Dhaka University Curzon Hall

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : বাঙালি জাতির ইতিহাসের সাক্ষী

আমি একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে সবসময়ে নিজকে ধন্য মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখনকার মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রী লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। প্রথম বিভাগে উক্ত বিভাগ থেকে সর্বশেষ ডিগ্রী অর্জনের গৌরব সবসময় আমার মধ্যে বিরাজমান।


১৯২১ সালে ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে অগ্রযাত্রা শুরু হয়। আগামী জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশত বছরে পদার্পন করবে। আমরা শতবর্ষ উদযাপন করবো। নানা কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনি এসোসিয়েশন’ হয়তো বিচিত্র কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন করবে। এখন থেকে অনেকে নানা বিষয় চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনেক বড় ইতিহাস রয়েছে। বহু মানুষের চেষ্টা, পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত ভারত বর্ষে একমাত্র আলীগড় কলেজই গোটা ভারতবর্ষে মুসলমানদের জন্য একমাত্র উচ্চ শিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯০৫ সালে ঢাকা নতুন প্রাদেশিক রাজধানী হওয়ার পর অনেকের মধ্যে আগ্রহ দেখা দেয় ঢাকায় একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে। তখনকার বৃটিশ শাসিত ভারত সরকার ১৯১২ সালে ২৭ মে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানকে প্রধান করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি কমিটি’ গঠন করে। এই কমিটিতে ছিলেন ছয়জন বৃটিশ, চারজন মুসলমান ও চারজন হিন্দু।
১৯১১ সালে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ বাতিল হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর স্যার সলিমুল্লাহ লর্ড হার্ডিঞ্জকে একটি হাতে লেখা চিঠি দেন। দুইদিন পর তিনি ২০ ডিসেম্বর আবারও একটি চিঠি পাঠান তাঁর বেদনা ও হতাশা প্রকাশ করে। সলিমুল্লাহর চিঠিকে ভাইসবয় খুবই গুরুত্ব দেন।


পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ অথচ বঞ্চিত মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় বৃটিশ সরকার যে আন্তরিক তার প্রমাণ কীভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে বৃটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়। তাঁরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিক ও সময়ের দাবি এবং এজন্য আন্তরিকভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
কয়েক সপ্তাহ পর ১৯১২ সালে ৩১ জানুয়ারি তিনদিনের সফরে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা এলে স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মুসলমান প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তখন তাদের নিকট হার্ডিঞ্জ বলেন:
“The imperial government realise that education is the true salvation of Mohammedan community and are most anxious to help other the Government felt very strongly about this, and in view of the difficulty of access to Calcutta from Dacca, and for other reasons, the Government propose to recommend to the secretary of state the constitution of a University of Dacca and the appointment of a special officer for education in Eastern Bengal.”
এই ঘটনার মাত্র দুইদিন পর এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। এইা ঘোষণার পর পূর্ববাংলার মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ জেগে উঠে এবং মুসলমানগণ সরকারকে নানাভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।


কিন্তু এই শুভ সংবাদকে আমাদের দীর্ঘদিনের হিন্দু বন্ধুগণ সহজে মেনে নিতে পারেননি। ১৯১২ সালে ১২ ফেব্রæয়ারি হিন্দু বুদ্ধিজীবিগণ খ্যাতিমান আইনজীবী রাম বিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি দশ সদস্যের প্রতিনিধিদল লর্ড হার্ডিঞ্জের সঙ্গে সাক্ষাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চরম বিরোধিতা করে। তারা বলেন, বাংলা একত্র হওয়ায় আমাদেও যে আনন্দ তা নস্ট হয়ে যাবে যদি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এবং তা হবে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি:
“It is feared that the creation of a University of Dacca will be the nature of an internal Partition – a break up the natural life of the people now happily re-united.”


১৯১২ সালে ৫ ও ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উকিল লাইব্রেরী হলে বাবু ত্রৈলোক্যনাথ বসুর সভাপতিত্বে দুইটি প্রতিবাদ সভা হয়। তাতে প্রস্তাব গৃহীত হয়: “ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে শিক্ষার অবনতি হবে। তাই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন দরকার নাই।”


এই বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় ১০১২ সালে ২৮ মার্চ কলিকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে হিন্দুরা এক জনসভা করে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তখনকার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে চরম বিরোধিতায় নামেন। তার সাথে যোগ দেন তথাকথিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদেও জনক বলে অভিহিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি।


সকল বাধা উপেক্ষা করে নওয়াব সলিমুল্লাহর দান করা কয়েকশ বিঘা জমির উপর ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ মৃত্যু বরণ করেন ১৯১৫ সালে ১৬ জানুয়ারি। তাঁর মৃত্যুর ছয় বছর পর তার স্বপে¦র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তার ঘনিষ্ঠ সুহৃদ সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং তাঁর মানস-সন্তান আবুল কাসেম ফজলুল হক।


বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর লেখা “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা” গ্রন্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
“১৯১১ সাল থেকে ’২১ সাল পর্যন্ত কলকাতার প্রধান পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, একদিকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রবল বিরোধিতা করা হচ্ছে এবং যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁরাই অন্যদিকে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোরেশোরে কাজ করে যাচ্ছেন। নোবেরল পুরস্কার পাওয়ার পর বিশ্ব পরিচিতি পেয়ে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার অদূরে বোলপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের জাল বুনছিলেন। পূর্ববঙ্গে তাঁর জমিদারি ছিল, তাঁর আয়ের উৎস ছিল পূর্ববঙ্গ, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, তাঁর ভাষায় “পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকা নিয়ে তার কোন উৎসাহ ছিল না। বিশ্বব্যাপী ঘুরেছেন, কিন্তু দীর্ঘ জীবনে ঢাকায় এসেছেন মাত্র দু’বার ক্ষণিকের জন্য। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাঁকে ডিলিট দেয়, তিনি তা নিজে গিয়ে গ্রহণ করেন।”
“রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন ১৯২১ সালে, যে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ……… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতার কারণ সহজেই বুঝা যায়। একই সময় রাস বিহারী ঘোষও তাঁর সহকর্মীরা যাদবপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।”


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন ফিলিপ জে হার্টগ। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ম্যাবল হেলেন হার্টগ ১৯২০ সালে ১ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে মুম্বাই হয়ে কলকাতা পৌছান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯২০ অনুযায়ী ভাইসরয় তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেন। তাঁর মাসিক বেতন ধার্য হয় চার হাজার টাকা, বাসস্থান ফ্রি। ডি এম এ রহিম তাঁর The History of the University of Daccaয় উল্লেখ করেছেন, তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর নিয়োগ পান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১০ ডিসেম্বর।


ধর্মীয় পরিচয়ে হার্টগ ছিলেন একজন ইহুদি, জাতিতে বৃটিশ। ১৮৬৪ সালে ২ মার্চ তিনি লন্ডনে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বিত্তবান ও সংস্কৃতিমনা বাবা আলফনস হার্টগের তৃতীয় পুত্র। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিল ফরাসি ইহুদি।
বাংলাদেশের মানুষের, বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত মানুষের ফিলিফ হার্টগের কাছে যে ঋণ তা অপরিমেয় ও অপরিশোধ্য। বাংলাদেশ আধুনিক একটি বিদ্বৎসমাজ তৈরি হয়েছে, যেসব আধুনিক কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী তৈরি হয়েছেন, সেসব প্রগতিশীল রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারক তৈরি হয়েছেন, যেসব দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিত প্রশাসক তৈরি হয়েছন গত একশত বছরে, তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হার্টেগের ভূমিকা প্রধান। তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি হল রয়েছে তাও ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল নামে খ্যাত। অথচ নাম হচ্ছে ‘স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল’।


১৯২৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে হার্টগ ১৯২৬ সালে ভারতীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে একজন সদস্য হিসাবে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে ২৭ জুন স্যার ফিলিফ হার্টগ লন্ডনের একটি নার্সিং হোমে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অর্জন
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৭৭ জন। শিক্ষক ছিলেন মাত্র ৬০ জন। ১৯২৩-২৪ সালে কলা, বিজ্ঞান ও আইনে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৭০ জন। ১৯২৪-২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩২২ জন।


বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশাল সাম্রাজ্য। ২০১৪ সালের তথ্যঅনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ১ হাজার ৮৬২ জন, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪০ হাজারের অধিক, সান্ধ্যকালীন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩০৮ জন। বর্তমান অনুষদ ১৩, বিভাগ ৭৪, ইনস্টিটিউট ১১, গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র ৪৮, আবাসিক হল ১৯, হোস্টেল ৩টি। কর্মকর্তা ৯৬৭, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচার এক হাজার ১২১ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দণন হাজার ১৩৪ জন। পিএইচডি প্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯ জন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট ১৯২০ অনুযায়ী ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর ধীরে ধীরে বেশ পরিবর্তন আসে। ১৯৬১ সালে নতুন এক অধ্যাদেশ জারি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। সরকার অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬১ সালে তখনকার সময়কার পূর্বের আদেশ বাতিল করে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বর্তমানে ও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নয়, একটি জনপদের মানুষের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিবর্তন ও উত্থানের একশত বছরের ইতিহাস। ১৯২১ থেকে ১৯৭১ এ পর্যন্ত ৫০ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতেও তাঁদের ভূমিকাই প্রধান। এ ভূখণ্ডের মানুষের আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অবদান অতুলনীয়।


বহুকাল বাংলার মুসলমান সমাজ অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের অন্ধকারে পড়েছিল। আধুনিক উচ্চ শিক্ষা থেকে অনেক অনেক দূরে ছিল বাংলার মুসলসানদের অবস্থান। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল থাকার কারণে কলকাতা বা আলীগড় গিয়ে সবার পক্ষে উচ্চ শিক্ষা নেয়া সম্ভব ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বাংলার মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করে। তুলনামূলকভাবে অল্প খরচে আবাসিক হলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকার কারণে গ্রামীন মাঝারি কৃষকের সন্তানেরাও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে পদস্থ সরকারি চাকরিতেও তাঁরা প্রবেশ করার সুযোগ পায়। ফলে মাত্র সিকি শতাব্দিতে গড়ে উঠে বাংলায় এক শিক্ষিত মধ্যশ্রেণি। এক পর্যায়ে তাঁরাই দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে তাঁদের নেতৃত্বেই।


শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা বিরাট। সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎকর্ষ অর্জনে আধুনিক শিক্ষার ভূমিকা প্রধান। অনগ্রসর ও প্রাচীনপন্থী শিক্ষা দিয়ে আধুনিক অগ্রসর সংস্কৃতি নির্মাণ সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাঙালি মুসলমানদের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা আধুনিক ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আধুনিক বাঙালি মুসলমান লেখকদের সূতিকাগার।


দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এখনো করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখে আর্থ সামাজিক প্রগতিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনা চর্চায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবদান সবচেয়ে বেশি। পরিসরে ছোট হলেও বাংলাদেশে যে একটি আলোকিত সমাজ গড়ে উঠেছে, যার অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং সব রকম মধ্যযুগীয়তার বিরোধী, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান।


এমন এক সময় ছিল যখন শুধু শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে নয়, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে ছাত্র আন্দোলন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালে গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা ও অবদান চিরদিন জাতি স্মরণ রাখবে।


বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সবচেয়ে বড় ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরব, মান-মর্যাদা, সম্মান, সুনাম-সুখ্যাতি ধরে রাখার জন্য রীতিমত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সুদীর্ঘ ৫০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতির পরিবর্তে ঘটেছে অবনতি।


এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘটেছে হত্যা, খুন, গুম, রাহাজানি। বন্ধ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বার বার। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে অনেকে দিন ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। সেশনজট থেকে শুরু করে সকল অনিয়মের স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে ক্লাস হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় রেটিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান এখন আর নাই।


এই অবস্থার জন্য মূল কারণ হিসাবে আমরা স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বেপরোয়া ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, অনেক শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কাজে চরম অবহেলা, সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নগ্ন হস্তক্ষেপ, শীর্ষ পর্যায়ে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রভৃতি। তা নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অপব্যবহার, দলীয়করণ, দলীয় অযোগ্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যোগ্যূতার ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বাদি দিয়ে দলীয় পরিচয়ে কম মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষার মানের চরম অবনতি ঘটেছে।


বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির নামে স্বাধীনতার পর থেকে যা ঘটেছে তা কোনক্রমেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে অনেক বলা হয়েছে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে না পৌঁছতে পারায় বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি দিন দিন খারাপ পর্যায়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মান ও শিক্ষার কার্যক্রম ঠিক ছিল। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা এই দুই কাজে ছাত্র-শিক্ষকগণ তখন ব্যস্ত ছিলেন। বর্তমান অবস্থার মত রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোন বিষয় ছিল না।


বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি দেশের সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের মূল কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। লেখাপড়া, গবেষণা ছেড়ে দিয়ে অনেক শিক্ষক যেমন রাজনীতিতে ব্যস্ত, তেমনি ছাত্রছাত্রীগণ নিজ নিজ জ্ঞান অর্জনের কাজ বাজ দিয়ে দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় বেশি সময় দিচ্ছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষকের জীবনের মূলমন্ত্রই হচ্ছে রাজনীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া। অন্যদিকে সরকারও রাজনৈতিক আনুগত্য ও সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়া কোন শিক্ষককে এসব আকর্ষণীয় পদে স্থান দেয় না। তাই এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষক, শিক্ষা-দীক্ষা, গবেষণা ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম ছেড়ে দিয়ে দলীয় রাজনীতির পিছনে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করেন। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে ও পরে অনেক শিক্ষক বুঝে ফেলেন যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা, জ্ঞান-গরিমা, গবেষণা মুখ্য বিষয় নয়। রাজনীতি ও দলীয় আনুগত্যই জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির মূল বিষয়। তাই এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য জীবনের সকল শক্তি ব্যয় করে। লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই সকল শিক্ষক বসে থাকেন না।
মূল্যবোধ, নৈতিকতা, নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে আমাদের পুরো জাতির অনেক বেশি অধ:পতন ঘটেছে। জবাবদিহির অভাবে আমাদের স্বেচ্ছাচারি কর তোলেছে। এমনও কিছু শিক্ষক আছেন যারা ঠিকমত ক্লাশ নেন না, পরীক্ষা নেন না, পরীক্ষা নিলেও ঠিকমত যথাসময়ে ফলাফল দেন না। আর এক শ্রেণির কিছু শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাশ ও পরীক্ষা নিয়ে অধিক কোর্স নিয়ে অর্থের লোভে এত ব্যস্ত থাকেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাশ নেয়ার সময় পান না।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের এই দৈন্যদশা। দায়বদ্ধতা বা কোন প্রকার জবাবদিহিতা না থাকার কারণে দিনে দিনে উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানসমূহ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। এইভাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না, চলতে দেওয়া কোন ক্রমেই উচিত নয়্ সকলে আমরা জানি আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির কষ্টের করের টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে। দেশ ও দশের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চরম জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিত।


এখন কি প্রয়োজন
১. এখন প্রয়োজন সকল ক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনকে কার্যকরী করা। ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে শিক্ষক রাজনীতি তথা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক রাজনীতি করা যাবে, তবে দলীয় কর্মী, নেতার মত করে রাজনীতি করা যাবে না। সক্রিয় রাজনীতি করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে করতে হবে। এইরূপ আইনের প্রয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে এবং শিক্ষার মান ও গবেষণা বৃদ্ধি পাবে। জাতি মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা পাবে।


২. বিশ্ববিদ্যালয় সকল স্তরে নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোন নিয়োগ দেয়া যাবে না। সক্রিয় রাজনীতি করলে নিয়োগ না দেয়ার বিধান চালু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষা, গবেষনা ও পড়াশোনার স্থান। এখানে রাজনীতি করার জন্য কেউ শিক্ষকতা বা কর্ম গ্রহণ করা ঠিক নয়।


৩. ছাত্র রাজনীতিকে শিক্ষা বিষয়ক রাজনীতির গন্ডিতে আনার চেষ্টা করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ছাত্র জীবনে শুধু ছাত্র সমস্যা ও জাতীয় সমস্যা সমাধানে ছাত্র রাজনীতিতে সীমিত রাখার চেষ্টা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের মূল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র রাজনীতির যে ধারা চলেছে তা থেকে জাতিকে বের হয়ে আসতে হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ছাত্র রাজনীতির নামে নানা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করার পরিবেশ থেকে ছাত্র সমাজকে বের হয়ে আসতে হবে। ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যত। তাই তাদেরকে উপযুক্ত, সঠিক, জ্ঞানগর্ব শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টানতে হবে। ছাত্র অবস্থায় কোনক্রমেই ব্যবসা নয়। ছাত্র অবস্থায় পড়াশোনা হবে জীবনের একমাত্র নেশা, পেশা ও ধ্যান।


উপসংহার
কলকাতাকেন্দ্রিক বর্ণ হিন্দু নেতৃবৃন্দ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মককা বিশ্ববিদ্যালয়’ বা ‘ফাককা বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে উপহাস করেন। তাদের কটাক্ষ উপেক্ষা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই পরবর্তীকালের মুসলিম বাংলার প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ ও আইনবিদ তৈকরির কারাখানারূপে মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশকে ত্বরান্বিত করে তোলে।


স্যার ফিলিপ হার্টগের ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল an ideal University- একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়। সৈয়দ আবুল মকসুদ তার লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা’ গ্রন্থে ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের শেষ ‘উপসংহার’ শিরোনামে বলেন,
“বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের অনেকেই বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো Oxford of the East. কেউই বিশেষ বাড়িয়ে বলেননি। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের মতো একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল এবং শুধু সম্ভাবনাই ছিল না, সেরকমটি হওয়ার প্রস্তুতিও ছিল। তবে উপনিবেশিত দেশ হওয়ায় অর্থনৈতিক সংগতি ছিল না। প্রথম পর্যায়ের পরিচালকদের প্রচেষ্টায় ঘাটতি ছিল না। তবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যা দিয়েছে, তার তুলনা দ্বিতীয়টি নেই।”

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments