চীন বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক পুরাতন। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পরে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চায়নার ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে চাইনিজ প্রধানমন্ত্রী Zhou Enlai দুই দুইবার সফর করেন। ১৯৫৭ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানাী চায়না সফর করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৭ সালে চায়না সফর করেন। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চায়নার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদ চায়না সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চায়না সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকা কালিন চাইনিজ প্রধানমন্ত্রী Jiabao বাংলাদেশ সফরে করেন। ২০০৫ সালকে উভয় দেশ “Bangladesh China Friendship Year” ঘোষণা করেন। ২০০৭ সালে চায়না প্রথমবারের মত ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইক্লোন দুর্গত জনগণের জন্য দান করেন।
বর্তমানে চায়না বাংলাদেশ সম্পর্ক অতি চমৎকার। বহুমাত্রিক সহযোগীতার মাধ্যমে দুই দেশে অর্থনৈতিক সামাজিক,সাংস্কৃতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চায়নার সম্পর্ক ব্যবসায়িক। ১৯৯৭ সালে প্রথম Power Chine নামক কোম্পানী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। বিগত কয়েক বছর ২০টির অধিক চাইনিজ কোম্পানী বাংলাদেশে বিনিয়োগে কাজ করছে। Power Chine কোম্পানীর বর্তমানে ১৪টির মত প্রকল্পের কাজ চলেছে। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪ দশমিক ৭০ ডলার বিলিয়ন মার্কিন মুদ্রায়। এই কোম্পানী পরিকল্পনা, ডিজাইন, প্রকল্প, অপারেশন এবং মেইনটেনেস খাতে কাজ করে চলেছে।
একটি অমুসলিম বড় প্রতিবেশী দেশ হিসাবে চায়না আমাদের উন্নয়নের বড় অংশীদার। দীর্ঘ ৪৫ বছরের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশ চায়না। বর্তমান সম্পর্ক অতি উচ্চতায় রয়েছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন, গুরুত্ব স্থাপনা বঙ্গবন্ধু চীনমৈত্রী হল। যেটি শেরে-ই-বাংলা নগর অবস্থিত। দীর্গ দিন ধরে উক্ত স্থাপনা থেকে আমরা উপকৃত হয়ে আসছি। বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। পূর্বে নাম ছিল বাংলাদেশ চীন বন্ধুত্ব কনফারেন্স সেন্টার। ২০০১ সালে এইটি তৈরি হয়। চালু হয় ২০০২ সালে। খরচ হয় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তী সময় চীন সরকার পুরো হলটি বাংলাদেশকে সৌজন্যে প্রদান করে। এইটি চীনের বন্ধুত্বে বড় নিদর্শন।
৭ই জুন ২০২০ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই সকল প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উক্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণীত প্রকল্প সমূহ চীন বাংলা ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন এর প্রথম গ্রহণ করা হয়েছে। ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প চীন সরকারের নিকট অনুমোদনে বিনিয়োগের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
১৭টি প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্প রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। Power grid Strengthening Project যার খরচের হিসাব ধরা হয়েছে ৯৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। Over loaded transformer পরিবর্তনের জন্য একটি প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ২৩০.৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৃতীয় System loss rejection project খরচ ধরা হয়েছে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রয়েছে চারটি উন্নয়ন প্রকল্প। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডবল লাইন প্রকল্প। যার খরচ ধরা হয়েছে ১০৪৫.৫৯ মার্কিন ডলার। আখাউড়া সিলেট মিটার গেজ লাইনকে ডবল গেজ লাইনে পরিবর্তন করা হবে- যা দ্বিতীয় রেলওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৭২.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৃতীয় উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ডবল গেজ লাইন নির্মাণ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৫৮১.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চতুর্থ রেলের উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে Inland Container depot নির্মিাণ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সড়ক বিভাগের অধীনে দুইটি উন্নয়ন প্রকল্প রাখা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া Express way। যার খরচ ধরা হয়েছে ১১৫৫.১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সীতাকুন্ড-কক্সবাজার Urine drive Expressway প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৮৫৬.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ICT মন্ত্রণালয় উক্ত ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে দুইটি প্রকল্প রয়েছে। প্রথম প্রকল্প হচ্ছে Digital Conductivity প্রকল্প। এই প্রকল্পের খরচ হতে পারে ৮৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় প্রকল্প হচ্ছে শহর গ্রামের মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ওঈঞ মাধ্যমে। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তথ্য মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পের মধ্যে একটি প্রকল্প রয়েছে। উক্ত প্রকল্প হচ্ছে ছয়টি পূর্ণাঙ্গ টিভি স্টেশন তৈরি করার প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দুইটি প্রকল্প রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে রাজশাহী ওয়াসা পানি শোধনাগার নির্মাণ। যার আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় প্রকল্প হচ্ছে Sanitation and waste management প্রকল্প। যা মিউনিসিপাটি এলাকায় স্থাপন করা হবে। খরচ ধরা হয়েছে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া আরও দুইটি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। একটি হচ্ছে জুট মিল আধুনিকরণ প্রকল্প। মূল্য ধরা হয়েছে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্প। এছাড়া চীনের জন্য নির্মিত Economic zone প্রকল্প, চট্টগ্রাম। ইহার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উক্ত ১৭টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পে শিপিং মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প রয়েছে। তা হচ্ছে মংলা বন্দর আধুনিকরণ প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩.৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উক্ত প্রকল্প সমূহ চীন সরকারের নিকট বিগত জুন ২০২০ প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ও চীন উভয়ে প্রকল্প সমূহের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।
বাংলাদেশে চীনের চলমান প্রকল্প সমূহ ও আগামীতে সম্ভাব্য প্রকল্প সমূহ দৃশ্যবান হলে, চীন ও বাংলাদেশ এক অন্যান্য সম্পর্কের মাত্রায় গিয়ে পৌঁছাবে।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
I think, China is our real friend. Got many information today. Thank you sir