Modern Bangladesh 2041

রূপকল্প ২০৪১: উন্নত দেশে বাংলাদেশ

বর্তমান সরকার দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে ২০৪১ সালকে সরকার বিশেষ বিবেচনায় নিয়েছে। রূপকল্প-২০৪১ নামক দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) কর্তৃক অনুমোদন ইতিমধ্যে দিয়েছে। বিগত ২৫ ফেব্রæয়ারি ২০২০ ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবে রূপায়নঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ উক্ত সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

আমরা ২০২১ সালে পদার্পণ করেছি। কিন্তু এই বিশাল পরিকল্পনা নিয়ে গত একটি বছর তেমন কোন আলোচনা হয় নাই। ২০২০ সালে করোনার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সকলের অগোচরে থেকে যায়। আগামীতে নিশ্চয় রূপকল্প-২০৪১ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হবে।হবে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ প্রভৃতি। তার মাধ্যমে এই বিশাল পরিকল্পনার অনেক বর্ধন হবে। অনেক কিছুর পরিবর্তন আসবে। তত্ত¡-তথ্য দিয়ে দেখানো হবে-এর শক্তি, দুর্বলতা, সম্ভাবনার দিক। কিন্তু আমরাও বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি বুঝার চেষ্টা করি। কিছু কিছু আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করি ১৯৮ পৃষ্ঠার এ পরিকল্পনায় কি আছে, কিভাবে রয়েছে!
রূপকল্প-২০৪১ এর মূল ভিত্তিমূলে দুইটি বিষয় প্রধান। একঃ ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে মাথাপিছু মানুষের আয় হবে ১২,৫০০ ডলারের অধিক, দুইঃ বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা যেখানে দারিদ্র্যতা সুদূর অতীতের ঘটনা। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে আগামী দু’দশকে পরিবর্তন আসবে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যবসার ধরণ এবং কর্ম সম্পাদন পদ্ধতিতে। ধারাবাহিকভাবে এ পরিবর্তনের সুফল সমাজের সর্বস্তরে সুষম বন্টনের উপর জোর দেয়া হয়েছে এ ‘ভিশন দলিল’ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বর্ণনা করা হয়েছে মোট ১২টি অধ্যায়ে।
রূপকল্প-২০৪১ এ প্রথম অধ্যায় রয়েছে একটি উচ্চ আয় অর্থনীতি অভিমুখে’ শীর্ষক শিরোনাম। প্রথম অধ্যায়ে ‘উদ্দীপনায় সূচনা’ হিসাবে ধরা হয়েছে জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, দুনীর্তি ও শোষণহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা’কে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামী দুই দশকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৯.০২ শতাংশ হারে। প্রবৃদ্ধির এই হারে বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ২০৩১ সালে হবে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। তখন মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ৩,২৭১ ডলার। ২০৪১ সালে তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২১ কোটি ৩ লক্ষ। যাদের মাথা পিছু আয় হবে ১২,৫০০ ডলার। চরম দরিদ্র লোক, যাদের দৈনিক আয় থাকবে ২.১৬ ডলার কম এমন লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে ০.৬৮ শতাংশে। আর যারা দরিদ্র তাদের দৈনিক আয় থাকবে ৩.২০ ডলার, এমন লোকের সংখ্যা হবে ২.৫৯ শতাংশ। বলা যায়, প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার মত ঘটনা। এই টার্গেট অর্জনের জন্য রফতানিমুখি শিল্পায়ন, কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নগরের বিস্তার, দক্ষ জ¦ালানি ও অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি তৈরি প্রভৃতি কৌশলগত কাজ করার অস্বীকার করা হয়েছে।
ভিশন ২০৪১ এর দ্বিতীয় অধ্যায় রয়েছে, দেশের ‘প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার। এ পরিকল্পনা নির্ভর করছে সুশাসন, গণতন্ত্রায়ন, বিকেন্দ্রীকরণ এবং সক্ষমতা অর্জনÑএ চারটি মৌলিক ভিত্তির উপর। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান উন্নত করাকে এখানে দেখা হচ্ছে।
সময়ের আলোচিত ‘ডযু হধঃরড়হং ঋধরষ’ বইয়ে টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান’Ñ এর প্রয়োজনীতার কথা বার বার বলা হয়েছে। রূপকল্প ২০৪১ ঠিক তেমনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনভাবে, সততা ও দক্ষতার’ সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তখনই দেশে সুশাসন ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
অধ্যায় তিন-এর শিরোনাম ‘একটি উচ্চ আয় অর্থনীতির দিকে ত্বরান্বিত অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য সামষ্ঠিক অর্থনৈতিক কাঠামো।’ আগামী দুই দশকের মধ্যে ‘সামষ্ঠিক অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়ামক’ যেমনঃ প্রকৃত খাত (জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগ, জনসংখ্যা ইত্যাদিÑ আর্থিক খাত (রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন ব্যয়), ঋণ সংশ্লিষ্ট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ), বহিঃস্থ অর্থনীতি (রেমিটেন্স প্রবাহ, আমদানি রফতানি, বিনিময় হার, কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স), মুদ্রা সংশ্লিষ্ট (ব্রডমানি, নিট সম্পদ) এসবের বছর ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থির করাÑ হয়েছে এই অধ্যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ করের বর্তমান অবদান মাত্র ৩০ শতাংশ। ২০৪১ সালে তা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
২০৪১ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে জিডিপির ৪৬.৮৮ শতাংশ, যা বর্তমানে রয়েছে ৩২.৭৬ শতাংশ। রফতানি আয় ২০২১ সালের কাঙ্খিত ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৪১ সালে দাঁড়াবে ৩০০ বিলিয়ন ডলার।
ড. আকবর আলী খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গত ৪৯ বছরে ‘দারিদ্র্যের অনেক চিহ্ন বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে।’ এরই ধারাবাহিকতায়, আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ‘একটি দারিদ্র্যশূন্য দেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে ‘ভিশন-২০৪১’ এর চতুর্থ অধ্যায়ে। ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’, এসডিজি এর মূলনীতিকে গ্রহণ করা হয়েছে অনুপ্রেরণা হিসেবে। আগামী দিনের শ্রমবাজার হবে দক্ষতা নির্ভর। তাই দ্রæত পরিবর্তনশীল আগামীর শ্রমবাজার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে। সমাজের আয় বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণ বাজারের উন্নয়ন, সম্পদের সুষম বন্টন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধিকরণই হবে আগামী দিনের সরকারÑ যন্ত্রের অন্যতম করণীয় কাজ।
২০১৯ সালের ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ সূচক ০.৬১৪ স্কোর নিয়ে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ১৩৫তম। এ সূচকের উত্তরণ ঘটানো জরুরি। ‘মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন এবং জ্যামিতিক লভ্যাংশ আহরণ’ শীর্ষক পঞ্চম অধ্যায়ে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারÑএ সবের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ ২০১৮ সালে ছিল জিডিপির মাত্র ২.০ ও ০.৭৫ শতাংশ, ২০৪১ সালে এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৪.০ ও ২.০ শতাংশ।
বিশে^র উন্নত দেশ সমূহে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৭০-৮০ শতাংশ। ২০১৯ সালে আমাদের দেশে সেবাখাতের অবদান মাত্র ৫১.৮২ শতাংশ। উন্নতির পথে আমাদের অর্থনীতির রূপান্তর ঘটবে কৃষি থেকে শিল্পখাতে। এই জন্য প্রয়োজন হবে আন্তঃসম্পর্কিত বাণিজ্য ও শিল্পনীতির সমন্বিত প্রয়োগ। এ লক্ষ্যে ‘একটি ভবিষ্যদ্বাণী বিশ^ব্যবস্থার শিল্পায়ন, রফতানি বহুমুখিকরণ ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, শ্রমশক্তির দক্ষতা মান উন্নয়ন, উৎপাদনের সব পর্যায়ে উদ্ভাবন বিস্তারে গবেষণা, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতিকরণ, পিপিপির মাধ্যমে অর্থের জোগান, জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিতকরণের।
বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানীর খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। ২০১০ সালে ৫,৮২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮,৯৬১ মেগাওয়াট। আগামী বছরগুলোতে দেশে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পাবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৫১,০০০ মেগাওয়াট।
‘একটি উচ্চ আয় দেশের জন্য টেকসই বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী’ শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে বর্ণিত কৌশল মোতাবেক সে বছর ৫৬,৭৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। এ সময়ে বিদ্যুৎ খাতে যুক্ত হবে পারমাণবিক প্রযুক্তি। ২০৪১ সালে জ¦ালানী বিন্যাস হবে ৩৫ শতাংশ গ্যাস, ৩৫ শতাংশ কয়লা, ১২ শতাংশ পারমাণবিক, ১ শতাংশ তরল তেল এবং ১ শতাংশ জলীয়। বাকি ১৬ শতাংশ করতে হবে আমদানী।
২০৪১ সালে একটি ‘আইসিটি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা লালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্ভাবনমুখি অর্থনীতি সৃজনÑএর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এ অধ্যায়ে। উক্ত অধ্যায়ে ওয়াদা করা হয়েছে বর্তমানের ‘নাগরিকের আইসিটি অভিগম্যতা’র স্কোর ৩৫.৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৪১ সালে তা দাঁড়াবে ৮৫-তে উন্নীত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশে^ ২০তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
দশম অধ্যায়ে শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘অব্যাহত দ্রæত প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো বিনির্মাণ’। এই অধ্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী দিনে রফতানী ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য দরকার হবে ভারী যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানীর। প্রয়োজন হবে উৎপাদিত পণ্য দ্রæত ও সময়মতো আন্তঃপ্রবাহ এবং বহিঃবাংলাদেশ যোগাযোগ। নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমআরটি ও মেট্রোরেলের সংযোগ, মহাসড়ক করিডোরের বর্তমান গড় প্রতি ২৫-৩০ কি.মি./ঘন্টা থেকে ৮০-১০০ কি. মি./ঘন্টায় উন্নীতকরণ, সব রেললাইনকে ব্রডগেজ সিষ্টেমে উন্নীতকরণ ও আধুনিক ট্রাফিক সিগনাল, স্থাপন, জাহাজের ‘নোঙর দিবস’ ও ‘গ্যাংশিফট’Ñএর উন্নয়ন, ড্রেজিং, নদীশাসন ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নাব্যতার উন্নতিসাধন, বিমান বন্দরে অতিরিক্ত রানওয়ে ও ট্র্যাক্সিওয়ে স্থাপন, মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে আগামী দু’দশক ধরে মাশুল আদায় প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।
নগরায়ণ ও উন্নয়ন অত্যন্ত গভীর ও ইতিবাচকভাবে সম্পর্কযুক্ত। উচ্চ অর্থনৈতিক ঘনত্বের কারণে শহরাঞ্চলসমূহই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করবে। উন্নত দেশের মত আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশও মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ শহরে বাস করবে।
সেই জন্য একটি উচ্চ আয় অর্থনীতিতে নগর পরিবর্তনশীলতার ব্যবস্থা শীর্ষক শিরোনাম একাদশ অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নীতির অধীনে গ্রামাঞ্চলে শহরের সকল সুবিধা প্রসারিত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ঢাকা কেন্দ্রীক নগরায়ণ না করে প্রত্যেকটি জেলাকে কেন্দ্র করে নগরীর উন্নয়ন করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। নগরের বায়ুর মান, গণপরিবহন, ট্রাফিক, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে।
দ্বাদশ অধ্যায়ে ‘একটি গতিশীল প্রাণবন্ত ব-দ্বীপ টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ ও জলবায়ু সহিষ্ণু জাতি বিনির্মাণ এবং সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা উন্মোচন’ শীর্ষক শিরোনামে জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। জোয়ারের স্ফীতি, লবণাক্ততা, বন্যা, নদীভাঙ্গন, সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস বাংলাদেশের নিয়মিত বৈশিষ্ট্য, যা উন্নয়নের অন্তরায়। প্রণীতি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্প-২১০০-এর আওতায় সুনীল অর্থনৈতিক সম্পদ (মৎস্য, সিউিইড, খনিজ সম্পদ) আহরণ করতে প্রধান্য দেয়া হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়। ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ নিঃসন্দেহে একটি সুলিখিত, উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন দলিল। খোলা চোখে তাতে হয়তো কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়বে। আজ থেকে বিশ বছর পরে হয়তো কিছু চাওয়া অধরা থেকে যাবে। সম্মানিত অর্থনীতিবিদগণ হয়তো তাতে সমালোচনা করবেন, নানা প্রশ্ন করবেন, হবে নানা ভাবে আত্মসমালোচনা।
এসব নিয়ে আজ না হয় লিখলাম না। আমরা আত্মবিম্বাসী হই-বিগত দিনের অর্জন দেখে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভৃতি দেখে আমাদের বিশ^াস অনেক বেশী দৃঢ় হয়।

‘২০২১-২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ মূলত এক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ একটি কৌশলগত বিবৃতি এবং তা বাস্তবায়নের পথ-নকশা হিসাবে কাজ করবে। এই ‘পথ-নকশা’র পথ ধরে আমরা ২০৪১ সালে অর্জন করবো উন্নত, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলা।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

4 5 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Shakur
Shakur
1 year ago

Good