ্চিত বলা যায় না। তবে ধারণা করা হচ্ছে সময় লাগবে। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আসতে আরও একটু সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। বড় সঙ্কট আস্থার। দ্বিতীয় সঙ্কট ব্যাংকিং খাতের। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে জ্বালানী ও বিদ্যুতের ঘাটতি।
কিছুদিন পূর্বে দেশী বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ঢাকায় বেশ ভালো রকমের উন্নতমানের তথা উপস্থাপনা বেশ চমৎকার এমনি এক বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেলো। কিছু কিছু বিনিয়োগ হয়েছে। বেশ কিছু বিনিয়োগের প্রস্তাবনা ও এসেছে। তবে অনেক প্রশ্ন। অনেক সমাধানের আশার বাণী শোনানো হয়েছে। ধীরে ধীরে হয়তো বরফ গলবে মনে হয়।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান : কর্মসংস্থানের প্রধান চালিকা শক্তি বিনিয়োগ। যত বেশি বিনিয়োগ, তত বেশি উৎপাদন এবং সেই অনুপাতে তৈরি হয় কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিসংখ্যান বলছে, কর্মসংস্থান তৈরিতে বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে দেশীয় বিনিয়োগের অবদান বেশি।
যদিও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সুযোগ-সুবিধা পান, এই অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আছে হতাশা। তা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগে কর্মসংস্থান কম হলেও নতুন প্রযুক্তি জ্ঞান, শোভন কর্মসংস্থান, মানসম্মত পণ্য তৈরিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের বিনিয়োগে প্রতিযোগিতাও বৃদ্ধি পায়।
বিডার বিনিয়োগবিষয়ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯-১০ সালে প্রায় ৩৯৩ কোটি মার্কিন ডলারের দেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪১৮ জনের। একই বছর ৮৯ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয় ৩৯ হাজার ২৪৫ জনের। আর ২০২০-২১ সালে ৬৬৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের দেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ১০০ জনের। তার বিপরীতে প্রায় ১০৬ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয় ২০ হাজার ৬৮৬ জনের। ২০০৯-১০ থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত মোট ৫৭৫ কোটি ডলারের স্থানীয় ১২ বছরে ১০ হাজার ৫৭৫ বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২৮ ৫ হাজার ৯৪৩ লাখ ১৮ হাজার জনের। একই সময় কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৫ লাখ ৪৬ হাজার জনের।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি বিনিয়োগে এ দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে একজনের কর্মসংস্থানে ৯৩ হাজার ৪২৮ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। তার বিপরীতে একজনের কর্মসংস্থান তৈরিতে স্থানীয় বিনিয়োগ লাগে ৩৭ হাজার ৫২৮ ডলার। অর্থাৎ কর্মসংস্থানে দেশি বিনিয়োগের তুলনায় একজনের বিদেশি বিনিয়োগ লাগে আড়াই গুণ বেশি।
বিদেশি বিনিয়োগে কম কর্মসংস্থান হলেও বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগে দেশীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ে। রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়। তাই দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগ কখনো একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং পরিপূরক।

বিদেশি বিনিয়োগের দুরবস্থা : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) দেশে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ ৫৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশের বেশি কমেছে।
স্থানীয় বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা হয়, তা সাধারণত দেশেই থাকে এবং পুনর্বিনিয়োগ হয়। আর বিদেশি কোম্পানিগুলো। নিজ দেশে ফেরত নিয়ে মুনাফার একটি বড় অংশ সেই যায়। কারণে স্থানীয় বিনিয়োগে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়, বিদেশি বিনিয়োগে ততটা হয় না।
সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিডার বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে আইএফসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো হচ্ছে বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার।

দেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈষম্য : দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার বেশি, যদিও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ আনতে পারেন। সেই সঙ্গে তাঁরা মুনাফা অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারেন; বাংলাদেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা সাধারণত অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন না। করতে চাইলে নানা সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সেই কারণে বিদেশিদের তুলনায় দেশি উদ্যোক্তাদের বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
স¤প্রতি বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধানে এ ধরনের উদ্যোগ কম।
বর্তমানে দেশে সামগ্রিকভাবে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা বিনিয়োগের জন্য অনুক‚ল নয় সম্প্রতি বিডা এত ঘটা করে বিনিয়োগ সম্মেলন করল, কিন্তু সেই সম্মেলনের পরপরই শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। এমনকি নতুন দামে গ্যাস দেওয়া হবে বলে অনেক দিন ধরে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। স্থানীয় হোক বা বিদেশি হোক, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতি ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা খুবই জরুরি। দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে সমস্যা রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা।
দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিবেশ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। এ পরিস্থিতিতে দেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা না পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আস্থা পাবেন না। বিদ্যমান এই অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের রূপরেখা প্রয়োজন। সংস্কার কবে নাগাদ করা হচ্ছে, এরপর যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী ব্যবস্থা নেবেন- এসব বিষয় বোঝার জন্য বিনিয়োগকারীরা মুখিয়ে আছেন।

বিনিয়োগে বড় বাধা : সকলে আমরা চাই দেশে বিপুল সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক। বিনিয়োগ বাড়–ক। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি হোক। কিন্তু বাধা অনেক।

১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানী : দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৭০০ মেঘাওয়াট। উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১৩০০ মেঘাওয়াট থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি রয়েছে ২০০ মেগাওয়াট। আরও বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে বিদ্যুতের ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে গ্যাসের বর্তমান চাহিদা রয়েছে ৪১০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি রয়েছে ১১০ কোটি ঘনফুট। দীর্ঘদিন ধরে দেশে গ্যাস উৎপাদনের জন্য কুপ খনন বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিগত সরকার আমলে হয়ে পড়ছিল একটি আমদানীকারক সংস্থা বা এজেন্ট। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ ছিল গ্যাস আবিষ্কার উত্তোলন ও বিতরণ। এই কাজটি না করে প্রতিষ্ঠানটি দুর্বল ও অকেজো হয়ে পড়েছে। সমুদ্রে আমাদের গ্যাসের সন্ধানের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিডার বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে আইএফসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো হচ্ছে বিদ্যুতের সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য ও উচ্চ করহার।

দেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈষম্য : দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার বেশি, যদিও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ আনতে পারেন। সেই সঙ্গে তাঁরা মুনাফা অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারেন; বাংলাদেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা সাধারণত অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন না। করতে চাইলে নানা সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সেই কারণে বিদেশিদের তুলনায় দেশি উদ্যোক্তাদের বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
স¤প্রতি বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধানে এ ধরনের উদ্যোগ কম।
বর্তমানে দেশে সামগ্রিকভাবে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা বিনিয়োগের জন্য অনুক‚ল নয় স¤প্রতি বিডা এত ঘটা করে বিনিয়োগ সম্মেলন করল, কিন্তু সেই সম্মেলনের পরপরই শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। এমনকি নতুন দামে গ্যাস দেওয়া হবে বলে অনেক দিন ধরে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। স্থানীয় হোক বা বিদেশি হোক—বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতি ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা খুবই জরুরি। দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে সমস্যা রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা।
দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিবেশ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। এ পরিস্থিতিতে দেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা না পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আস্থা পাবেন না। বিদ্যমান এই অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের রূপরেখা প্রয়োজন। সংস্কার কবে নাগাদ করা হচ্ছে, এরপর যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কী ব্যবস্থা নেবেন- এসব বিষয় বোঝার জন্য বিনিয়োগকারীরা মুখিয়ে আছেন।

২) অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত : বিনিয়োগের জন্য আর্থিক বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো অনেকটা দুর্বল ভ‚মিকায় রয়েছে বিগত সরকারের আমলে পরিকল্পিতভাবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিসহ ১০টি ব্যাংকে লুটতরাজের মাধ্যমে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। এস আলম, বেক্সিমকো, হলমার্কসহ বহু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দেশের অর্থ পাচার করে এস আলম ও সামিট পাওয়ার সিঙ্গাপুরে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। অর্থ লুটের ফলে ব্যাংকসমূহ সত্যিকার বিনিয়োগকারীকে ঋণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই দেশী বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। দেশী বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে বিদেশী বিনিয়োগ ও বেশ হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসেনি। দুর্বল আর্থিক খাত দিয়ে কোন দেশে বিনিয়োগ হয় না। যার ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় না। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আসল স্থানে ফিরে আনতে হবে।

৩. দুর্নীতি ও অনিয়ম : বিগত স্বৈরশাসক ১৬ বছর ধরে এক নাগাড়ে দেশকে দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। দুর্নীতি মানে বাংলাদেশ। অনিয়ম মানে বাংলাদেশ। এই চিত্র গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য ছাড়া সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা যায় না। তাই আমাদের দেশে ব্যবসার খরচ অনেক বেশি হয়ে পড়ে। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অনেক কারণের মধ্যে দুর্নীতি, ঘুষ অন্যতম।
দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে। এই জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ কর্তা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও দেশপ্রেমিক হবে। মাথা ঠিক না হরে দেহের অন্যান্য অঙ্গ কোনক্রমে ভাল হতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্নীতি হ্রাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। দুর্নীতি ও নিয়মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। দ্রুত বিচার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বত্র সাধনের শাসন কায়েম করতে হবে। আইনকে সকলের জন্য সমান ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।

৪. উচ্চ কর হার ও সুদের আধিক্য : বাংলাদেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কর হার অনেক বেশি। প্রায় ৪৫ শতাংশ কর আমাদের দিতে হয়। অধিক কর প্রদানের কারণে বিনিয়োগে অর্থ আর থাকে না। কর অধিক হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হবে। কর, ভ্যাটসহ নানা করের জালে ব্যবসায়ীগণ বন্দি। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি করের আওতার বাইরে রয়েছে। যে কর দেয় তাকে আরও বেশি করে কর আদায়ের জন্য নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির ফলে পণ্য উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে ভ্যাট দিতে হয়। তাও ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। অধিক ভ্যাট আরোপে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
সুদের কাহিনী আর কি বলবো! বর্তমানের ব্যাংকে সুদের হার ১৮ শতাংশে উঠেছে। এমন উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা খুবই কঠিন। তাই বিনিয়োগে খরা ধরেছে। ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশের নীচে নিয়ে আসতে হবে। কৌশল ও নীতি সহযোগিতার মাধ্যমে এই কাজটি করা উচিত।

৫. বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও নীতি সহযোগিতা : নীতি সহযোগিতা বিনিয়োগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনে বিনিয়োগকারীগণ সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে ঘন ঘন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বিনিয়োগে বড় বাধা। তাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রজেক্ট চালানো কঠিন হয়। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। প্রতিবেশী বা অন্য কোন দেশের পণ্যের সঙ্গে আমরা ব্যবসা করতে কঠিন হয়। দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহযোগিতা খুবই জরুরী। নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক।

৬. জাতীয় নির্বাচন ও রাজনীতি : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের প্রধান শর্ত। বিনিয়োগকারীগণ স্থিতিশীল, দীর্ঘ মেয়াদি সরকার চায়। তাই বিনিয়োগ বৃদ্ধির স্বার্থে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। দীর্ঘ মেয়াদি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তাই সকল দলের অংশগ্রহনে নিরপেক্ষ স্বচ্ছ একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তবেই দেশী বিদেশী বিনিয়োগ দেশে আসবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমবে। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। রাজনৈতিক ঐক্য স্থায়ী হবে।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments