ইতিহাস থেকে
আমার প্রবাসী এক বন্ধু লেখক করোনা আক্রান্ত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অনেক দিন পর টেলিফোনে আলাপ হলো। তিনি এখন ভাল আছেন। বেশ কিছু বই-পুস্তক সংগ্রহ করেছেন। এখন নতুন বিষয় নিয়ে লিখবেন। আলাপ হতে হতে আমার ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের ইতিহাস’ বইটি প্রসঙ্গে বেশ উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করে বললেন, “এই ধরনের বই আপনাকে সব সময় স্মরণ রাখবে। সব কিছু চলে যাবে। মানুষ হয়তো অনেক কিছু ভুলে যাবে। কিন্তু বইটি আপনাকে পাঠকের মনে সব সময় স্থান দখল করে থাকবে। এটাই তো মানুষের প্রকৃত প্রাপ্য। এইভাবে মানুষ মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে।”
“ বাংলাদেশে উন্নয়নের ইতিহাস”… নবাব সলিমুল্লাহ থেকে শীর্ষক বইটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। বই আমি ও আমার বন্ধু ড. মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব যৌথভাবে লিখি। তখনকার সরকার প্রধানের নাম নবাব সলিমুল্লাহ থেকে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারসমূহের অবদানের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত বইটি ১০ জন সরকার প্রধানের শাসন আমলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রধান প্রধান উন্নয়নমূলক খাত ও বিষয়কে আলোচনায় স্থান দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকার গঠনের পর কয়েক বছরের কার্যক্রমকালীন দেশের অর্থনৈতিক বিষয়সমূহের কিছু অংশ স্থান পেয়েছে।
১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছে। দেশে স্বাধীন হওয়ার পর আমরা অনেক সরকার প্রধান পেয়েছি। সকল সরকার প্রধানের সময়কালীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র আমার এই বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমার লেখক বন্ধু অনেক কথার মধ্যে “বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাস বইটিকে আর বেশী সমৃদ্ধ করার জন্য পরামর্শ দিলেন। তিনি আরও বললেন, বই আবার নতুন করে, নতুনভাবে, নতুন বিষয় নিয়ে লেখা প্রয়োজন। তিনি বললেন বাংলাদেশ নয়, বঙ্গ দেশের উৎপত্তি থেকে শুরু করে, বিশেষ করে মুসলিম শাসনকালের শাসকদের আমল থেকে কিভাবে ধীরে ধীরে অর্থনীতিতে এগিয়েছে তার ইতিহাস ‘নুতন বইটি নিয়ে পরামর্শটি আমার নিকট বেশ ভাল মনে হলো। তবে এই বিষয়ের জন্য আমাকে অনেক পড়াশোনা করতে হবে এবং জ্ঞানের জন্য অনেক বই সংগ্রহও করতে হবে। বিশেষ করে অর্থনীতি বিষয় নানা লেখকের বইগুলো সংগ্রহ করে পড়া প্রয়োজন। অর্থনীতি বিষয়ক বই আমাদের দেশে বেশ কম। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক কিছু বই হয়তো পাওয়া যেতে পারে। তবে আর কোথায় কোথায় বঙ্গ দেশের অর্থনীতি উন্নয়ন সম্পর্কে বই পাওয়া যেতে পারে তার সন্ধান আমাকে করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে কিছু কিছু লেখক হয়তো বঙ্গ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক বই লেখেছেন তার খবর হয়তো আমি নানা লেখক, বন্ধু মহলে আলাপ করে তথ্য পেতে পারি। তাতে হয়তো আমার নতুন বই লেখার ক্ষেত্রে সক্ষমতা তৈরিতে সুযোগ হবে। অনেক অনেক পড়াশোনা করতে হবে। অনেক বই পুস্তক সংগ্রহ করতে হবে। দেশি বিদেশি বই সংগ্রহ করে নিজকে সমৃদ্ধ করতে হবে। নিজকে সমৃদ্ধ করা ছাড়া কোন সমৃদ্ধ লেখাও লেখা যাবে না।
ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন ইতিহাস নিয়ে যিনি নিয়মত লিখে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। একজন সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে একজন সফল ব্যাংকার হিসেবে ব্যাংকিং জীবনের সমাপ্তি টেনে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
জনাব মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের লেখা “বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ” ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। চমৎকার কভারের বাধাই ৩৩৬ পৃষ্ঠার বইটিতে ইতিহাসের অনেক নতুন নতুন বিষয় লেখক তুলে এনেছেন।
বইটিতে “এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক উমা কান্ত হাজারী লিখিত ১৯০৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রিক পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সে সময় লিখেছেন ঃ
“ কোটি কোটি বঙ্গবাসীর ক্রন্দন উপেক্ষা করিয়া লর্ড কার্জন মহোদয় আমাদের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ করিয়া ফেলিলেন। বঙ্গবাসী এতদিন ধরিয়া মনোমধ্যে যে আশা পোষণ করিতেছিল ভারত শাসন প্রনালীর প্রধান কর্ণধার ইচ্ছাপূর্বক তাহার মূলে কুঠারাঘাত করিলেন। আজি মাতৃদেহ দ্বিধাবিভক্ত হইয়াছে, আমাদের আশা ভরসা বঙ্গোপসাগরের অতল জলে নিমজ্জিত হইয়াছে, সঙ্গগত : বঙ্গদেশ ও বাঙালী জাতির সর্বনাশ হইয়া গিয়াছে। আজ বরিশাল নাই, ঢাকা নাই, ময়মনসিংহ নাই, শরীরের উতমাঙ্গ নাই। বিচ্ছিন্ন মাতৃবঙ্গ ইতস্তত” বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। মাতৃভক্ত সন্তানের নিকট এই দৃশ্য অসহ্য।”
(উমাকান্ত হাজারী : বাংলাবাতায়ন ও প্রদেশের নানা কথা : কলকাতা, ১৩১৩ বাংলা সন, পৃষ্ঠা-১১)
উমাকান্ত হাজারীর এ লেখার একশ বছর পর ২০০৪ সালের অক্টোবরে ঢাকা থেকে আত্মপ্রকাশকারী একটি জাতীয় দৈনিকের উদ্বোধনী সংখ্যায় বাংলাদেশের এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতাকে ধারণ করা হয়েছে পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় প্রধান শিরোনাম। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঃ “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটি অপূর্ব শক্তি অর্জন করেছে। যেটি হলো ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। সাগর তীরবর্তী ও নদী অববাহিকার বদ্বীপ দেশ হিসেবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে বাংলাদেশে। বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, অনেক সময় খরা নিঃস্ব করে দেয় দেশের মানুষকে। এ নিঃস্ব অবস্থা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় তারা।
৩৫ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড়ে আয় ছিল ১০০ ডলারের নিচে। সে আয় এখন সাড়ে চার শ ডলার। মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়াসহ যে সব দেশ এক সময় বাংলাদেশের মতো ছিল তারা অনেক দূরে এগিয়ে এখন মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সে সাফল্য বাংলাদেশ নানা কারণে পায়নি। তবে এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভাল। সাধারণভাবে শুধু ডলারের হিসাবে বাংলাদেশের আয় বেড়েছে এমন নয়। একই সাথে সম ক্রয় ক্ষমতা হিসেবে মাথা পিছু আয়ের যে হিসাব করা হয় তাতেও এদেশের মানুষের আয় বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের যে ক্রয় ক্ষমতা তার সাথে তুলনা করতে হলে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি।
“শুধূ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন এগিয়েছে তেমনিভাবে অর্থনীতির অন্যান্য সুচকও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে। দেশে অর্থনীতির আকার বেড়েছে। ইউরোপ আমেরিকার চেইন মলগুলোতে স্থান করে নেয়ার মত পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক বাণিজ্যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কোরামে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে। বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমেছে। গত অর্থ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। সামষ্টিক ক্ষেত্রে অর্থনীতির এই অগ্রগতি ব্যক্তি খাতে ও দেখা যায়। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেক এগিয়েছে। সাধারণ গার্মেন্ট শ্রমিক অথবা শ্রমজীবি কৃষি বা শিল্প মজুর, নগর মহানগরের রিক্সা চালক যাদের খালি পায়ে, ছেঁড়া জামায় শ্রম বিক্রি করতে দেখা যেত, তাদের যে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণভাবে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হয়েছে। নানা শিল্প গড়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে কেন্দ্র করে।”
আজকের বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। এখন বাংলাদেশ নিজে সক্ষম হচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে। এখন খাদ্যের প্রধান চাউল উৎপাদনে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অবস্থানে। শুধূ চাল উৎপাদন নয়, মাছ, শাক-সবজি, গম, পেয়াজ, রসুন, ডাল এবং নানা ফল উৎপাদনে আমরা বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছি।
এক সময় ভারতবর্ষের অনেকে বঙ্গভঙ্গ জন্য বেশ হৃদয় বিদারক বিবরণ দিয়ে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন। তাদের শুরুতে উমাকান্ত হাজারী বক্তব্য থেকে ভারতবর্ষের একটি সম্প্রদায়ের মনের কথা প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী ১০০ বছর পর আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই উল্লিখিত ১ শত বছর পর উক্ত জাতীয় দৈনিকে যে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় আমাদের উন্নতি, অগ্রগতি কেউ আটকে রাখতে পারে নাই। মুসলিম জাতি হিসাবে আমরা যে একটি সক্ষম জাতি, তার প্রমাণ আমরা আমাদের রাষ্ট্রে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার শর্তে আমরা উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের মধ্যে দৈন্যতা রয়েছে, আমাদের মধ্যে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি রয়েছে প্রচুর।
২০০৪ সালে ঢাকায় উক্ত পত্রিকায় আরও লেখা হয়েছেÑ
“সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে”। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘বাস্কেট কেজ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল সেই বাংলাদেশকে অনুসরণ করে আফ্রিকান দেশসমূহকে এগিয়ে যাওয়ার আহŸান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান। ৩০ বছর আগেও এ দেশের মানুষের গড় আয়ু যেখানে ৪০ বছরের কোঠায় ছিল তা এখন ৭০ পেরিয়ে গিয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার, স্বাক্ষরতা, স্কুলে ভর্তি, বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রাপ্তি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার, মাথাপিছু জ্বালানি ব্যবহার, মাথাপিছু ফোন বা মোবাইল এসব বিবেচনায় ৩ দশকে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।
“আবহাওয়া নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি জাপান-ভিয়েতনামের মতো উন্নতি করতে পারিনি”। তবে ৩০ বছর আগে ৭ কোটি মানুষের জন্য যে খাদ্য ঘাটতি ছিল এখন জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশী হওয়ার পরও সে ঘাটতি শেষ হয়ে স্বনির্ভরতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট ‘সুপার রাইচ’ গবেষণায় অনেক দূর এগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাফল্যে বাংলাদেশকে চাল রফতানিকারক দেশে পরিণত করতে পারে। মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ভেতরে ভেতরে মৎস্য চাষে বিপ্লব এসেছে। প্রায় প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে মুরগি পাওয়া যায়। চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও ডলারের হিসাব করলে দামের বড় ধরনের হেরফের দেখা যায় না। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অনেক, তবে তা মূলত টাকার চলতি মূল্যে। এ কারণে সম ক্রয়ক্ষমতা অনুপাতে আয় ডলারের নমিনাল হিসেবের চেয়ে বেশী বেড়েছে।
“সাড়ে ৩ দশকে সমাজ ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে”। এক সময় গ্রামের পর গ্রামে শিক্ষিত মানুষ পাওয়া ছিল অনেক ক্ষেত্রে ভাগ্যের ব্যাপার। এখন ঘরে ঘরে শিক্ষিত মানুষ পাওয়া যায়। শিক্ষার সাথে সাথে উন্নত সংস্কৃতিরও বিকাশ হচ্ছে। টেলিভিশনের সাদা কালো মুখ থেকে রঙিন টেলিভিশন, আরও পরে স্যাটেলাইট যুগ এসেছে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে। সংস্কৃতির এ খোলা দরজায় সব কিছু ভাল এসেছে এমন নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতির দোরগোড়ায় পৌছেছে। প্রযুক্তি মঙ্গল জয়ের শক্তি যেমন মুঠোয় আনে, তেমনি পারমাণবিক ধ্বংসের ক্ষমতা ও আয়ত্তে এনে দেয়। একইভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতির রূপান্তরে দুটিই আমরা পেয়েছি।
“যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিতেও বিস্ময়কর পরিবর্তন এসেছে”। কয়েক দশক ধরে স্থির টেলিফোন যেখানে ৫ লাখের নিচে ছিল সেখানে মাত্র এক দশকে মোবাইল ফোনের সংযোগ ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে ৫ মিনিট কথা বলতে আগে যেখানে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা প্রয়োজন হতো এখন তা সারা যায় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কম্পিউটার প্রযুক্তির দ্রæত বিস্তৃতি ঘটেছে দেশে। এর প্রভাব সার্বিক জীবনযাত্রায়ও পড়েছে।
“আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন এসেছে গত সাড়ে তিন দশকে”। এ পরিবর্তন ঘটেছে নেতিবাচকভাবে। এই একটি ক্ষেত্রের নেতিবাচক পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতিকে রুদ্ধ করেছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন খারাবি অনেক বেড়েছে। স্বাধীনতা উত্তর অস্থির সময় বাদ দেয়া হলে বাংলাদেশের ১০০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলার প্রবণতা দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন সময় এই অবনতির গতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে কখনও হয়নি।”
ঠিক সেই সময় অনেক লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক দেশের নানা বিষয় উপর গবেষনামূলক প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা নাটকের মাধ্যমে আমাদের সমাজের নানা চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের চরিত্র, মানুষের চরিত্রের অধপতেরন নমুনা নানাভাবে সমাজে সচেতন মানুষের মধ্যে সংশোধনের তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ মানুষকে সংশোধনের জন্য বলছে, সংশোধন হলে ভাল মানুষ হওয়ার উপদেশ দিচ্ছে। কিন্তু সমাজের বৃহত্তর একটি অংশ হেদায়েতকারীদের বক্তব্য কোনক্রমেই কান দিচ্ছে না। বেপরোয়াভাবে মানুষ চলেছে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ সবচেয়ে বেশী পরিমাণ মন্দ কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে। আমাদের নাটক, সিনেমা এবং টিভির নানা অনুষ্ঠানে নারীদের দেহ যেভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে তা কোনক্রমেই ঈমানদার মানুষের জন্য কাম্য নয়। এই অবস্থার একদিন পরিবর্তন হবে ইনশাল্লাহ।
এই পরিবর্তনের আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার আর এক বন্ধু, চিন্তাশীল ব্যক্তি, গবেষক, প্রবীণ সাংবাদিক মাসুৃমুর রহমান খলিলী ২৫শে অক্টোবর ২০০৪ সালে তার এক নিবন্ধ “বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ” লিখেছেন ঃ
“এত কিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ কি স্বপ্ন দেখতে পারে না : এক উন্নত ভবিষ্যতের? এ প্রশ্ন আজ অনেকের। এই জিজ্ঞাসার ইতিবাচক জবাবই এগিয়ে দিতে পারে এ দেশের মানুষকে, এ দেশÑ এ ভূখন্ডকে।”
আমার বাংলাদেশ
সকলের ধারণা, ইচ্ছা, আকাক্সক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে ভারতবর্ষকে বিভক্ত আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়েছে। উমা কান্ত হাজারীর ‘বঙ্গভঙ্গ’ হওয়ার পর যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তা এখন ভুল প্রমাণিত। এমনকি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বঙ্গভঙ্গ’ নিয়ে যে বক্তব্য তাও আজ অসার প্রমাণিত। তা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে। তারই ফলশ্রæতিতে আজকের আমাদের স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশ।আজকের বাংলাদেশ নতুন এক বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাধ্যমে। নতুন এক দেশ হিসাবে শূন্য থেকে আজকের বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ পদার্পণ করার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু আজকের করোনা (কোভিড-১৯) আমাদের অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিগত ২৬শে মার্চ ২০ থেকে বাংলাদেশ সকল রকমের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ আড়াই মাস সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকার পর ৩০শে মে ২০ সরকার আবার সাধারণ ছুটি (লকডাউন) বাতিল করে স্বাভাবিক কর্মকান্ড চালু করার সুযোগ করে দেয়
করোনা পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতিকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। শত বাধা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকার শর্তেও দেশ এগিয়ে চলেছে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের নানান খাতে চরম আকার নৈরাজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি থাকা শর্তেও আমাদের যুব সমাজ এগিয়ে চলেছে। আমাদের তরুণ সমাজ অত্যন্ত পরিশ্রমী, কর্মঠ, দেশ প্রেমিক। একদিন আমাদের মাঝে সৎ নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক ও নিবেদিত নেতৃত্ব আসবেÑ যার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।