এক সময় আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে বেশ আমরা গর্ব করতাম। ব্যবসার শুরুতে এই সকল সংগঠনের সদস্য লাভের বেশ আগ্রহ ছিল। এই সকল সংগঠনে সদস্য হওয়ার জন্য আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও লক্ষণীয় ছিল।
কিন্তু এখন কোথাও যেন আমরা ব্যবসায়ীগণ দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কট যেন দেখা দিয়েছে। এখন আর ব্যবসায়ী হিসাবে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ, উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা ঝিমিয়ে পড়েছি। সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কর্ম প্রেরণা হ্রাস পাচ্ছে।
বিগত ৫ই ডিসেম্বর ২০২১ সালে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ‘এফবিসিসিআইয়ের আসল কাজ তাহলে কোনটি’ শিরোনামে বিশ্লেষণধর্মী শওকত হোসেন সাংবাদিকের রিপোর্টটি পড়ে আরও বেশি মর্মাহত, দুঃখিত, হতবাগ হলাম। ভাবছি আমরা কোথায় যেন তলিয়ে যাচ্ছি। পাঠকের বুঝার সুবিধার জন্য আমি আজকের এই প্রবন্ধে পত্রিকার পুরো রিপোর্টটি তুলে ধরলাম।
এফবিসিসিআই, আপনার আসল কাজ কোনটি?
গণমাধ্যমে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। বিষয় হচ্ছে বিজয়ের ৫০ বছর উদ্যাপনে পহেলা ডিসেম্বর থেকে ১৬ দিনব্যাপী লাল-সবুজের মহোৎসব করবে এফবিসিসিআই।
এরপর তারা লিখেছে, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিংবা সামাজিক সূচকের শক্তিশালী অবস্থান, দুর্বল এক শিশুরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনৈতিক শক্তি, পরনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে আত্মনির্ভরতায় বলীয়ান হয়ে ওঠা-বাংলাদেশের ৫০ বছরের গল্প সফলতার, অর্জনের।’
এটুকু পড়ে আশান্বিত হয়েছিলাম। মনে হলো, আসলেই ৫০ বছরের অর্জন তো বিশাল, বিশেষ করে অর্থনীতিতে। আর এ অর্জনের কৃতিত্ব তো দেশের উদ্যোক্তাদেরই। অবশ্যই সরকারের নীতিনির্ধারণী ভূমিকা আছে, তবে উদ্যোক্তাদের কৃতিত্বই বেশি। সুতরাং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই এর বিশাল উৎসব করা মানায়।
উৎসব নিয়ে সংগঠনটি এরপর লিখেছে, ‘যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় এসেছে, যে মহান নেতার নেতৃত্বে মিলেছে বাঙালির নিজস্ব মানচিত্র, যাঁর সুদক্ষ শাসনে দেশ উঠে এসেছে উন্নয়নের মহাসড়কে, তাঁদের সবার প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজন করেছে ১৬ দিনব্যাপী লাল-সবুজের মহোৎসব।’
এতটুক পড়ে উৎসবের বিষয়বস্তু নিয়ে একটু খটকা লাগলেও আশা-আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিতে মন চাইল না। মনে হলো, ১৬ দিনের উৎসব যেহেতু, সেহেতু ৫০ বছরের অর্থনীতির অর্জন নিয়ে বিশেষ কিছু ঠিকই মিলবে, যা আগামীর যাত্রার প্রতি একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। এতে অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
এই ফাঁকে একটু ঘুরে এলাম পাশের দেশ ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা ফিকির ওয়েবসাইটে। ভারতও স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করতে যাচ্ছে। এ জন্য ফিকির একটা প্রতিবেদন পাওয়া গেল সেখানে। প্রতিবেদনের মূল বিষয় ‘ইন্ডিয়া বিয়োন্ড ৭৫’। এবারের রিপোর্টের প্রতিপাদ্য কৃষি খাত। তাদের মূল আলোচনা হচ্ছে ৭৫ বছর তো হয়ে গেল, এখন ভারত ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চায়, এর জন্য কী করতে হবে। এ নিয়ে তারা আরও গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করবে।
আর এফবিসিসিআইয়ের ওয়েবসাইটে কী আছে? কেবল নেতাদের ছবি। কোথায় কার সঙ্গে কে দেখা করেছে, সেসব ছবিই বড় বড় করে দেওয়া। এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলে সভাপতির টক শোও স্থান পেয়েছে সেখানে। গবেষণা বলতে আছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব। আর আছে প্রণোদনা তহবিল নিয়ে সরকারের নানা প্রজ্ঞাপন। ব্যস, এটুকুই।
গবেষণা বলতে আসলে কোনো কিছুই নেই এফবিসিসিআইয়ের। তবে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, তা নয়। সুযোগ এসেছে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করার এই তো সুযোগ।
বাংলাদেশ ছিল সাহায্য নির্ভর দেশ। এখন নিজেদের আমরা বাণিজ্যনির্ভর দেশ বলি। এ জন্য কৃতিত্ব পোশাক খাতের, জনশক্তি রপ্তানি খাতের। কৃষি কেবল এখন জমির মালিক ও কৃষকদের বিষয় নয়, বেসরকারি উদ্যোগ এখানেও আছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্যের আছে বিশাল সম্ভাবনা। পোশাক খাতের নির্ভরতা বাড়াতে হবে অন্য খাতেও। সেটা হতে পারে ইলেকট্রনিকস, জাহাজ নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়াজাত পণ্যসহ আরও বেশ কিছু খাত। ব্যাংক খাত ও ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। ৫০ বছরের পূর্তিতে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেই ধারণা ছিল। এমনকি আলোচনার বাইরে ৫০ বছরে যাঁরা বাংলাদেশকে অর্থনীতিতে আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করেছেন, সেই উদ্যোক্তাদের সম্মাননা জানানোরও একটা সুযোগ ছিল। অন্তত কিছু উদ্যোক্তার নামও নেওয়া যেত।অথচ এফবিসিসিআই কী করছে? পয়লা ডিসেম্বর থেকে হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারে শুরু হয়ে গেছে এফবিসিসিআই আয়োজিত এ মহোৎসব। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৬ দিনের মহোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ প্রতিদিনের আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে সশরীর উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং প্রতিদিনের অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
অবশ্যই আমরা ৫০ বছরের উৎসব করব, করছিও। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের কাজ কি কেবলই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা? অর্থনীতি নিয়ে কিছুই কি করার ছিল না? এমনিতেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি এখন সরকারি দলের ব্যবসায়ী শাখায় পরিণত হয়ে গেছে।১৬ দিনের উৎসবের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ রকম: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি; শিশু–কিশোর ও বিশেষ শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; নারীদের অংশগ্রহণে বিশেষ অনুষ্ঠান; নজরুল উৎসব; রবীন্দ্র উৎসব; নৃত্য উৎসব; অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠান; সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান; লোকসংগীত; চলচ্চিত্র তারকাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান; মঞ্চনাটক ও কনসার্ট।
খুবই ভালো কর্মসূচি সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে অর্থনীতি কই? অবশ্যই আমরা ৫০ বছরের উৎসব করব, করছিও। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের কাজ কি কেবলই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা? অর্থনীতি নিয়ে কিছুই কি করার ছিল না? এমনিতেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি এখন সরকারি দলের ব্যবসায়ী শাখায় পরিণত হয়ে গেছে। নীতিনির্ধারণ বিষয়ে তাদের নিজেদের কোনো মূল্যায়ন নেই, নিজেদের কোনো অবস্থান নেই, এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়েও তাদের কোনো আলোচনা নেই। ব্যবসায়ী সমাজে আসলে এফবিসিসিআইয়ের গুরুত্ব বা ভূমিকা আসলে কি, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। আসলে এফবিসিসিআই ৫০ বছর নিয়ে অর্থনীতি বিষয়ে আলোচনা করবে, এটা আশা করাই ভুল ছিল।
১৯৮৩ সালের শেষের দিক থেকে আমি তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। তখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শুরু বলা যায়। তখন বিজিএমইএ প্রাথমিক অবস্থা। সদস্য সংখ্যাও খুব কম। কাওরান বাজার বস্ত্র শিল্প পরিদপ্তরে ছোট্ট কক্ষে বিজিএমইএ অফিস। সুবেদ আলী তখন বিজিএমইএ সভাপতি। পরবর্তী টিপু সভাপতি হন। প্রকৃত অর্থে ১৯৭৮-৮৫ সালে এএম সুবেদ আলী বিজিএমইএ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিজিএমই গঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। কোন কোন তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে বিজিএমইএ যাত্রা শুরু করে। আর বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্য সংখ্যা ৪৫০০ এর অধিক।
১৯৮৪ সালে আমরা ইয়ুথ গার্মেন্ট লিঃ নামে তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসা শুরু করি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ফিরোজ আলম ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তা। ২০১৯ সালে ৫ নভেম্বর ফিরোজ আলম আমাদের ছেড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। রেজাকুল হায়দার মঞ্জু ছিলেন আমাদের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক। সেও দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে ২০২১ সালে। এখন আমাদের চারজনের মধ্যে আমি এবং মোস্তানছের বিল্লাহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে ছাত্র সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি। তাই ব্যবসায়িক জীবনে এসেও ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে ব্যবসার শুরু থেকে আমার কাজ করার আগ্রহ ছিল। তাই ১৯৯২ সালে বিজিএমইএ সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ব্যবসায়ীদের কল্যাণে প্রচুর সময় ব্যয় করি। তখন নির্বাচন হতো। চমৎকার প্রতিযোগিতামূলক, আনন্দ উৎসবের মধ্যে বিজিএমইএ নির্বাচন হতো। অনেক আনন্দ পেতাম। পরবর্তীতে বিটিএমএ সংগঠনের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। তখন বিটিএমএ সভাপতি ছিলেন সালমান এফ রহমান। যিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য।
একই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। তখন এফবিসিসিআই সভাপতি ছিলেন আবদুল আওয়াল মিন্টু। যিনি বর্তমানে বিএনপি সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পর পর দুইবার আমি এফবিসিসিআই পরিচালক পদে নির্বাচন করি। প্রচুর প্রতিযোগিতামূলক এই সব নির্বাচন ছিল। প্রথমবার মাত্র দুই ভোটে হেরে যাই। দ্বিতীয়বার ২০০৩ সালে আমার প্যানেলে শুধু আমি জয়যুক্ত হই এবং নির্বাচনের পর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাই।
তখন এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসাবে খুবই পরিচিত ছিল। নিয়মিত নির্বাচন হতো। সাধারণ সদস্যদের ভোটের মূল্য ছিল। ভোটারদের কদর ছিল। ২০০৫ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ প্রভৃতি সংগঠনের নির্বাচনের তরিকা উঠে যেতে শুরু হলো। নির্বাচন নির্বাচনে গিয়ে েেসলেকশানে এই সকল সংগঠন পরিচালিত হতে শুরু করলো।
এখনও সংগঠনগুলো আছে। নির্বাচনও আছে। তবে ভোটারদের ভোট দিতে হয় না। নির্বাচন হয়ে যায়। কমিটি গঠিত হয়। ভোটের কদর নেই।
এখন উপায় কি?
ব্যবসায়ী সংগঠন করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য। সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দাবিসমূহ আদায় করার জন্য। ব্যবসার উন্নতিতে ভ‚মিকা রাখার জন্য আমাদের এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, চেম্বার ও এসোসিয়েশনসমূহ।
দুই বছর পর পর এই সকল সংগঠনের নির্বাচন হতো অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে। প্রতিযোগিতা ছিল। ভোটারদের কদর ছিল। মূল্যায়ন করা হতো। সঠিক দায়িত্ব নির্বাচিত সদস্যগণ করতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনে বাদ পড়ে যেতেন। এই ভয়ে সকলে ঠিক ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করতেন। আমানতের প্রতি খেয়াল ছিল।
কিন্তু তখন ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা বেশী বলার প্রয়োজন হয় না। সভাপতি বা পরিচালকগণ বিশেষ কায়দায় নির্বাচিত হন, ফলে ভোটারদের মূল্য এখন আর নেই। বিশেষ ‘শক্তি’ কে সন্তুষ্ট করার জন্য তখন সকলে ব্যস্ত থাকে। তাই ভোটারদের সমস্যা সমাধানে সময় ব্যয় করার প্রয়োজন হয় না।
ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহ ব্যবসার উন্নতির জন্য কাজ করে। সকল দেশের চেম্বার, এসোসিয়েশন সেই কাজ করে। কিন্তু এখন আমাদের দেশে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতির ফলে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ঘটেছে। মূল কাজ রেখে আমরা অন্য কাজ নিয়ে বেশী সময় ব্যয় করছি।
দেশের সরকার ও তেমন কোন লাভবান হয়েছেন বলে মনে হয়। ব্যবসায়ীরা সব সময় সরকারের বন্ধু, সহযোগী। উন্নয়ন সহযোগী হলেন প্রকৃত ব্যবসায়ীগণ। সেই কাজটি করার জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীদের স্বাধীন, নিরপেক্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন থাকা খুবই জরুরি। সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যবসায়ী সংগঠন দিয়ে দেশের কোন কল্যাণ হতে পারে না। সাময়িক কিছুটা সরকারের তোষণ হতে পারে, কিন্তু উপকার হয় না। প্রকৃত পরামর্শ দেশের জন্য, সরকারের জন্য কোন তোষণকারী সংগঠন দিতে পারে না। কারণ তারা ব্যস্ত তাকে সব সময় নিজের স্বার্থ নিয়ে। নিজের ব্যবসা নিয়ে। নিজেদের ব্যবসায়ী স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য ব্যস্ত ‘পরিচালক’ সংগঠন কোন দিন জাতির স্বার্থে কাজ করতে পারে না।
ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে সরকারের নিকট যুক্তি দিয়ে উত্থাপন করতে পারে। নিজের মধ্যে একটি ‘পলায়নমূলক’ মনোভাব কাজ করে। ‘তোষণমূলক নীতি গ্রহণ করা এদের চরিত্র হয়ে পড়ে। মূল ব্যবসায়িক কাজ থেকে সরে গিয়ে, সরকারের সহযোগী সংগঠনে পরিণত হয়। তখন সরকার ও বেসরকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তাতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় বেশি। দেশের ও ক্ষতি হয়। উন্নয়মূলক পরিকল্পনার পরিবর্তে সরকারের তোষণমূলক কাজে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যবসায়িক চরিত্র হারিয়ে যায়।
এখন প্রয়োজন এফবিসিসিআইসহ সকল ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে একটি পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনে প্রকৃত নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সিলেকশন পদ্ধতি পরিহার করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও রাজনীতিমুক্ত হতে হবে। দলীয় রাজনীতি থেকে সকল ব্যবসায়ী সংগঠনকে মুক্ত হতে হবে। রাজনীতি ও ব্যবসাকে এক করা যাবে না। রাজনীতি রাজনীতি থাকবে। ব্যবসা, ব্যবসা থাকবে। যিনি রাজনীতি করবেন তিনি ব্যবসায়ী সংগঠনের কোন রকম দায়িত্বগ্রহণ না করা উচিত। তাতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবেনা। ব্যবসাকে সম্পূর্ণরূপে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে হবে। এইজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের দৃঢ় সিদ্ধান্ত। কার্যকরী উদ্যোগ। দেশের ব্যবসার স্বার্থে আজ সকল ব্যবসায়ী সংগঠনের রাজনীতিমুক্ত হতে হবে।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।