Bangladesh reached a new economic level

অসাধারণ উচ্চতায় বাংলাদেশ : বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় তের খাত

বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক আকারে এখন চলেছে। গত ২২ মে,২০২১ সাল। দেশে মোট করোনা আক্রান্ত ১০২৮ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৮ জন। গোটা বিশ্বে আজ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮১৮ জন, আক্রান্ত ১৬ কোটি ৭০লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৪কোটি ৮০ লক্ষ ৪৩ হাজার ২১জন।
পৃথিবী আজ এক অদৃশ্য, ভয়ানক ‘করোনা’ ভাইরাস নামক মানব নাশক শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত। প্রতিদিন মানুষ তাদের জীবন হারাচ্ছে করোনা আক্রমণে। আজও কোন প্রতিশোধক টিকা সম্পুর্ণরূপে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। চেষ্টা চলেছে দেশে দেশে। বিশেষ করে উন্নত দেশসমূহ টিকা আবিষ্কারে তুমুল প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত। হয়তো একদিন তা হবে। তবে কবে হবে তা কেউ এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
কিন্তু পৃথিবী থেমে নেই। পৃথিবীর অর্থনৈতিক চাকা ও চলেছে সমান তালে। প্রতিটি দেশ নিজ নিজ চেষ্টায় দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার অবিরাম চেষ্টায় রত। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ভাল ফলাফল দেখাচ্ছে।


বাংলাদেশ আয়তনে বেশ ছোট কিন্তু ঘন বসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার সত্তে¡ও নানা সমস্যার মধ্যে থেকে তার সীমিত সাধ্য নিয়ে ১৩টি ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে চমৎকার অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। উক্ত খাতসমূহে আমাদের দেশ বিশ্বের ১০টি দেশের তালিকায় স্থান করতে সক্ষম হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্য ও অন্য কিছু খাতে সাহায্যসহ কষ্ট করে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।


এমন অবস্থান তৈরি করতে ১৯৭১ সাল পর থেকে প্রত্যেক সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত যেমন ভুমিকা রেখেছে, তেমনি উদ্যমী সাধারণ মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশী। আবার আমাদের দেশের শিল্প উদ্যোক্তাগণ শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে দেশের বেসরকারি নির্ভর অর্থনীতি। এভাবে সবার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতির যে উত্থান ঘটেছে, তা আজ চোখ বড় করে দেখছে বিশ্ববাসী। কিছু কিছু খাতে বাংলাদেশ চীন ও ভারতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।


ভারতের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু গত ৫ই এপ্রিল ’২১ এক নিবন্ধে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য থেকে শেখার আছে।’ তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের উত্থান মানে একই সঙ্গে সুচিন্তিত পরিকল্পনা সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগানোর এক গল্প। দেশটির সফলতা অর্জনে প্রগতিশীল বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) বড় অবদান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাম হলো ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুস।’


জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি ((আইসিটি) বিভাগ এর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ১৩টি খাতে পৃথিবীর শীর্ষ দশের তালিকায় অবস্থান করছে।


১. ইলিশে প্রথম :
সারা বিশ্বে মোট উৎপাদিত ইলেশে;র ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে হচ্ছে, যার পরিমাণ ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টন। আমাদের দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করে ৭ লক্ষ টন করা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা বলেন। চার বছর পূর্বে বিশ্বে বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদনের হিস্যা ছিল ৬৫ শতাংশ। ইলিশ মাছ উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয়, মিয়ানমার তৃতীয অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়া ইরান, ইরাক, কুয়েত ও পাকিস্তানে সামান্য পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।


২. পাট রপ্তানিতে প্রথম:
‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাট বাংলাদেশে উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয স্থান দখল করে আছে। মোট পাট দেশে উৎপাদিত হয় ১৩ লক্ষ ৪৫ হাজার টন, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪২ শতাংশ। প্রায় ২০ লক্ষ টন উৎপাদন করে ভারত বিশ্বে প্রথম। বিশ্বের ৫৫ শতাংশ পাট ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে। ৪৫ হাজার টন উৎপাদন করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন।
কিন্তু পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম। বাংলাদেশ পাট থেকে প্রায় ২৮৫ রকমের পণ্য তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর রপ্তানি করছে।


৩. তৈরি পোশাকে দ্বিতীয়:
তৈরী পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মৌলিক চালিকা শক্তি। বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ২ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পৃথিবীতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রথম হচ্ছে চীন। চীনের রপ্তানির হিস্যা হচ্ছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। তাদের রপ্তানির অংশ হচ্ছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।


৪. কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় :
বিশ্বের মোট কাঁঠাল উৎপাদিত হয় ৩৭ লক্ষ টন। কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ১০ লক্ষ টন। ১৮ লক্ষ টন কাঁঠাল উৎপাদন করে বিশ্বে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করে আছে- ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।


৫. আউটসোর্সিংয়ে দ্বিতীয় :
আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা ফ্রিল্যান্স বা আউটসোর্সিংকে বর্তমানে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এগিয়ে এসেছে। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে, সেই কাজ শেষ করে অনলাইনের মধ্যে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং সংখ্যা ৬ লক্ষ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। এই কারণে বাংলাদেশ এই খাতে দ্বিতীয অবস্থানে রয়েছে। ভারত এই খাতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।


৬. ছাগলের দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয় :
২০১৪ সালে ভারতের বিজিপি সরকার ক্ষমতা আসার পর ভারত বাংলাদেশ গরু ছাগল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আমাদের যুব সমাজ ছাগল ও গরু পালনে এগিয়ে আসে। অসংখ্য খামার দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হয়। মানুষ ঘরে ঘরে গরু ও ছাগল পালন করতে থাকে। আমাদের কোরবানীর সময় প্রচুর গরু ও ছাগলের চাহিদা হয়। ধীরে ধীরে ছাগল পালনে আমরা এগিয়ে আসি। ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ বেশ ভাল করে আসছে। আমাদের দেশে ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন।


৭. সবজিতে তৃতীয় :
বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয অবস্থানে রয়েছে। বছরে মোট সবজি উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টন। এই ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন, দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। বেসরকারি সংস্থাগুলো সারা বছর চাষের উপযোগী হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ উদ্ভাবন এবং তা বাজারজাত করার ফলে সবজি চাষে সাফল্য এসেছে। দেশে বর্তমানে ৬৫০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। এখন অনেক বিদেশী জাতের সবজি ও দেশে পাওয়া যায়। যা এক সময়ে আমদানী করতে হতো। এই সবজি চাষের সঙ্গে দেশের প্রায় ১ কোটি ৬২ লক্ষ কৃষক পরিবার জড়িত। বিরাট একটি জনশক্তি এই খাতে কর্মে নিয়োজিত।


৮. মিঠাপানির মাছে তৃতীয় :
মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে । নদ-নদী আমাদের প্রায় ভরাট। নদী প্রবাহ নাই। ৫৪টি নদী আজ ভারতের আক্রমণে শিকার। নদী পানি নেই। তারপরও এফএওর মতে দেশে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে ১১ শতাংশ নিয়ে চীন প্রথম, ১৪ শতাংশ নিয়ে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
এফএও জানাচ্ছে, ২০২২ সালে নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে সাফল্য অর্জন করবে তাতে বাংলাদেশ হচ্ছে প্রথম। তারপর থাকবে থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৩ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ।


৯. ধান উৎপাদনে চতুর্থ :
বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ধান থেকে চাল হয়, চাল থেকে ভাত হয়। তাই মাছে ভাতে বাঙালি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় মোট জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৭ কোটি, তখন দেশে ভয়ানক খাদ্য সংকট ছিল। ১৯৭৪ সালে দেশে খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। আর বাংলাদেশে আবাদি জমি অনেক কমে যাওয়ার পরও ধান উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ধান উৎপন্ন হয় ৫ কোটি ২৬ লক্ষ টন, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। চীন ১৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টন চাল উৎপন্ন করে দ্বিতীয় স্থান। ভারত ১১ কোটি ৬৪ লক্ষ টন উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে।


বিগত ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বর্তমান সরকারের কৃষি অনুকুল নীতি এবং প্রনোদনায় কৃষক ও কৃষিবিদদের মিলিত প্রচেষ্টা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অবদান রাখছে। অধিক জনঘনত্বের এ দেশে জমি কমেছে। তারপরও কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধি বিশ্বের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার।


১০. আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ :
আলু উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ ষষ্ঠ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার এক বছর পূর্বে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৯ লক্ষ টন। বিগত ৫০ বছরে আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ গুণ। এফএওর হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ টন। চীন ৯ কোটি ১৪ লক্ষ টন আলু উৎপাদন করে বিশ্বে প্রথম। ভারত ৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টন আলু উৎপাদন করে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।


১১. প্রবাসী আয়ে অষ্টম :
জনবহুল দেশ হিসাবে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় হওয়া ছিল আরও অনেক বেশী। কিন্তু অদক্ষ, আদা দক্ষ প্রবাসীদের আয় হয় কম। সেই ঘটনার ফলে আমাদের স্থান পৃথিবীর দেশ সমূহের মধ্যে অষ্টম।
বিগত অর্থ বছরে প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে অর্থ এসেছে ২ হাজার কোটি ডলার। একই বছর ভারত অর্জন করেছে ৭ হাজার ৮ শত কোটি ডলার। তাতে ভারত প্রথম। চীন ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার আয় করে স্থান করে নিয়েছে দ্বিতীয়।


১২. আমে অষ্টম স্থান
বাংলাদেশে বছরে আম উৎপাদিত হয় ২৪ লক্ষ টন। বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ অষ্টম্ ১০ বছর পূর্বে আম উৎপাদনে দশম স্থান ছিল, এই উৎপাদিত ্আম ছিল ২২ লক্ষ ৫৫ হাজার টন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সপ্তম স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছিল। দেড় কোটি টন উৎপাদ;ন নিয়ে বিশ্বে ভারত প্রথম। আম উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন।
বর্তমানে সারা দেশেই আমের চাষ হয়। এমন কি ঢাকা শহরেও কিছু কিছু আম আছে ও আম ফল উৎপাদিত হয়। দেশের প্রধান আমের চাষ হচ্ছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই সকল অঞ্চলে হিম সাগর, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আম বেশী উৎপাদিত হয়। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আ¤্রপালি আমের চাষ হচ্ছে।


১৩. পেয়ারা চাষে অষ্টম
বাংলাদেশ পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম। বছরে ১০ লক্ষ ৪৭ হাজার টন পেয়ারা উৎপন্ন হয়। ভারত পেয়ারা উৎপাদন করছে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টন। প্রথম অবস্থানে ভারত। ৪৪ লক্ষ টন উৎপাদন করে চীন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এক সময় শুধু দেশীয় জাতের পেয়ারা উৎপন্ন হতো। বর্তমানে থাই জাতের ও কাজি পেয়ারা বিপ্লব ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিম্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে ১০ প্রজাতির পেয়ারা উদ্ভাবিত হয়েছে। তা দেশে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম জেলাগুলোতে মূলত পেয়ারা অধিক উৎপন্ন হয়। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা গুলিতে ও বেশ পেয়ারার চাষ হচ্ছে।


“বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সাফল্য থেকে শেখার আছে” কৌশিক বসুর এই বক্তব্য ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে আরও বেশী কৌশলী, বিজ্ঞানী, পরিশ্রমী ও উদ্যোগী হতে হবে।
দেশের কৃষি ও কৃষি জাত পণ্যের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার নানা পকিল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। করোনাকালে যে কোন দেশের কৃষি ও কৃষি পণ্য উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে দেশ খাদ্য সহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এবং দ্রæত অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন ও ভারত এই ক্ষেত্রে বিশ্বে বড় উদাহরণ। বেশ কিছু উদ্যোগের প্রতি সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বেশী বেশী নজর দেয়া প্রয়োজন।


একঃ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে দিন গুলিতে আরও বেশী এগিয়ে যাবে। বর্তমান করোনাকালিন বিশ্বসহ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। তবুও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি খাতে আমাদের অগ্রগতি বেশ দৃশ্যমান। তেরটি খাতের মধ্যে অধিকাংশ খাত কৃষিভিত্তিক। আগামিতে সরকার কৃষি ভিত্তিক খাত সমূহকে আরও বেশী নীতি সহযোগিতা প্রদান করবেন। বিশেষ করে জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ অনেক বেশী বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষি পণ্যের সংরক্ষণ, বিপণন ও প্রসেসের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে এই নীতি, কর, ভ্যাট ও ঋণ দাদনে অগ্রাধিকার দিয়ে যেতে হবে।


দুইঃ আমাদের বড় আয়ের ক্ষেত্র এখনও তৈরি পোশাক শিল্পখাত। দেশের পুরো অর্থনীতির চাকা এখনও এই খাত নির্ভর। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। তাছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও বেশী শক্তিশালী করার জন্য এই খাতের বড় আকারে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড শিল্প স্থাপন খুবই জরুরি। বিশেষ করে তুলা উৎপাদন ও তুলা আমদানী ক্ষেত্রে স্পিনিং খাতকে আরও বেশী নীতি, কর, ভ্যাট সহযোগীতা প্রয়োজন। নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সবরাহ নিশ্চিত করা দরকার।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমদানি রপ্তানি ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগীতা প্রয়োজন। এখন এমন অবস্থা; হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি মাল পেতে দুই মাসেরও বেশী সময় লেগে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জটের ফলে শিল্পখাত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনামের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগীতায় অনেক ক্ষেত্রে হেরে যাচ্ছি।
তেমনি বেনাপোল স্থল বন্দরের অবস্থাও খুবই খারাপ। যে মাল এক সপ্তাহে ভারত থেকে বেনাপোলে আমরা পেতাম, এখন তা দুই মাসের বেশী সময় লাগছে। বিষয়টি তলিয়ে দেখা খুবই জরুরি। দ্রæত মালামাল আমদাানি রপ্তানি শিল্পে উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


তিনঃ তৈরি পোশাক শিল্পের পর আমরা প্রবাসীদের আয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অদক্ষ ও আদা দক্ষ প্রবাসী বিদেশে বেশী হওয়ায় আমাদের আয় কম। দক্ষ প্রবাসী হলে বর্তমানের তুলনায় ১০ গুণ বেশী আয় সম্ভব হবে। তাই এই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারকে বড় আকারে পরিকল্পনা ও বাজেট নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে ভকেশনাল ইন্সটিটিউট ও ১টি করে পলিটেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করতে হবে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। জেলা জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বন্ধ করতে হবে। বরং জনশক্তিকে কর্র্মের হাতিয়ার বানানোর জন্য প্রতিটি উপজেলায় টেকনিকেল স্কুল, ভকেশনাল ইন্সটিটিউট, পলিটেকনিক্যাল কলেজ, আইটি ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণী পাশ করে পেশাগত দক্ষতার জন্য এই সকল প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। সাধারণ বিএ, এমএ পাশ যুবক ও যুবতী দেশের অতিরিক্ত বোঝা হয়ে যাচ্ছে। শুধু গবেষণার জন্য সীমিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ রাখলে চলবে।


চারঃ পৃথিবী আজ আইটি নির্র্ভর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে করোনা আক্রমণের ফলে সব ধরনের কার্যক্রম আইটি নির্ভর হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন ফ্লিল্যান্স বা আউটসোসিংকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। তাই এই খাতে আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি। আমাদের দেশে প্রচুর শিক্ষিত বেকার। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী ভারত এই খাতে অধিক অর্থ উপার্জন করে প্রথম স্থান দখল করে আছে। আমরাও পারি। তাই সরকারকে এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভ‚মিকা গ্রহণ করতে হবে।


আইটি ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের প্রতিটি উপজেলায় ট্রেনিং ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে হবে। এই সকল কেন্দ্র থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে এক বছর দুই বছর ও তিন বছর মেয়াদি কোর্স গ্রহণ করে তরুণ-তরুণীগণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। দেশে ও বিদেশে তাদের সহজে চাকুরীও হবে। নিজে নিজে ব্যবসা করতে পারবে। অন্যদিকে বিশ্ব^বিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেকার সংখ্যা বৃদ্ধির কুফল থেকে আমরা দায়মুক্ত হবো। এই জন্য সরকারকে জাতীয় বাজেটের বিরাট একটি অংশ বাজেটে রাখতে হবে। এই বিনিয়োগ হবে দেশের অর্থনীতির জন্য সত্যিকার বিনিয়োগ। সাহায্য, সহযোগীতার চেয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে। শীর্ষ ১৩ খাতের এই অর্জন আগামীতে আরও বেশী খাতে আমাদের দেশ গৌরব ছিনিয়ে আনতে পারবে এই আশা করি।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments