ক্ষুদ্র অথচ অদৃশ্য একটি ভাইরাস আজ গোটা বিশ্বকে সম্পূর্ণরূপে স্থবির, অচল করে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ কর্তৃক মৃত্যুবরণ করছে। আজকের এই দিনে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস কর্তৃক বিশ্বে মৃত্যুবরণ করেন ৫৩৪,১৭৬ জন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৪১১,২১১ জন মোট সুস্থ হয়েছেন ৬,৪৫০,৯৫৭ জন। বাংলাদেশে করোনা কর্তৃক মৃত্যুর সংখ্যা ২,০৫২ জন,মোট আক্রান্তের সংখ্যা১৬২,৪১৭ জন,মোট সুস্থ হয়েছেন ৭২,৬২৫জন (সূত্র বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, তারিখ ৫ জুলাই’২০)
বিগত নভেম্বর ‘১৯ চীন দেশের উহান প্রদেশে প্রথম এই করোনা রোগী সনাক্ত হয়। ধীরে ধীরে চীনের উহান প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস পৃথিবীর ২১৩টি দেশের জনগণ আক্রান্ত হন। এইটি অদৃশ্য ভাইরাস। মানুষ একমাত্র এর বাহন। মানুষের হাচি, কাশি ও স্পর্শের ফলে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়। এই ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই। কোন নির্দিষ্ট ঔষধ ও আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশের বৈজ্ঞানিকেরা আবিষ্কার করতে পারে নাই। দেশে দেশে বিজ্ঞানীরা রাত দিন ভ্যাকসিন, ঔষধ আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের দেহে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে দেশে দেশে আসবে। তখন হয়তো আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো।
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সকল দেশ এখন আর পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় নাই। দেশে দেশে বিমান, জল ও স্থল যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। বিশ্বের সকল দেশের বিমান চলাচল এখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। মানুষ মানুষে এখন আর যোগাযোগ নাই। শুধু সম্পর্ক রয়েছে মোবাইল, ইন্টারনেট এর মাধ্যমে, দেশে দেশে যোগাযোগ রয়েছে। পৃথিবীর সকল বিমানবন্দর এখন আর পূর্বের জনসমাগম নাই। মানুষ শূন্য বিমানবন্দরগুলো। নৌ যোগাযোগও সম্পূর্ণ বন্ধ।
চরিত্রের উপর করোনার প্রভাব
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মানুষের মনের মধ্যে একটি ভীতি বেশ ভালভাবে বিকাশ লাভ করছে। সকল ধর্মের মানুষ মনে করছে করোনা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে প্রদত্ত মহামারী। ইসলামের দৃষ্টিতে করোনা আল্লাহ প্রদত্ত মানুষকে সংশোধন করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি বড় সতর্ক বার্তা। পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদা ২১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন- “কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।” তাই অগণিত মুসলিম বিশ্বব্যাপী তওবা করে আল্লাহ পাকের নিকট রাতদিন প্রার্থনা করছে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন যখন কোথাও মহামারী দেখা দেবে, তোমরা ঐ স্থানে যাবে না, এবং ঐ স্থান থেকে অন্য স্থানেও কেউ যাবে না। তিনি আমাদেরকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদেরকে চলতে হবে, যাতে মহামারী জনসাধারণের মধ্যে সংক্রামিত হতে না পারে। হাদীস শরীফ- আবু দাউদ, তিরমিযী উল্লেখ করা হয়েছে, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন ছাইয়্যি ইল আসক্বাম। অর্থ হচ্ছে “হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট ধবল, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
খ্রিস্টান, ইহুদী প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থেও অনুরূপ সতর্ক বার্তা ও ঘটনা বর্ণনা দিয়ে মানব জাতিকে সতর্ক করা হয়েছে। ইতিহাসে অনেক ঘটনা রয়েছে কোন কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায়কে আল্লাহ পাক ধ্বংস করে দিয়ে মানবতাকে সতর্ক করেছেন।
কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এই করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব মহামারীরূপে চিহ্নিত করে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন। চেষ্টাও করতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে উপরে উল্লিখিত হাদীস অনুযায়ী দোয়া ও করতে হবে।
করোনা থেকে বাঁচার জন্য এখন আমরা নিয়মিত কয়েকবার করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করছি, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করছি, মুখে মাক্স ব্যবহার করছি, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছি, পিপিই ব্যবহার করছি, কোন সভা, সেমিনার হাজির হচ্ছি না। এমনকি নামাজ পড়ছি তিন ফিট দূরত্ব রেখে।
করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধির এই কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে। নতুবা করোনা আক্রমণ থেকে আমরা নিজকে রক্ষা করায় কোন বিকল্প নাই।
করোনা পূর্বে আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দিয়ে হ্যান্ডশ্যাক করে মোলাকাত করতাম। কিন্তু এখন আমরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে মিশতে পারছি না। তাই মনের দিক থেকে আমরা যেন একাকী হয়ে পড়ছি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব যে কোন সময়ে আমরা মিলিত হতাম। গল্প-গুজব করতাম, একে অপরের খোঁজ খবর নিতাম করোনার কারণে আমরা এখন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছি না। আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যে আমাদের যেন ফাটল ধরেছে। একাকী জীবন যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সকল দিক দিয়ে আমরা একাকী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এমনকি মসজিদ, মন্দির, গির্জায় আমরা অনেকদিন যেতে পারি নাই। এখনও মসজিদ, মন্দিরে গির্জায় দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ বা প্রার্থনা করতে হচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা এখন যেন দুর্বল হয়ে পড়েছি। সব কিছু যেন আমাদের জীবনকে থেকে দূরে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়িক জীবনে
জীবন ও জীবিকা এই নিয়ে করোনা মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবন ও জীবিকার প্রশ্নের দ্বন্দ্বে সারা বিশ্ব দিশেহারা। সকল ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য দেশে ও বিদেশে স্থবির হয়ে পড়ে। জীবন রক্ষায় নিজ বাড়িতে অবস্থানের ফলে ব্যক্তি জীবন, ব্যবসায়িক জীবন অচল হয়ে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একান্ত প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে চালু রয়েছে। বিশেষ করে ঔষধ শিল্প, খাদ্য পণ্য বিষয়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান কিছুটা চালু রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে বন্ধ রয়েছে। মানসিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশার চিন্তায় ব্যবসায়িক ব্যক্তিদের জীবন চেতনায় পরিবর্তন লক্ষণীয়।
তৈরী পোশাক শিল্প ও বস্ত্রখাত
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উপর নির্ভরশীল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৭৬ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প থেকে আসে। বস্ত্রখাতের তিনটি ইউনিট অর্থাৎ স্পিনিং খাত, উইভিং খাত এবং ডাইং ফিনিশিং খাত। প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতে নিয়োজিত। নারী সদস্যের সংখ্যা অধিক। করোনা আক্রান্তের পর তৈরি পোশাক সহ বস্ত্রখাতের তিনটি খাত বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের পর বিদেশি ক্রেতাগণ তৈরি পোশাক শিল্পের আদেশ বাতিল করেন। কিছু রপ্তানি আদেশ স্থগিত করেন। পরবর্তী নতুন কোন রপ্তানি আদেশ থেকে ক্রেতাগণ বিরত থাকেন। যেহেতু ইউরোপ, আমেরিকাসহ সকল উন্নত দেশের সকল শপিংমল দোকান বন্ধ হয়ে যায়। কোন ক্রেতা রইল না। রাস্তা শূন্য সারা বিশ্ব নিশ্চুপ। তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ না থাকার কারণে বস্ত্রখাতের তিনটি খাতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়। অনেক কারখানা নিয়মিত বেতন ভাতা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। যদিও সরকার ২ শতাংশ হারে ঋণ সুবিধা ঘোষণা করে। কিন্তু নিয়মনীতির জটিলতার জন্য অনেক কারখানার মালকগণ ২ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে শ্রমিকদের বেতন ভাতা জোগার করতে ব্যর্থ হয়। তাই শ্রমিক আন্দোলনও চলছে।
করোনা পরবর্তী তৈরি পোশাক শিল্প, বস্ত্র খাতের স্পিনিং, উইভিং খাত ও ডাইং ফিনিশিং খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আদেশ কম পাবে। তাই অনেক ছোট ছোট তৈরি পোশাক শিল্পবন্ধ হয়ে পড়বে। অনুরূপভাবে বস্ত্র খাতের তিনটি খাত নানা আর্থিক সঙ্কটের কারণে অসুবিধার সম্মুখীন হবে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্ত্রখাতের জন্য নীতি ও আথিক সংযোগ আগামী ৫ বছর তৈরি করতে হবে। অগ্রিম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। ব্যাংকের সুদের হার নিম্নে নিয়ে আসতে হবে। ৫ শতাংশ হারে সুদের হার নির্ধারণ করা দরকার। সামাজিক অস্থরিতা দূর করতে হলে তৈরি পোশাকসহ বস্ত্রখাতের সহযোগিতা চালিয়ে যেতে হবে। এই খাতে প্রায় ৭৫ লক্ষ শ্রমিক জড়িত। তার সঙ্গে ৭৫ লক্ষ পরিবার। বিশাল এই জনশক্তির মধ্যে শান্তি বজায় না রাখলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তৈরি হতে পারে।
জনশক্তি রপ্তানি
করোনা ভাইরাস আক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে সকল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ কর্মকাÐ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী আমাদের দেশে ফেরত এসেছেন। আগামীতে আরও বহু প্রবাসী ফেরত আসবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত জনশক্তি রপ্তানি। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর সকল দেশে শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে। চাকরি চ্যুত হয়ে ফেরত আসছে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী। এদিকে প্রতি বছর আমাদের কর্মক্ষম শ্রমশক্তি প্রায় ২৫ লক্ষের অধিকর। ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে। দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিত বিশেষ বিষয়ে কর্মীর প্রয়োজন হবে বেশী। তাই বাংলাদেশ আগামীতে বিদেশে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। জরুরী, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী তিন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা প্রবাসীদের জন্য গ্রহণ করতে হবে। যে সকল প্রবাসী ভাই দেশে ফিরে বেকার রয়েছেন তাদের জন্য সীমিত পর্যায়ে সরল সুদে ব্যাংক ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যারা ব্যবসা করতে পারবেন না বা বিদেশে যেতে চান তাদেরকে দক্ষ করে আবারও বিদেশে প্রেরণের চেষ্টা করতে হবে। যে সকল প্রবাসী বিভিন্ন কাজে দক্ষ তাদেরকে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োগ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। সকল প্রবাসীদের ডাটা ব্যাংক তৈরি করতে হবে। তাতে পরিকল্পনা গ্রহণে সহজ হবে। গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডাটা ব্যাংক তৈরির কাজ অবিলম্বে সরকারকে করা উচিত।
দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে কমপক্ষে একটি করে ভোকেশনাল বা কারিগরী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দক্ষ জনশক্তি তৈরির দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষানীতি পরিবর্তন আনতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাকে সাজাতে হবে। বর্তমান শিক্ষানীতি কার্যকরী বা উপযোগী নয়।
ভ্রমণ, পর্যটন শিক্ষা
করোনা আমাদের সকল ধরনের ভ্রমণ এখন অচল করে দিয়েছে। করোনা কত দিন থাকবে তা বলা মুশকিল। ভ্যাকসিন বের হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের ভ্রমণ সীমিত হয়ে পড়বে। একটি গাড়িতে, একটি বাসে, একটি বিমানে যে পরিমাণ মানুষকে বহন করতো, করোনা পরবর্তী তা ঠিক রাখা যাবে না। সম্ভব হবে না। তাই আমাদের ভ্রমণ খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। যে বিমান ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী বহন করতো, করোনা পরবতী ঐ বিমান বহন করবে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন। তাই খরচ হবে ৪ থেকে ৫ গুণ টিকেটের মূল্য। ব্যয়বহুল হবে বিমান, বাস ও গাড়ি বা ট্রেন ভ্রমণ। অনেক মানুষের পক্ষে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভ্রমণ করতে পারবে না।
তাই পর্যটন শিল্প বিশ্ব জুড়ে হয়ে পড়বে দুর্বল ও অলাভজনক। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ব্যবসাও। বর্তমান হোটেল, রেষ্টুরেন্ট সম্পূর্ণ বন্ধ। করোনা পরবর্তী রেস্টুরেন্টগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে হবে। তাতে যেখানে এক একটি রেষ্টুরেন্টে একশত থেকে দুইশত ক্রেতা বসে খেতে পারতো, এখন তাতে এক সাথে মাত্র ৫০ জন করে বসে খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই ব্যবসা হবে কম। কিন্তু মুল্য বৃদ্ধি পাবে। সকলের পক্ষে অধিক মূল্য দিয়ে রেষ্টুরেন্টে খাওয়া ও সম্ভব হবে না। তাই পর্যটন, ভ্রমণ, হোটেল, বিমান, নৌকা, রেল থেকে সরকারের রাজস্ব আয় অনেক কমে যাবে। অন্যদিকে সরকারকে স্বল্প সুদে এই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
শিক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রম
বাংলাদেশের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বিগত মার্চ ২০ থেকে বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের সকল দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী দেশে ফেরত আসে। অনেক ছাত্রছাত্রী ঐ সকল দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জীবন কাটাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে পারেনি। পৃথিবীর অনেক দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে।
বাংলাদেশে সংসদ টিভি কর্তৃক প্রাইমারী ও হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা অনুষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কিছু কিছু ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে চালু রয়েছে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এখন ঘরে বসে অলস জীবন কাটাচ্ছে। এদিকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা করোনার জন্য স্থগিত রয়েছে। এই সকল লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। তবে অবশেষে ৩১শে মে ২০ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
করোনা আক্রমণের কারণে কিভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের বিধিবিধান মেনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে তার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করে নাই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (টএঈ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনলাইনে শিক্ষা ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে শুরু করেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে কিছু কিছু কার্যক্রম চলেছে। তবে অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বেতন ভাতা সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় কর্মচারীগণ নিয়মিত পাচ্ছেন। তবে অনেক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে পারে নাই। ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের বেতন দেয়া বন্ধ। তাই কর্মকর্তাদেরও বেতন দিতে অক্ষম। করোনা ভ্যাকসিন বের না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালু করা কঠিন হবে।
প্রকৃতির উপর প্রভাব
করোনা আমাদের প্রকৃতিকে তার নিজস্বরূপে সজ্জিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ তার রূপ ধারণ অল্প সময়ের জন্য হলেও করতে সক্ষম হয়েছে। কঠিন নিসরণ হ্রাসের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব পরিবেশ বান্ধব সমাজ তৈরি হয়েছে। আকাশে ধুলাযুক্ত মেঘমালার পরিবর্তে নীল আকাশ আমাদের হৃদয়কে অনেক উদার হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। সূর্য তার নিজস্ব সৌরভে আমাদেরকে আলো দিচ্ছে। সমুদ্র, নদ-নদী প্রকৃতির সুন্দরতম রূপে আমাদের নিজ ফুটে উঠেছে। সমুদ্র, নদ-নদী, মৎস্য পশু পাখি জঙ্গলের সকলে তার নিজস্ব পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। করোনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অনবরত ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকাসহ সকল শহরে বৃক্ষরাজি আপন রূপ নিতে করোনা খুব ভালভাবে সহযোগিতা করেছে। সবুজ পাতায় বৃক্ষরাজি আমাদের হৃদয়ের ভাবকে চিন্তাকে আরও বেশী বিকশিত করেছে।
করোনার পরবর্তী স্বাস্থ্যখাতের সব বিশ্ব নেতাদের নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ করে দিয়েছে। কার্বন নির্গমন সহ সকল প্রকার প্রকৃতি বিরোধী কার্যক্রমকে সীমিত করার তাগিদ করোনা আমাদের স্মরণ করে দিয়েছে। আমাদের সমুদ্রকে রক্ষা করতে, আমাদের সমুদ্রের মস্যৎ ও প্রাণীকুলকে লালন করতে হবে, আমাদের বন-জঙ্গলকে বৃদ্ধি ও লালন করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষমালা শহরে শহরে, গ্রামে গ্রামে, পাহাড়ে পাহাড়ে অধিকহারে রোপণ করতে হবে। প্রকৃতিকে প্রকৃত অর্থে আমাদের হৃদয়ে, কাজে, কর্ম পরিকল্পনায় স্থান দিতে হবে। প্রকৃতি আমাদের প্রকৃত বন্ধু তা মনে করতে হবে। যেমন পাহাড়কে আল্লাহ পাক পৃথিবীতে ঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ‘পেরেক’ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, তাকে আমাদের লালন করতে হবে। নতুবা প্রকৃতির বিরুদ্ধে পাহাড়, বনজঙ্গল, মৎস্যকুল, পশু পাখি নিধন করলে প্রকৃতি তথা আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর স্বরূপ দেখিয়ে নানাভাবে আমাদের সংশোধনের জন্য চেষ্টা করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। তাই আমাদের সকলকে প্রকৃতি বন্ধন আচরণ করতে হবে। এই দায়িত্ব সকল দেশের সকল সরকার প্রধানকে নিতে হবে। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক স্বীকার আমরা হয়ে পড়েছি।
ধর্মীয় জীবনে নতুন মাত্রা
করোনা আমাদের সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে নতুন পরিবর্তন, চিন্তার আচরণের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। করোনার কারণে আমাদের মসজিদ, মন্দির, গির্জা সকল কিছু প্রায় অনেক দিন ধরে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে। এখনও সীমিত আকারে আমরা নিয়মনীতি মেনে ব্যবহার করছি। পবিত্র রমজানে আমরা স্বল্প সংখ্যক মুসলিম নামাজ আদায় করেছি। ঈদের দিনও স্বল্প সংখ্যক মুসলিম অংশগ্রহণ করছে। এখনও মসজিদ, মন্দির, গির্জায় তিন ফুট ফাকা রেখে শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে ইবাদত করছি। কতদিন, কত বছর এই সকল নিয়ম মানতে হবে বলা যায় না। যতদিন পর্যন্ত কোবিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে ততদিন আমাদেরকে এই সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইবাদত, কাজকর্ম, শিল্প কারখানা, অফিস-আদালত পরিচালনা করতে হবে।
করোনার কারণে আমাদের সকল বিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সামাজিক ধর্মীয় কোন জলসা এখন আর হচ্ছে না। কিন্তু ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এখন ধর্মীয় প্রচার বেশ ভাল চলেছে। জুমার দিন সরাসরি খুতবা টিভির মাধ্যমেও আমরা ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছি।
মানুষের মধ্যে আল্লাহ পাকের ভয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ নিয়মিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির পূর্বের চেয়ে বেশী করছে। বাজারে কোরআন ও ইসলামী পুস্তকের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনেও ধর্মীয় বইয়ের পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে দেশে দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যুর ভয় মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৃত্যুর পর করোনার কারণে দেখা সাক্ষাৎ, জানাজা পড়া, দোয়া অনুষ্ঠান বেশ সীমিত হয়ে পড়েছে। একান্ত আপনজন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখার জন্য যেতে সাহস পাচ্ছে না। মৃত্যুর পর দাফনে আপনজনেরাও অংশগ্রহণ বেশ সীমিত হয়ে পড়ে। মৃত্যু ভয় মানুষের আপনজনের প্রতি ভালবাসা ও হ্রাস পেয়েছে। নিজে বাঁচো, তারপর আপনজন দেখো। এটাই মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছে স্রষ্টা, সৃষ্টিকর্তা, বিধাতা, ‘গড’ তথা মহান আল্লাহপাক।
সামাজিক অনুষ্ঠান, সভা সমাবেশ
সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, নৃত্য গানবাজনা বিগত ২৫শে মার্চ ২০ থেকে বন্ধ। দীর্ঘ দিন এই অচল অবস্থা সমাজের নতুন এক ছবি তৈরি করেছে। কোভিড-১৯ মানুষের জীবনের এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে দেশে সকল সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিনের ‘লকডাউন’ তথা ‘সরকারি ছুটি’ আমাদের জীবনে অলস জীবন ডেকে এনেছে।
আমাদের অর্থনীতি সেবা খাতের ভূমিকা বেশ বড় আকারের। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় তৈরি পোশাক শিল্প কর্তৃক ৭৬ শতাংশ। প্রবাসী ভাইদের পাঠানো অর্থ বড় ভূমিকা রাখে। সেবা খাত থেকে অবশিষ্ট প্রায় ১৪ শতাংশ বাজেটে জোগান আসে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের নিরবতা চলেছে। নাটক, সিনেমাসহ সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বন্ধ। করোনা পরবর্তী এই অঙ্গনে বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি পালন করে কমপক্ষে এক থেকে দুবছর চলতে হবে। তাই করোনা পরীক্ষা দ্রæত হওয়া জরুরি। সকলকে করোনা পরীক্ষা করে সঙ্গে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট রাখতে হবে। শুধুমাত্র করোনামুক্ত ব্যক্তিগণ একত্র হতে পারবেন। কোন ছোট্ট আকারে সমাবেশ, অনুষ্ঠান করতে পারবেন। নাটক, সিনেমা নির্মাণেও করোনার জন্য আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
দীর্ঘদিন হয়তো করোনার জন্য বিবাহ অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে না। আগামী মে থেকে দুই বছর পযৃন্ত সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে মুখে মাক্স পরে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে। এক এক টেবিলে তিন ফুট দুরত্ব রেখে বসে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। গান, বাদ্য চলবে তাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেহেতু নিজকে নিরাপদ রাখার বিকল্প কোন ঔষধ নাই। ঔষধও এখনও আবিষ্কার হয় নাই। চেষ্টা করছেন পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানীগণ।
দীর্ঘদিন হয়তো সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ পূর্বের মত করা যাবে না। তিন ফুট দুরত্ব বজায় রেখে জরুরি সভা করতে হবে। নিজকে বাঁচান, অন্যকে বাঁচতে সুযোগ দিন এই বক্তব্য অনেক দিন মানতে হবে।
মুসলিম জীবনে প্রভাব
নামাজ, রোজা, হজ যাকাত পালনের ক্ষেত্রে করোনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিছু দিন মসজিদ প্রায় বন্ধ থাকার পর এখন আবার খুলেছে। শারীরিক দুরত্ব রক্ষা করে মসজিদে নামাজ পড়ছে, আগামী অনেক দিন তা বজায় রাখতে হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দিন পূর্ব থেকে ওমরা হজ্ব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভীতির জন্য এই আদেশ সৌদি সরকার দিয়েছে। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কাবা জিয়ারত মুসলমানগণ করে আসছেন। কাবা সৃষ্টির পর প্রথম কাবা জিয়ারত ও তওয়াফ করেন,আমাদের আদি পিতা, প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ)। বহু বহু বছর পর এবার করোনার কারণে হয়তো হজ্ব পালন বিশ্বের সকল মুসলিম অংশ গ্রহণে সংশয় দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ এখন বন্ধ। করোনার পর কখন তা চালু হবে সুনির্দিষ্ট করে এখনও বলার সময় আসে নাই।
বিশ্ব জুড়ে এবার পূর্বের মত রমজান ও ঈদের আনন্দ মুসলমান সমাজে তেমন নাই। একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুসলিমরা তাদের রমজান পালন করছে। হাজার হাজার মুসলিম একাকী নিজ বাসায় তারাবিহ নামাজের মত ঈদের নামাজও আদায় করেছে। কেউ কেউ একই বাড়ির সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে তারাবিহ ও ঈদের নামাজ আদায় করেছে। ঈদে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি হচ্ছে না। মোলাকাত তিন ফিট দূরে থেকে করতে হয়েছে। অনেকে আবেগ ধরে না রাখতে পেরে মোলাকাত করছে। অনেক এলাকায় কিছু অসচেতন মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করেছে। এটা করা ঠিক হচ্ছে না। করোনা প্রতিরোধে এ ধরনের স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন কোনক্রমেই সমীচিন নয়।
এবার ঈদে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, বেড়ানো, সালাম বিনিময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য অনেকে তা না মেনে ঈদ পূর্বের মত পালন করেছে। তা ঠিক নয়। আগামী কমপক্ষে দেড় বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চলা উচিত। আমরা চলার চেষ্টা করব।
ক্রয় বিক্রয়, লেনদেন
করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ আমাদেরকে আরও বড় বেশী কাইটি নির্ভর বানিয়ে দিয়েছে। ব্যাংক, বীমা, বিপণী বিতান সহ সকল ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং ও অন লাইন ক্রয় বিক্রয় করোনা আমাদেরকে বেশ এগিয়ে দিয়েছে। সনাতন দোকানী ব্যবসার মধ্যে বেশ বড় রকমের পরিবর্তন আমাদের বড় বড় শহরগুলোতে এনেছে। অনলাউন ক্রয় বিক্রয় পৃথিবীর উন্নত দেশে বহু পূর্ব থেকে চলে আসছে। হোম ডেলিভারী করে ক্রয় বিক্রয় আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ উৎসাহ যুগিয়েছে। এবার করোনা হোম ডেলিভারী ও অনলাইন ক্রয় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
করোনার ব্যাপক আক্রমণের পর অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন ক্রয় এবং হোম ডেলিভারীর মাধ্যমে ক্রয় বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। যে সকল বিপণী প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্রয় বিক্রয় ও হোম ডেলিভারী নেই, সেই সকল বিপণী প্রতিষ্ঠান এখন থেকে তা চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যেহেতু আগামী এক থেকে দুই বছর করোনার আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। তাই উক্ত নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয় বিক্রয়, লেনদেন চলবে।
জীবনের ঝুঁকির কারণে সমাজের একটা অংশের কিছু মানুষ ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণী বিতানে যাচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছু উৎসাহী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বিপণী বিতানে গিয়ে করোনা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে শপিং করছে। যা করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। কিন্তু সাধারণ ‘মানুষ উপেক্ষা করছে’। এই ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা ঢিলাঢালা আচরণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলো। তবে ভবিষ্যতে জীবনের ঝুঁকির কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেনাকাটা করতে হবে। ধীরে ধীরে জনগণের মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে।
জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দেশকে এগিয়ে যেতে হবে। করোনা মুক্ত যেমন থাকতে হবে, তেমন অর্থনীতিকেও চাঙ্গা রাখতে হবে। করোনা পরবর্তী দীর্ঘদিন আমাদেরকে শিল্প কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য, বিপণী বিতানসহ সকল সেবা খাতকেও ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাই কর্মক্ষেত্রের আচরণ, অভ্যাস, ধরন, পরিবেশে বেশ পরিবর্তন আনতে হবে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক চর্চা
করোনা পরিস্থিতিতে দেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকাÐ নাই। শুধু কিছু রাজনৈতিক নেতা কর্মী ত্রাণ তৎপরতায় দেখা যায়। তাও খুবই কম। জীবন রক্ষার্থে সকলে ভীত, ব্যস্ত, নিরাপদে অবস্থান করছে। এখন ক্ষমতাশীল সকল দেশের সরকার জনগণের জীবন রক্ষার জন্য চেষ্টা করছেন। যার যার অবস্থান ও আর্থিক সঙ্গতি অনুযাযী জনগণের জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যম চেষ্টা করে চলছে। অনেক উন্নত দেশও করোনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার পরীক্ষা দিয়েছে। সময়মত, উপযোগী পদক্ষেপ না নিতে পারায় অনেক দেশের সরকার চরমভাবে জনগণের জীবন রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
আগামী সরকার পরিবর্তনে এই সকল বিবেচনাকে জনগণ সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেবে। যদি জনগণ তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। কারণ দেশে জনগণ তাদের মত প্রয়োগ করতে পারে না। ভোটারবিহীন বা ভোট নিজেদের মধ্যে সমাধা করে ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণা অনেকে বেশ ভালভাবে দিয়ে দেন। করোনা পরবর্তী দেশে ও বিদেশে কি ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় জনগণ থাকবে।
করোনা ভাইরাস দেশে বিদেশে অনেক ক্ষমতালোভীদের বেশ সতর্ক বার্তা দিয়েছে। ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় পরিবর্তিত হয়, তা কোরআন পাকের ঘোষণা। যারা অবিশ্বাস করেন, তাদের চিন্তা চেতনা ভিন্ন। অমুসলিমদের নিকট এই ধরনের বিশ্বাসের কোন মূল্য নাই।
আগামী কয়েক বছর হয়তো মানুষের চলাচল, জীবনযাত্রা জীবন মান সবই পরিবর্তন হয়ে যাবে। মুখে মাস্ক, হাতে গøাভস, শরীরে করোনা প্রতিরোধমূলক বস্ত্র হয়তো আমাদের নিত্যসঙ্গী হবে। এখন জনসমাবেশ ও করা যাবে না। সামনাসামনি বসে আলাপচারিতা অনেক দিন করা যাবে না। আইনের মাধ্যমে দুরত্ব বজায় রেখে সকল কাজকর্ম করতে হবে। রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। আইটি নির্ভর শিক্ষা, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিকতা অনেক দিন আমাদের মেনে চলতে হবে।
ভোগ ও ভোগবাদের চর্চা
আমরা সমাজের কিছু লোক ভোগ, বিলাস, আরাম আয়েশের প্রতি চরমভাবে ব্যস্ত ছিলাম। আর আমাদের দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে নিয়োজিত। করোনা আমাদেরকে আগামীতে ভোগ ও ভোগ্য পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করবে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে দেশের সরকার এই বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজন ও চলমান সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া হয়তো অনেকের পক্ষে কঠিন হবে। তাদের পক্ষে সরকার হাত মিলাতে হবে। বিলাসবহুল প্রকল্প সরকারকে বাদ দিতে হবে। হয়তো অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও ধীর গতিতে করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক অর্থ এবার মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন ও শিক্ষা উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাবে। প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ ও কমে যাবে, দেশে ও সেবাখাত সহ অনেক অর্থকরী তৎপরতা হ্রাস পাবে। তাই কৃচ্ছ সাধন করে জনগণের মূলতম চাহিদা পূরণে সরকার বেশী দৃষ্টি দিতে হবে।
সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাজ চেতনা
মানুষ সমাজ বন্ধ জীবন। সামাজিক বন্ধন মানুষকে দিয়েছে আনন্দ। সমাজ সম্পর্কে সুচিন্তা তাই মানুষ জন্মলগ্ন থেকে করে আসছে। একই ভাষার মানুষ, একই ধর্মের মানুষ, একই সংস্কৃতি বিশ্বাসী মানুষ স্ব স্ব বিবেচনায় আলাদা আলাদাভাবে আলাদা আলাদা ভূখন্ডে বসবাস করে।
করোনা ভাইরাস এসে বিশ্বে সামাজিক সকল কর্মকান্ড স্থবির বন্ধ হয়ে পড়েছে। জীবন রক্ষার জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অপরিহার্য হওয়ার কারণে সকল ধরনের সামাজিক সমাবেশ বন্ধ। মানুষ তাই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন। এখন মোবাইল, ই-মেইল ও নানা পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা এখন সামাজিক তৎপরতা ধরে রেখেছি।
করোনা পরবর্তী আমাদের সামাজিক কার্যক্রম কিরূপ হবে তা দেখার ব্যাপার। ইতোমধ্যে টিভি নাটকে করোনার পর সামাজিক চিত্রকে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির নাম প্রয়োগ দেখিয়ে নাটক দেখানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বেশী বেশী নাটক, উপন্যাস, গল্প প্রকাশিত হবে। করোনা পরবর্তী সামাজিক অনুষ্ঠানেও নতুনত্ব আসবে। সামাজিক যোগাযোগ অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে গায়ে হলুদ, খতনা ও নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন যত দিন আসবে না। ততদিন এমনিভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান করতে হবে। সভা সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম শারীরিক দূরত্ব রেখে কিছু দিন পরে শুরু হবে। কারণ দর্ঘি দিন মানুষ সামাজিক কর্মকান্ড বন্ধ রেখে ঘরে বসে থাকতে পারবে না।
শুধু মুসলিম সম্প্রদায় নয়, অন্যান্য ধর্মের যেমন খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও নানা উপজাতিগণ তাদের ধর্মীয় পূজা, আচার অনুষ্ঠান কোভিড-১৯ কারণে বন্ধ। এখন মসজিদ খোলার সাথে সাথে চার্চ, গীজাসহ নানা ধর্মের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চালু হয়েছে। আগামীতেও অনেক দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলকে নিজের জীবন রক্ষার স্বার্থে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক কর্মকান্ড চালাতে হবে। বিনোদন, ভোজন অনুষ্ঠান, বিয়েসহ নানা সমাগম অনুষ্ঠান এমনিভাবে নিতে হন। তাতে আর্থিক সাশ্রয় হবে দেশের।
জীবন সম্পর্কে মানুষের ধারণা
জীবন সম্পর্কে মানুষের নানা ধারণা রয়েছে। নানা ধর্মের মানুষ নাা ধারণা জীবন সৃষ্টি ও জীবনকাল নিয়ে। জীবনের সৃষ্টি নিয়েও মানুষের নানা মত। আবার অনেকে মনে করেন জীবন সৃষ্টির কোন সৃষ্টিকর্তা নাই। আপনা আপনি জীবের সৃষ্টি। আবার অনেকে মনে করেন বানরের রূপান্তর রূপ হচ্ছে বর্তমান নানা সভ্যতা।
কিন্তু জীবন সম্পর্কে মুসলিম সম্প্রদায়ের সুস্পষ্ট, স্বচ্ছ, সঠিক বক্তব্য পবিত্র আল কোরআন ও মহানবী (সাঃ) হাদীস শরীফ বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহপাক হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়াকে সৃষ্টির মাধ্যমে মানব সৃষ্টির বিকাশ। আজ পৃথিবীময় নানা ধর্মের, নানা সংস্কৃতির, নানা কৃষ্টির, নানা রং এর মানুষের জনক এক আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া থেকে। এটাই প্রকৃত সত্য ঘটনা।
অন্যান্য ধর্ম মতে সৃষ্টি কর্তা আছে স্বীকার করেন, কিন্তু সহযোগী নানা বিধাতাকে পূজা করা হয়। মূল স্রষ্টা সকলে একক শক্তিকে মেনে চলে। নানা দেব দেবী, সহযোগী হয় তাদের মূল স্রষ্টার সৃষ্ট। এই সকল দেব-দেবী, সহযোগীদের মন জয় অনেক ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করে। অনেকে আবার পরকালকে বিশ্বাসও করেন না। এই দুনিয়ায় সব। শেষ বিচার বলে কিছুই নাই। এই নশ্বর পৃথিবীই সব। এই পৃথিবীতে জীবনকে নিয়ে সব কিছু ভাবতে হবে।
আমাদের সমাজে আবার কিছু মানুষ রয়েছেন তারা মনে করেন ধর্ম কর্মের সঙ্গে অভিনয় নাচ, গান, নানা সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জীবনকে উজ্জ্বল করতে হবে। কিছু লোক আবার মনে করেন অন্যায় করা যাবে, সুদ ঘুষ খাওয়া দেয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম চর্চা করে নিলে সব কিছু মাফ হয়ে যাবে। জীবনটাকে আনন্দময় করে মানবতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করাই মুল্যবান জীবন।
জীবনযুদ্ধ বড়ই কঠিন। জীবন না জীবিকা এই নিয়ে সারা বিশ্বে জুড়ে বিতর্ক চলেছে। করোনাকে সাথে নিয়ে আগামীতে জীবন যুদ্ধ আমাদের করতে হবে। জীবিকা নির্ভর জীবন হবে আমাদের পরবর্তী জীবন চিন্তা।
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চর্চায় করোনা
গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও ধর্মীয় আলোচনায় করোনা পরবর্তী বিশেষ স্থান দখল করবে। ইতোমধ্যে কবি, সাহিত্যিকগণ করোনা প্রভাব, চরিত্র, ক্ষতি আরচণ, মানুষের জীবন মৃত্যুর নিয়ে চমৎকার কবিতা, গল্প, উপন্যাস তৈরিতে ব্যস্ত। আগামী একুশে মেলায় করোনা বিষয় নিয়ে অসংখ্য কাব্য, গল্প উপন্যাস ও প্রবন্ধের প্রকাশ ঘটবে। সাহিত্য অনুরোগীদের জন্য করোনা ভাইরাস চমৎকার বিষয় বস্তু এনে দিয়েছে। করোনা কি করলো, কেমন আচরণ করলো, কত মানুষ জীবন হারালো, মানুষ কেমন ব্যবহার করলো রোগীদের প্রতি, কেমন একাকী বাচার জন্য একান্ত আপনজনকে পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে ত্যাগ ও উপেক্ষা করার বহু কাহিনী সাহিত্যিক, নাট্যকার, সিনেমা প্রযোজকদের জন্য ভাল ভাল প্লট তৈরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন ধর্মের দৃষ্টিতে করোনা ভাইরাস মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক ‘আজাব’ হিসাবে পৃথিবীতে মানুষকে সংশোধনের জন্য প্রেরিত বলে বিশ্বাসে নতুন করে ভবিষ্যত আলোচনা, লেখা ও বিশ্লেষণে গভীর ভূমিকা রাখবে। এখনি ধর্ম প্রাণ মানুষের মধ্যে আল্লাহপাকের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও তার নির্দেশিত পথে চলার জন্য যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ধর্ম চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা পরবর্তী বিভিন্ন ধর্মের বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের চর্চা, প্রচার, বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে।
করোনা রোগীর প্রতি আমাদের আচরণ
করোনা এমন একটি রোগ যার কোন ঔষধ এখন পর্যন্ত নাই। বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহ উক্ত রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। অনেকের ধারণা করোনার আক্রমণ আরও ২ থেকে ৫ বৎসর পর্যন্ত থাকতে পারে।
করোনা আক্রমণে প্রতিদিন আমাদের দেশে মানুষ মারা যাচ্ছে। এই রোগ মানুষবাহী। রোগীর সংস্পর্শে আসলে বা তার হাঁচি, কাশি থেকে সহজে স্বস্ব ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। তাই করোনা রোগীকে সকলে ভয় করে। এমন কি মা ছেলে মেয়েকে, ছেলেমেয়ে বাবা মাকে পর্যন্ত দেখভাল করতে কাছে যেতে মৃত্যুর ভয় পাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মানুষ একেবারে আত্মকেন্দ্রিক। জানাজা দেয়া থেকে পর্যন্ত আপন আত্মীয় স্বজন দূরে থাকেন। বিশেষ কয়েক জন লোক পিপিই পরিধান করে সাহসের সঙ্গে দাপন কাজ সমাধান করছে।
করোনা রোগীর প্রতি আচরণ আমাদের কেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কেয়ামতের পর বিচার দিন যেমন প্রত্যেক মানুষ নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, কেউ কারো নেকি অন্যকে যাতে দিতে না হয়, তার জন্য আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়বে। ইয়া নফসি, ইয়া নফসি এ ধ্যান ধারণায় কেয়ামতের পর বিচার দিনে প্রত্যেক মানুষ ব্যস্ত থাকবে। মুসলিমগণ কোরআন ও হাদীসের আলোকে এই বিশ্বাস করে। ঠিক এখন যেন আমরা আমাদের সমাজে কেয়ামত পর ঐ চিত্রটি দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষ অনেক মানবিক। আমাদের দেশে ও বেশ কিছু মানবিক মানুষ রয়েছে। এই ঘটনা মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচেছ। এরাই মানুষ। এরাই সফল। এরাই মহান আল্লাহপাকের নিকট পুরস্কৃত হবে।
করোনা আমাদের মানবিক হতে বলে। জীবিকা নয় জীবন প্রথম। জীবন থাকলে তো জীবিকার প্রয়োজন হবে। করোনা পরবর্তী মানবিক ব্যবহার মানুষ মানুষের প্রতি কামনা করে
অর্থ, বিত্ত, আনবিক শক্তির চেয়ে বড় শক্তি
এত দিন বিশ্বময় অর্থ, বিত্ত ও আনবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ সমূহ বিশ্বে দাপট চালিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার করোনা নামক অদৃশ্য, এই ছোট্ট ভাইরাস অর্থ, বিত্ত‘ ও আনবিক শক্তির চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। সকল শক্তি আজ বিশ্ব জুড়ে করোনার নিকট পরাজিত। বিশেষ করে পরাশক্তিগুলো সব চেয়ে বেশী করোনায় অস্থির অবস্থায় পড়েছে। অনুন্নত ও গরীব, দুর্বল দেশ সমূহও করোনা ভাইরাসে তীব্র ভাবে আক্রান্ত।
বিশ্বের বড় বড় ধনী দেশ সমূহ যে পরিমাণ স্বাস্থ্য সেবায় বাজেট বরাদ্দ ছিল তা যে অপ্রতুল এটাই প্রমাণ করে। তাই আগামী দিনে স্বাস্থ্যখাত তথা সেবা খাতে আরও অনেক বেশী বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বেশী নজর দিতে হবে। চিকিৎসা ও গবেষণায় অনেক বেশী অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অনেক সরকার পরিবর্তন ঘটবে। নতুন নতুন সরকার আগামীতে দেশ সমূহ দেখতে পাবে।
করোনা ভাইরাস এমন শক্তিশালী যে কোন শক্তি কোন ক্ষমতাবান, বিত্তশালী, অর্থ সম্পদশালী করোনা আক্রান্তের ফলে সবকিছু থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আপনজন, আত্মীয়স্বজন কেউ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যান না। মৃত্যুর পর আপন সন্তান পর্যন্ত মরণদেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থেকে শুধু দূরে থেকে দোয়া করছেন। এই সময় তার অর্থাৎ সম্পদ, অর্থ, বিত্ত কোন কিছুই সাহায্য করতে পারছে না। কেমন অসহায় মানুষ এই ক্ষুদ্র, অদৃশ্য ভইরাসের নিকট। আর এই ভাইরাসের স্রষ্টা কত বড় শক্তিশালী তা একবার ভেবে দেখুন। তাহলে আমরা, আমাদের শক্তি, আমাদের সকল কিছু থেকে তার জন্য বিচেছদ হওয়া উচিত। খোদা পরাশক্তি অপরাজিত। সকল শক্তির একমাত্র উৎস মহান স্রষ্টা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে, মহা ক্ষমতার অধিকারী।
কৃষি হবে আমাদের মূল নির্ভরতার খাত
করোনা মানুষকে দেখিয়েছে বেঁচে থাকা বড় কঠিন এবং একমাত্র সম্পদ। জীবন থাকলে তো পরবর্তী যত সব আমার, আপনার ক্ষমতার বাহাদুরী দেখাবার সুযোগ থাকবে। জীবন চলে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। এটাই বাস্তবতা। এটাই একেবারে সত্য কথা।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রধান বিষয় হচ্ছে খাদ্য। প্রধান খাদ্য কারো কারো চাউল, গম, ভুট্টা, কলা প্রভৃতির যে কোন একটি। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চাল। এ ছাড়া ডাল, আলু সহ নানা সবজি, মাছ ও মাংস। করোনা পরবর্তী সকল দেশ খাদ্যে বড় সংকটে পড়বে। খাদ্য সংকট যে দেশ পড়বে না, সেই দেশ সব চেয়ে বেশী শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ সমূহ খাদ্য সমস্যা সব চেয়ে বেশী মোকাবেলা করতে হবে।
আগামী দুইটি বছর বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনুননত দেশ বাংলাদেশে ৫৪ হাজার বর্গমাইলে ১৮ কোটি মানুষের বাস। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর তিন বেলা খাদ্যের জোগান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের সংকট হবে। অর্থ থাকলেও আমদানী করে খাদ্য পাওয়াও কঠিন হতে পারে। তাই নিজের খাদ্যদ্রব্য নিজে উৎপাদন করা সব চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের জমি উর্বর। আমাদের কৃষক পরিশ্রমী। চাল, আলু, মাছ, মাংস, সবজি উৎপাদনে আমার কৃষক সমাজ খুবই উপযুক্ত। এখন প্রয়োজন সরকারের সক্রিয় সমর্থন, অর্থ জোগান, বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করা জরুরি। উৎপাদিত কৃষিপণ্য ন্যায্যমূল্যে সরকারকে ক্রয় করেÑ মানুষের হাতে পৌঁছাতে হবে। বিপণন ব্যবস্থা কৃষিখাতে সর্বাপেক্ষা সহযোগীতা সরকারকে দিতে হবে।
অন্যদিকে চাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, গম, ভুট্টা, হলুদ, মরিচ প্রভৃতি জরুরি কৃষি পণ্য আগামী দুই বছরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আগামী বছর থেকে সামনের ৫ বৎসর সব সময় কৃষিখাত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে।
আগামীতে আমাদেরকে জীবন আচরণে, জীবন যাপনে পণ্য ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। আগামীতে দেশে বিদেশে নানা ভাবে অর্থ সংকট হবে। তার বহনের ক্ষেত্রে আমাদের সংকোচন নীতি অবলম্বন করতে হবে। ভোগ্যপণ্য ব্যবহার আমাদের শতভাগ কমিয়ে আনতে হবে। ভোগ্যপণ্য ব্যবহার কমালে আমাদের স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি হবে না। কিন্তু পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, সুষম খাদ্য গ্রহণ সকলের জন্য জরুরি। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য সুষম খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। বিশ্বব্যাপী সংকটের ফলে আমদানি করা কঠিন হবে। তাই নিজস্ব দেশে কৃষিখাতে প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করে রপ্তানিতে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আগামীতে আমাদেরকে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা এখনও প্রচুর পরিমাণ প্রসেস ফুড বিদেশ থেকে আমদানী করি। আমাদের দেশে যে সকল ফল প্রচুর পরিমাণ উৎপাদিত হয় ঐ সকল ফলের প্রসেস ফুড তৈরির কারখানা স্থাপনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি পণ্যের মূল্যও বেশী পাবো। আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ আম, আনারস, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি উৎপাদিত হয়। এই সকল ফল দীর্ঘদিন রেখে খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের দেশে নাই। অন্যদিকে প্রচুর সবজি, মাছ ও মাংস আমাদের উৎপাদিত হয়। করোনা পর আমাদের এই সকল পণ্যের উৎপাদন দ্বিগুণ, তিন গুণ করার চেষ্টা করতে হবে। তাতে যেমন নিজেদের চাহিদা পূরণ হবে তেমনি অতিরিক্ত রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হবে।
এখন কৃষি জাত পণ্য, খাদ্য পণ্য এমন কি কিছু সবজি পর্যন্ত আমাদের দেশে আমদানি করা হয়। প্রক্রিয়াজত কারখানার অভাবে এই সকল পণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি না। তাই এই সকল পণ্যের পরবর্তী ধাপ প্রসেস করার মত শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারলে অনেক দেশি কর্মসংস্থানের দরজা খোলে যাবে। এখন যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন, আর যারা বিদেশে যেতে পারবেন না, তাদেরকে এই সকল খাতে কর্মে নিয়োগ দিয়ে বেকার সমস্যার বড় রকমের সমাধান হতে পারে।
আইটি খাত পরবর্তী আকর্ষণ
আইটি ব্যবহারের কারণে আজ আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য সহ সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কর্মকান্ড আইটি ব্যবস্থার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন প্রায় আইটি নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের আক্রমণের আইটি ব্যবহার বহুগুণ, বহু পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রামক থেকে রক্ষা পাওয়া, সংক্রামক সনাক্ত করার ক্ষেত্রেও আইটি ব্যবহার যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে মোবাইলে এপস তৈরি করে করোনা রোগী সনাক্ত, চলাফেরা, গতিবিধি প্রভৃতি তত্ব সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অফিস কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু আইটি নির্ভর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয় নাই। তাদের ব্যবসা বাড়িতে বসে বেশ ভালভাবে চলেছে। আগামী দিন গুলিতে ব্যবসা বাণিজ্যে আইটি ব্যবহার বেশ বৃদ্ধি পাবে।
আমরা আমাদের যুব সমাজকে আইটি ব্যবসায়, পুজি কম নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে পারি। এই জন্য আগামীতে আইটি গবেষণা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। এইচএসসি পাসের পর আইটি টেকনিশিয়ান তৈরির জন্য আমাদের আইটি, ইন্সটিটিউটগুলোকে আরও বেশী উদ্যোগ হিতে হবে। বিদেশে ও এই ধরনের টেকনিশিয়ানদের চাহিদা থাকবে। বিদেশে গিয়েও আমাদের দক্ষ আইটি যুবকেরা বেশ ভাল চাকরির সন্ধান পাবে।
দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা ও আইটি নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনলাইন পে সেট করে সহজে ঘরে বসে পণ্য পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। করোনা পরবর্তী প্রায় সকল খাতে অনলাইন পণ্য ডেলিভারী বৃদ্ধি পাবে।
তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া খাত ও জনশক্তি রপ্তানিতে আগামী বছরগুলোতে বেশ সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মানুষের উপার্জন কমে যাওয়ার ফলে তৈরি পোশাক ও চামড়ার পণ্যের ব্যবহার হ্রাস পাবে। মধ্যপ্রাচ্যে আর্থিক সঙ্কটের কারণে কর্মসংস্থান ঐ সকল দেশে বেশ কমে যাবে। উন্নয়ন কর্মকান্ড মধ্যপ্রাচ্যে কমে যাবে। তাই দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন কমে যাবে। ইতিমধ্যে বহু শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে ফেরত এসেছে। আরও ফেরত আসবে। কিন্তু আইটি খাতের ব্যবহার বাড়বে। পৃথিবীর উন্নত দেশ সহ অনুন্নত দেশেও আইটি চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এইজন্য সরকারকে আগামী বছরও পরবর্তী বছরগুলোতে আইটি খাতের জন্য বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে দক্ষ আইটি ব্যক্তি তৈরির জন্য সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তথ্য ও গবেষণা থেকে আমাদের জানতে হবে দেশে ও বিদেশে বছরে কয়জন কম্পিউটার সায়েন্সের দক্ষ গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আসন বন্টন করতে হবে। বর্তমান সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আসন সংকুলান না হলে দ্রæত কম্পিউটার সাইন্স এর জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে অথবা পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐ বিষয় চালু করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
এই জন্য আমাদের বিদেশে অবস্থানরত কম্পিউটার সায়েন্সের বিশেষজ্ঞদের দেশে এনে শিক্ষকতায় ও ট্রেনিং এ কাজে লাগাতে হবে। তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আইটি শিক্ষা খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। করোনা পরবর্তী অনেক উদ্যোগের মধ্যে আইটি খাতের উন্নতি জাতির জন্য অনেক বেশী কল্যাণ বয়ে আনবে।
উন্নয়ন বাজেট ও মেগা প্রকল্প
করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। মেগা প্রকল্প নামে উন্নয়নের প্রকল্প গুলোতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে হবে। তথা আগামী কয়েক বছর উন্নয়ন বাজেট স্বাভাবিকভাবে কমিয়ে আনতে হবে। অত্যন্ত জরুররি খাত হিসাবে চিহ্নিত খাত সমূহে অনেক বেশী বরাদ্দ দেয়ার কারণে দেশী ও বিদেশী অর্থের টান থাকবে। তাই বাজেটে অনেক সমন্বয় করতে হবে।
জীবন রক্ষা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করোনা পরবর্তী বিশ্বের সকল সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সকল প্রকার যোগাযোগ তথা স্থল, বিমান ও জল পথে মানুষের চলাচল কমে আসবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের ফলে ভ্রমণ ব্যয় বেড়ে যাবে। তাই অনেকের পক্ষে তা বহন করতে পারবে না। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধির বাইরের কারণে অনেক দেশ অনেক দেশের মানুষের উপর ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
আমাদের নয়টি মেগা প্রকল্পে কাজ চলেছিল। আরও বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণের পথে কাজ চলেছিল। এখন এই সকল প্রকল্পের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেটে অর্থ যোগান দেয়া হবে। যেহেতু বিদেশী অর্থ জোগান কমে যাবে, কষ্ট হবে, শর্ত বহুল হবে। নিজস্ব অর্থ সংগ্রহও বেশ কমে যাবে। ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা পড়ার কারণে সরকারের সকল প্রকার কর আদায় বেশ কমে যাবে। মানুষের আয় ও হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে ব্যক্তি করও বেশ কমে আসবে।
আমাদের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, রূপপুর আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, পায়রা গভীর সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণসহ অনেক প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে বেশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থ ছাড়াও বিদেশি টেকনিশিয়ান ও পরামর্শকদের অনুপস্থিতির জন্য কাজের গতি কমে আসে।
কোভিড-১৯ এ
পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী কর্ম তৎপরতা
বাংলাদেশে ৮ই মার্চ ’২০ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর সরকার পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীকে করোনা প্রতিরোধ, জনগণের সহযোগিতা, নানা সেবা প্রদানের জন্য নিয়োগ প্রদান করেন। অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার সাথে আমাদের আইন রক্ষাকারী সকল সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা দুর্যোগে দেশপ্রেমিক বাহিনীসমূহ অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে দেশের মানুষের কল্যাণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
করোনা পরবর্তী বাহিনী সমূহে করোনা মোকাবেলায় নতুন নতুন কৌশল ট্রেনিং গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের সেবা প্রদান অনেক দিন ধরে করতে হবে। তাই এখন পুলিশ, , সেনাবাহিনীতে করোনা মোকাবেলায় কাজ করার জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। সরকার জরুরি ভিত্তিতে সারা দেশের চাহিদা অনুযায়ী নিয়োগ কত করতে হবে তা নির্ধারণ করে নারী পুরুষ সংখ্যা নির্ধারণ করতে বিজ্ঞাপন দেয়া প্রয়োজন। দ্রুত নিয়োগ ও পরবর্তী আধুনিক ট্রেনিং দিয়ে এই সকল সদস্যকে যোগ্য করে গড়ে কাজে নিয়োগ দিতে হবে।
করোনা ইউনিটে যে সকল সদস্য কাজ করবেন তাদের জন্য করোনা ভাতা নামে একটি বিশেষ ভাতা চালু করতে হবে। জীবনের ঝুকি থাকার কারণে প্রত্যেক সদস্যের জন্য মৃত্যু ঝুকি বাবদ কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা একটি জীবন বীমা অবশ্য থাকার আইন কার্যকরী করতে হবে। তাদের এই ইউনিটের সদস্যদের মধ্যে আলাদা বাড়তি উৎসাহ যোগাবে। ইতিমধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে যে সকল ঈমানদার মৃত্যুবরণ করবেন তারা শহিদি মর্যাদা পাবেন। এইটি আল্লাহপাকের ঘোষণা। আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুক। করোনা পরবর্তী আমাদেরকে আরও বেশী সাবধানতা অবলম্বন করে, স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে মেনে আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করার মধ্যেই আমাদের নিরাপত্তা ও নিরাময় রয়েছে।
আবুল কাসেম হায়দার
সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।
লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।