Why Corona and our Responsibilities

কেন করোনা এলো? কি করণীয়!

যুগে যুগে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, মানব জাতির স্রষ্টা, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সংশোধন করা সৎ পথে আসা, আল্লাহপাকের দেয়া বিধান অনুযায়ী নিজের সমাজের রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এইরূপ মহামারী দিয়ে পরীক্ষা করেন। অতীতে এই জাতীয় মহামারী পৃথিবীতে অনেক এসেছে। কিন্তু মানুষ মহামারী চলে গেলে সব ভুলে যায়। আমরা মুসলিমগণ কোরআন ও হাদীসের আলোকে উল্লিখিত বিষয়টি বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন আল্লাহপাক এর নির্দেশনা অনুযায়ী এখনও গঠন করতে পারি নাই। আমাদের চরিত্রে যথেষ্ট ভুল রয়েছে। আমাদের জীবনে মোনাফেকী চর্চা অনেক বেশী। অন্য দিকে অমুসলিমগণ শিরক বেদয়াত নিমজ্জিত। আমাদের মধ্যে ও অজান্তে অনেক শিরক, বেদয়াত করে ফেলছি। কিন্তু শিরক, বেদয়াতকারীগণ কখনও আল্লাহপাকের রহমত লাভ করতে পারবে না।


যুগে যুগে মহামারীর তথ্য আমাদের নিকট রয়েছে। মহামারী (সাঃ) জবানায় মহামারী দেখা দিয়েছে। পরবর্তী খলিফাদের রাজত্ব সনদ নানা মহামারী এসেছিল। তাই রসুলে পাক (সাঃ) করোনা নামক মহামারী থেকে মুক্তির জন্য বলেছেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি, ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুঝামি ওয়া মিন ছাইয়্যিল আসস্কাম। (আবু দাউদ, ধবল, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অন্য দিকে আত-তিরমিযী উল্লেখ রয়েছে রসুল করিম (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুক আল-আফ্যিয়াহ অর্থাৎ ওই আল্লাহ, আমি তোমার কাছে আফ্যিয়া চাচ্ছি। আফ্যিয়া অর্থ “ইয়া আল্লাহ, আমাকে সকল দুঃখ, গøানি এবং ভোগান্তি থেকে রক্ষা কর।”


অন্যদিকে করোনা (Covid-১৯) এর উৎপত্তি সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন করোনা তৈরী করেছে চীনের হুয়ান প্রদেশের একটি ল্যাবে। ঐ ল্যাব থেকে করোনা তৈরী করে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। সাড়া বিশ্বের অর্থনীতি ধ্বস ধরিয়ে দিয়ে অর্থনীতির পরাশক্তি হওয়ার জন্য চীন এই কাজ করেছে। নানা যুক্তি দেখিয়ে চীনকে অভিযুক্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক দেশ অর্থনৈতিক ক্ষতি আদায় করার জন্য মামলা করেছে। ক্ষতিপূর দাবী ও করেছে। চীন বলেছে কোন ল্যাব থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয় নাই। করোনা এসেছে বাদুর থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রকাশ পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল বক্তব্য বের হয়ে আসবে।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২১শে এপ্রিল’২০ বলেছে করোনা ভাইরাস উৎপত্তি কোন ল্যাব থেকে নয়। বাদুর থেকে সংক্রমিক হয়েছে। কোন দেশ বা মানুষ এটি তৈরী করেন নাই বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোন তথ্য, উপাত্ত থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ল্যাব থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে প্রমাণ পাই নাই।


বর্তমান বিশ্বে করোনা মোকাবেলায় ধনী দরিদ্র সকল দেশই যুদ্ধে নিয়োজিত। সময়মত, বৈজ্ঞানিক কর্ম পরিকল্পনা যে সকল দেশ গ্রহণ করতে পেরেছে সেই সকল দেশে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। যে সকল দেশ বিষয়টি সময়মত গুরুত্ব দিতে পারে নাই, সেই সকল দেশ ভয়াবহ মৃত্যুর মুখামুখি। উল্লেখ করার মত দেশ তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর এবং ভারতের কেরাল প্রদেশ। চীন, সুইডেন, ভিয়েতনাম, এই সকল দেশ ও অঞ্চলে পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল।


এখন পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয় নাই। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো খুবই কঠিন। আজ ২২শে এপ্রিল ‘২০ মার্কিন এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বরেছে, আগামি শীতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।


করোনা আক্রমণের ফলে দেশে দেশে অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এজ ২২শে এপ্রিল ২০২০ জাতিসংঘ ঘোষনা করেছে আগামীতে দেশে ২৬ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে। করোনারবিশেষ ধাপের পূর্বে কোন দেশ অর্থনীতিকে সবল করার জন্য লকডাউন কার্যক্রম কোনক্রমে বন্ধ করা যাবে না। করোনা থেকে মানুষকে প্রথমে বাড়িয়ে রাখতে হবে। মানুষ বাচলে তো অর্থনীতি। মানুষের জন্য অর্থনীতি। অর্থনীতির জন্য মানুষ নয়। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরকারের ম্যেলিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।


ঈড়ারফ-১৯ পর দেশে নানা অর্থনৈতিক দৈন্যতার সৃষ্টি হবে। শিল্প বাণিজ্য বড় রকমের ঝুঁকিতে পড়বে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প খাত ও বৈদেশিক রেমিটেন্স বড় রকমের হুমকির সম্মুখীন হবে। বিদেশে শ্রমিকদের কর্মচ্যুতিও তৈরী পোশাক শিল্প নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ফলে পুরো দেশ আর্থিক মঙ্গার সম্মুখীন হবে। অন্ততঃ দুর্ভিক্ষ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য এখন থেকে কৃষিখাত নম্বার ওয়ান গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যের মূল চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদনে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের জন্য চাল উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। মাছ, আলু, নানা রকমেরস সবজি, পেয়াজ, রসুন, আদা প্রভৃতি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, বিনামূল্যে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে কৃষক সাহায্যের সঙ্গে লাভের আশায় বেশী চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তবেই দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করতে হবে। কৃষিখাতের জন্য সব করার পর অর্থ থাকলে অন্য খাতে খরচ করা হবে। এমনি পরিকল্পনা শাসক দল গ্রহণ করতে হবে।


তৈরী পোশাক শিল্পখাত ও জনশক্তি রপ্তানি খাত যে করোনা পর বিশেষ কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অর্থনীতিতে গতি আসবে না। তবে সীমিত পর্যায়ে সকল দেশ তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চাঙ্গা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চীন তার দেশের লকডাউন বেশ শিথিল করে শিল্প কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালুন করা শুরু করেছে।


করোনা পরবর্তী তৈরী পোশাক শিল্পখাত বড় রকমের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক দৈন্যতার ফলে তৈরী পোশাকের চাহিদা কমে যাবে। ক্রয়ক্ষমতা হারাবে লক্ষ লকব্ষ মানুষ। চাকুরীচ্যুত হবে লক্ষ্য লক্ষ জনশক্তি। তাই চাহিদা কমে যাবে। সেই জন্য তৈরী পোশাকের চাহিদা কমে গিয়ে মানুষের একান্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ঠিক থাকবে। তাই তৈরী পোশাক শিল্প কঠিন প্রতিযোগীতার সমআমুখীন হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়ান, ভারত, শ্রীলঙ্কা অধিক তৈরী পোশাকের বাজার দখলের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।


অন্যদিকে পোশাকের মূল্য ও বেশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের মালিকগণ পূর্বের তুলনায় সিএমও কম পাবেন। এই ক্ষেত্রে বাজার ধরে রাখার জন্য সরকারকে তৈরী পোশাক শিল্পের মালিকদের বেশ কিছু ছাড় দিতে হব। প্রথম অগ্রিম কর কর্তন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। বিভিন্ন খাতের ভ্যাট ও টেক্স হ্রাস করে ৫ শতাংশে নিয়ে আনতে হবে। তৈরী পোশাক ও স্পিনিং খাতে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে পড়লে দেশের মৌলিক অর্থনীতি ও বেকারত্ব ঠিক থাকবে। শ্রমিক অশান্তি থেকে ভাগের জন্য তৈরী পোশাক, বস্ত্র খাতের স্পিনিং ও ফিনিশিং খাতকে নীতি সহায়তা সরকারকে আগামী তিন বয়ে দিয়ে যেতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার সুদের হার হ্রাস করেছেন। আগামী তিন বছর সুদের হার বস্ত্র খাতের জন্য ৫ শতাংশ ঠিক রাখতে হবে।


জনশক্তি রপ্তানি করোনা পর বড় সমস্যার সম্মুখীন হবে। মধ্যপ্রাচ্য সহ সকল দেশে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। চাকুরী হারাবেন হাজার হাজার বাংলাদেশী। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ্য দেশে ফিরে এসেছে। আগামীতে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক চাহিদা কমে আসবে। প্রতিবেশী দেশ সমূহ বেশ সক্রিয় হবে। সাধারণ শ্রমিকের চাহিদা কমে যাবে। তাই বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরী করার জন্য প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণী ও দশম শ্রেণী পাশের পর ছাত্র-ছাত্রীর একটি বড় অংশকে টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।


বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের জন্য বিশেষ করে জন্য প্রাচ্যে মুসলিম দেশ সমূহের জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরীর পরিকল্পনা এখন থেকে হাতে নিতে হবে। অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে, দক্ষ শ্রমিক তৈরীর কোন বিকল্প আমাদের থাকবে না। ইতিপূর্বে সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি দ্রæত বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরী আমাদের প্রতিটি কারিগরি স্কুল, কলেজে টেকনিক্যাল বিষয়-সঙ্গে বিদেশী কয়েকটি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। টেকনিক্যাল বিষয়ে পাশের সঙ্গে সঙ্গে ঐ শিক্ষার্থী খাতে প্রয়োজনীয় বিদেশী ভাষা যেমন আরবী, জাপানি, চীনা, জার্মানী ও ইংরেজী ভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থী কমপক্ষে একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষা বাধ্যকতা থাকতে হবে। তা হলে সেটা বিদেশে সহজে ভাল বেতনে চাকুরীর সুযোগ পাবে।


উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ব সংস্থা সমূহে ভাল পদে কর্মসংস্থানের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নীতি নির্বাচনী ভূমিকায় বাংলাদেশী যত বেশী স্থান দখল করতে পারবে তত বেশী দেশ উপকৃত হবে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিআমাদের করণীয়


করোনা পরিস্থিতি:
জীবনযুদ্ধে আজ আমরা করোনায় চরমভাবে আক্রান্ত। পুরো দেশ আজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আজ ৩০শে এপ্রিল ২০ প্রায় ৬২টি জেলায় করোনা সংক্রামিত হয়ে পড়েছে। করোনা রোগী প্রথম সনাক্ত হয় ৮ই মার্চ ২০। কিন্তু করোনা শুরু হয়েছে নভেম্বর ১৯ চীন দেশের উহান প্রদেশে। চীন থেকে করোনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ২১০টি দেশও অঞ্চল আজ করোনায় সংক্রামিত হয়েছে।


দেশের এই মুহ’র্তে প্রশ্ন ছাড়িয়েছে জীবন ও জীবিকা নিয়ে। কোনটি এখন আমাদের প্রথম প্রয়োজন। জীবন রক্ষা কি প্রথম?নাকি জীবিকার জন্য জীবন বিসর্জন কে আমরা মেনে নেবো! বিগত ২৬শে মার্চ ২০ থেকে সরকার কোভিড-১৯ জন্য দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সকলকে করে ঘরে যাবার নির্দেশ দেন। দেশের সকল শিল্প কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস-আদালত, দোকান, বিপনীবিতানসহ সকল স্তরে বন্ধ করে ঘরে থাকার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী দিয়ে সারা দেশে নিয়ন্ত্রনের জন্য কাজ করতে থাকে। পুরো দেশ স্থবির হয়ে পড়ে। সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক-বীমাসহ সকল আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ও বন্ধ হয়ে যায়। সীমিত পর্যায়ে কিছু ব্যাংক শাখা খোলা থাকে।


কিন্তু ৫ই এপ্রিল ২০ হঠাৎ করে কিন্তু তৈরী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। দলে দলে শ্রমিক কর্মচারী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী হতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি পত্র-পত্রিকায় সমাজের সকল স্তরের মানুষ তৈরী পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার তুমুল সমালোচনা করে। করোনা পরিস্থিতি মূল্যায়ন না করে হঠাৎ করে তৈরী পোশাক শিল্প কারখানা খুলে দেয়া একেবারে সমন্বয়হীনতা ও শিশুসুলভ সিদ্ধান্ত।
এরপরের দিন যাবার তৈরী পোশাক শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন আবার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় দলে দলে ফিরে যায়। তাতে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকল মতের লোকেরা বলেন আবারও করোনা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হলো। সরকারের সমন্বয়হীনতা করোনা মোকাবেলা একে হবে ‘লেজ গোমরে’ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আমাদের অবস্থান:
অন্যদিকে সরকার ‘লকডাউন’ শব্দ ব্যবহার ‘সাধারন ছুটি’ শব্দ ব্যবহার করে ২৬শে মার্চ থেকে পুরো দেশে ‘ঢিলাঢালা’ভাবে সরকার করোনা মোকাবেলায় চেষ্টা করতে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগের নানা নির্দেশনা প্রতিদিন টিভি, রেডিও ও পত্র-পত্রিকায় প্রচার হতে থাকে। কিন্তু জনগণ তেমন মানে নাই। তাই করোনা সংক্রামন দ্রæত ৬৩টি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। আজ ২রা মে ২০ পর্যন্ত শুধু রাঙামাটি জেলায় এখনও কোন করোনা রোগী পাওয়া যায় নাই। সৌভাগ্যবান রাঙামাটি জেলার জনগণ। অন্যদিকে রাঙামাটি জেলার ‘লকডাউন’ নিয়মগুলো বেশ ভালভাবে যাবার চেষ্টা করছে। প্রশাসন ও বেশ তৎপর। অন্যদিকে কোন শিল্প কারখানা না থাকার কারণে করোনা সংক্রামন হওয়ার সম্ভাবনা ও বেশ কম।


বর্তমানে ৩রা মে ২০ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশী করোনা আক্রান্ত। দেশে পরিবহন খাতসহ অন্যান্য সকল খাত লকডাউনে রয়েছে। আমাদের প্রতিদেশ ভারত ‘লকডাউন’ আগামী ১৫ই মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। ভারত করোনা আক্রান্ত এলাকাকে লাল, সবুজ, নীল, হলুদ চার ‘জোনে’ ভাগ করে করোনা মোকাবেলা করছে। তাদের কেন্দ্রীয় ‘কন্ট্রোল কমিটি’ সুন্দরভাবে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়েছে। টেকনিকেল কমিটিও করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, কৃষি, ত্রাণ মন্ত্রণালয়সমূহ স্ব স্ব দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাই সমন্বয়হীনতা আমাদের করোনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।


আজ ২রা মে ২০ সংবাদে দেখা যাচ্ছে সরকার আগামী ১৭ই মে ২০ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করছেন। দু’এক দিনের মধ্যে সরকারী সার্কুলার জারি হবে। আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তের ৫৫ দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে আজ থেকে তৈরী পোশাক শিল্পের পর টেক্সটাইল সেক্টরের বিভিন্ন খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে দোকান মালিক সমিতি দোকান, সুপার মল খুলে দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছে। রমজানের শুরুতে সীমিত পর্যায়ে ইফতার জন্য অনেক রেষ্টুরেন্ট খোলা হয়েছে। তাতে পাড়ায় মহল্লায় জন সমাবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যক্তিবর্গ বলছেন এই সকল কর্মকান্ডের ফলে করোনা বৃদ্ধি পাবে। এই সকল প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি পুরাপুরি পালন করে চলতে পারছে না। এখন বিশেষজ্ঞগণ বলছেন সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান টেকনিকেল কমিটি কর্তৃক পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিল্প মালিক ও সরকার উভয় এই কঠিন সময়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ডা. মুশতাক হোসেন আজ ২রা মে ২০ বলছেন সামরিক সুবিধা নেয়ার জন্য তৈরী পোশাক মালিকগণ পুরো দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া কোনক্রমে ঠিক হবে না। মহা বিপর্যয়ের থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য ঘরে ঘরে বিষয়ে টেস্ট করতে হবে। পুরোপুরি ‘লকডাউন’ মেনে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেরী হয়েছে বটে তবে সময় শেষ হয়ে যায় নাই। জীবন ও জীবিকা রক্ষা স্বার্থে সমন্বয় খুবই জরুরী। তাই ৩রা মে ২০ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিশেষ যৌথ সভা ডেকেছেন।


সাবেক পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহম্মদ এর দৃষ্টিতে করোনা প্রতিরোধের আগে বা পাশাপাশি না হেটে পিছনে পিছনে হাটছি। তাই করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। সেই করুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা বাঙলাদেশ সরকারের মোটেই নাই।

জীবন ও জীবিকা:
স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সকল শিল্প কারখানা পরিচালনা করার নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৩রা মে ২০ এক বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন। উক্ত সভায় সকল ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের সকল মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তৈরী পোশাক শিল্প সহ সকল শিল্প কারখানায় করোনা প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য বিধি সম্পূর্ণ পর্যায়ে মেনে চলার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।


স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে : ১) কারখানা চালুর পূর্বে পুরো কারখানাকে জীবানু মুক্ত করতে হবে ২) প্রত্যেক শ্রমিক কর্মচারীকে কারখানায় প্রবেশ পথে জীবানু মুক্ত করাতে হবে ৩) হাতকে সাবান নিয়ে কমপক্ষে ২০ মে ধৌত করতে হবে ৪) কয়েক ঘণ্টা পর পর কারখানাকে জীবানুমুক্ত করতে হবে ৫) সকল শ্রমিক কর্মকর্তাকে দিনে কয়েকবার হাত সাবান দিয়ে ধৌত করতে হবে ৬) শ্রমিকদের বাসস্থানকে পরিবহন রাখতে হবে ৬) যাতাযাত সময় প্রতিটি শ্রমিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। কিন্তু এই সকল স্বাস্থ্য বিধি বিধান কতটুকু কার্যকরী হচ্ছে না হবে বলা মুশকিল। সকল শিল্প কারখানায় এই সকল বিধান মানার সক্ষমতা নাই। এই সকল সক্ষমতা সৃষ্টির জন্য সকল কারখানার সমান সুযোগ সুবিধা নাই।


আজ ৪ঠা মে ২০ পালনীয় প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও কনফারেন্সে ঘোষণা দিয়েছেন দোকান মল শীঘ্রই চালু হবে। শহর ও গ্রামসমূহে দোকান চালু হয়ে গেলে মানুষের জীবনের সাধারণ কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসবে। সরকারী ও বেসরকারী সকল অফিস এখনও চালু হয় নাই। সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ব্যাংক-বীমা সীমিত পর্যায়ে কিছু কাজ হচ্ছে। কৃষি, কৃষি জাতীয় পণ্য উৎপাদন, ঔষধ দোকান ও ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান পূর্ব থেকে চালু রয়েছে।

জীবন ও জীবিকা প্রশ্নে আমরা বড় দ্বন্দ্বে পড়ে রয়েছি। জীবন আগে বা জীবিকা আরো। এই প্রশ্ন এখন আমাদের নিকট বড়। বাংলাদেশে আজ ৪ঠা মে ২০ করোনা আক্রমণ তুঙ্গে উঠে নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিপোর্ট অনুযায়ী মোট আক্রান্ত ১০,১৪৩ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮২ জন। আক্রান্ত রোগী সারা দেশের সকল জেলায়। আজ সনাক্ত হয়েছে ৬৮৮ জন। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ৩৫ লক্ষ এর অধিক মৃত্যুবরণ করেছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার। সরকার ইতিমধ্যে লকডাউন বৃদ্ধি করেছেন আগামী ১৬ই মে ২০ পর্যন্ত।


পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে দোকান চালু করার চিন্তা করছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিক্ষসমূহ চালু করার জন্য প্রতিটি জেলায় জেলায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সারাদেশে প্রাইভেট যানবাহন চলাচল বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাড়ায় মহল্লায় ছোট ছোট দোকান সমূহ ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে। মে মাসের শেষ পর্যায়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সীমাহীন হয়ে পড়বে না আমাদের জন্য সহনশীল পর্যায়ে থাকবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে আজ বাংলাদেশ বড় সমস্যার সম্মুখীন। লকডাউন সঠিকভাবে আরও কমপক্ষে এক মাস পালন করে বাংলাদেশে করোনা রোগী সনাক্ত সমাপ্ত করতে পারলে আমাদের জীবন শঙ্কার সম্ভাবনা অনেক কমে যেতো। কিন্তু জীবিকার জন্য এখন যখন আমরা ঢিলেঢালাভাবে অথবা লকডাউন খুলে দেয়ার কারণে করোনা আক্রমণ আরও বেশী মাত্রায় সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। এই ঝুঁকি নিয়ে সরকার করোনা মোকাবেলায় এগিয়ে যাচ্ছেন।


আজ ৬ই মে ২০ সরকারের ঘোষিত ‘লকডাউন’ শিথিল করার কারণে দেশে করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাবে বলে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি প্রদান করেন। সরকারের এই সময় ‘লকডাউন’ শিথিল করা উচিত হয় নাই বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলে তখন থেকে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সীমাহীন হয়ে পড়বে। দেশ এক ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে চলে যাবে।


বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননও বলেছেন সরকারের ‘লকডাউন’ তোলে নেয়ার সিদ্ধান্ত খুবই খারাপ পরিণতি দেশে ডেকে আনবে। ওয়াকার্স পার্টি সরকারের ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম রাজনৈতিক দল।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা শুরুতে ভুল করেছি। অনেক সময় আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু এখনও আমরা স্বাস্থ্যবিধি কোনক্রমে মানছি না। তাই করোনা সংক্রামক আরও বৃদ্ধি পাবে। কত যে বৃদ্ধি পাবে তা বলা তখন মুশকিল। তিনি বলেন দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবন বা জীবিকা তা সরকার নির্ধারণ করতে হবে।


শিল্প বাণিজ্য ও অন্যান্য ব্যবসা : দেশে ২৬শে মার্চ ২০ জুন ‘লকডাউন’ হওয়ার পর দেশে শিল্প বাণিজ্য সও নানা ব্যবসা বিরূপ প্রস্তাব পড়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের সেবা খাতের অবস্থা অন্যান্য শিল্পের মত। দিন মজু ও হতদরিদ্র মানুষের অবস্থা খুবই করুন। কর্মহীন মানুষ খাদ্যের দাবিতে বিভোক্ষ ও করছে। সরকার প্রত্যেক অভাবী মানুষের নিকট খাদ্যদ্রব্য পৌছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরাও দরিদ্র অভাবী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় শিল্প মালিক ও ধনী ব্যক্তিগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কোটি কোটি অর্থ দান করেছেন।


আমাদের তৈরী পোশাক শিল্প একেবারে থমকে পড়েছে। কোটি কোটি অর্থের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। নতুন কোন রপ্তানি আদেশ নাই। বিশ্বব্যাপী দোকানপাট, শপিংমল এমনও খোলে নাই। তাই তৈরী পোশাকের বিক্রি নাই। রপ্তানি আদেশ ও নাই। এই অবস্থা কত দিন চলবে এখনও বলা মুশকিল। তাই বিদেশী অর্থ উপার্জনের প্রধান খাত থেকে দেশ বঞ্চিত হলো। অনেক তৈরী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের ধারে উপস্থিত। বেকার হবে হাজার হাজার শ্রমিক। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেয়া দিয়েছে।


দ্বিতীয় রপ্তানি মাধ্যমে বৈদেশিক খাত হচ্ছে আমাদের মানব সম্পদ। রেমিটেন্স আসা তো দূরের কথা হাজার হাজার বাংলাদেশী মধ্যপ্রাচ্যসহ সকল দেশ থেকে ফেরত আসছে। নতুন করে বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার সম্ভাবনা এখন এক মাত্র নাই। কখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে বলা যাচ্ছে না। বিদেশে কোন দেশই শ্রমিক নেয়ার প্রত্যাশা ও নাই। বিদেশে আমাদের এম্বেসির মাধ্যমে অসহায় শ্রমিক কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। অনেক দেশে বিদেশী বাংলাদেশীরা খাদ্যের অভাবে পড়েছে।


আমাদের অন্যতম রপ্তানি খাদ্য হচ্ছে পাট, মৎস্য এই সকল খাত ও রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। বিদেশে কোন চাহিদা না থাকার কারণে পাচ খাত ও মৎস্য খাত ও বিদেশী মুদ্রা উপার্জনের – বন্ধ হয়ে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এই সকল খাতে বেকার হয়ে পড়েছে। বিশ্বে নানা দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কোনভাবে এই সকল খাতের রপ্তানি বাজার খুলবে না। তাই বৈদেশিক অর্থ আয়ের আরও একটি বড় খাতসমূহ বন্ধ হয়েছে।


দেশের হাট বাজার, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ প্রায় ৪০ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকার ফলে স্থানীয় শিল্পে বিপনন বন্ধ হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় শিল্প উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই সকল খাতের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী আজ বেকার। তাদের অসহায় জীবন সমাজে চরমভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প আজ একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে। দেশে বস্ত্র খাতের তিনটি খাত কেমন স্পিনিং, উইভিং, ডাইং কিনিশিক খাত দীর্ঘ দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ। দেশে চাহিদা না থাকার কারণে পুরো বস্ত্রখাতের বাণিজ্য বন্ধ। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আজ বেকার। ব্যবসায়ীগণও আজ বেকার জীবনে এসে উপস্থিত। তাদের ব্যাংক ঋণ বাড়ছে। সুদ ও বাড়ছে। অসহায় জীবন আজ বস্ত্রখাতের সকল মালিক ও শ্রমিকদের। প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে জড়িত।


আমাদের দেশে নির্মাণ শিল্প একটি বড় খাত। এই খাতে হাজার হাজার রিয়েল স্টেট কোম্পানী কাজ করছে। এপার্টমেন্ট, বাড়ি ও জমির প্লট তৈরী ও বিক্রি এই খাতের একটি বড় ব্যবসা। এখন সকল ব্যবসায়িক তৎপরতা বন্ধ। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকগণ বেকার জীবন যাপন করছে। প্রথাদের উদ্যোক্তাগণ ব্যাংক ভারাক্রান্ত। খবর হচ্ছে, কিন্তু কোন সায় নাই।


দেশে বিগত ২৬শে মার্চ ২০ থেকে সকল সরকারী বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বন্ধ রয়েছে। সকল শিক্ষা কার্যক্রম আজ বন্ধ। তবে সরকার সীমিত পর্যায়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে কিছু কিছু ক্লাস নিচ্ছেন। বেসরকারী খাতের কিছু কিছু ইসলাম মিডিয়াম স্কুল অন-লাইনে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাশ নেয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্র ভর্তি, ক্লাস চালু রাখার জন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে। কিন্তু টিউশান ফি ও ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ থাকার কারণে আর্থিকভাবে অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চাপের মধ্যে রয়েছে। কারণ শিক্ষক, কর্মচারীদের বিশাল বেতন ভাতা দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বাবদ নানা খরচ বহন করতে কষ্ট হচ্ছে। যাদের ব্যাংক ঋণ রয়েছে সেটি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের উদ্যোক্তাগণ চাপের মধ্যে রয়েছেন। সরকারের ঘোষিত আর্থিক স্বল্প সুদের সহযোগিতা এখনও শিক্ষা খাতের জন্য দেয়া হয় নাই। শিক্ষা খাতের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের কোন ভাতা দেয়ার জন্য সরকারের আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন।


দেশের ব্যাংকিং ও অ-আর্থিক খাত পূর্ব থেকে লাজুক অবস্থায় ছিল। সুশাসন ও নিয়মনীতির স্বস্থ প্রয়োগের অভাবে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিতে ছিল। করোনা আক্রমণের ফলে দেশের ব্যাংকিং শিল্প চরম হুমকির সম্মুখীন। বিগত ১২ বছরে দেশের সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়েছে। ব্যাংক টাকা ফেরত পাইনি। খোজ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার অর্ধিক অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতি ডাকাতি হয়েছে। বিচার হয় নাই। টাকা ও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয় নাই। বিদেশে একটা মামলা হয়েছে কিন্তু অবস্থা উন্নতি নাই। তদন্ত হয়েছে। বিষয়টি দিয়েছে। কিন্তু কোন বিচার হয় নাই। কোন কোন ব্যাংক এর মূলধন সঙ্কট রয়েছে। সরকারী ব্যাংকগুলোকে সরকার বাজেট থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণ করেছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক বেশ অসুবিধায় রয়েছে। এই ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত নিয়ে কিভাবে ব্যাংকসমূহ সরকারের দেয়া ঋণ স্বচ্ছভাবে তিনি বন্টন করবেন। কোন কোন প্রণোদনায় সরকার অর্ধেক টাকা দেবেন বাকী টাকা ঋণ গ্রহিতা দেবেন। কিন্তু সমূহকে পুরো অর্থের দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু ভঙ্গুর এই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো এত বড় গুরুদায়িত্ব পালন করার সক্ষমতা নাই।তাই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সমাধানে আসতে হবে।


অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা লিজিং কোম্পানীগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেউলিয়া প্রায়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানীকে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। করোনা মহামারীতে অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কে সরকার স্বল্প সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ সহায়তা দিতে হবে। সরকারী অর্থ লিডিং কোম্পানী কোম্পানীগুলোতে ডিপোজিট রাখার কাজকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরী করতে হবে।

করোনা পরিস্থিতিতে এখন জরুরী করণীয় :
১. অবিলম্বে করোনা মোকাবেলায় গঠিত টেকনিকেল কমিটিতে মূল্যায়ন করা উচিত। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম। করোনা বিষয়টি অত্যন্ত টেকনিকেল ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর। তাই বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে করণীয় ঠিক করা জাতির জন্য কল্যাণকর। প্রয়োজনে টেকনিকেল কমিটিতে আরও দেশ বরেণ্য টেকনিকেল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে নিয়ে সকল দলমতের ব্যক্তিদের সৎ, সঠিক ও বৈজ্ঞানিক মতামত টেকনিকেল কমিটির মাধ্যমে সরকার প্রধানের নিকট আসা উচিত।

২. করোনা তথা কোভিড-১৯ একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ। তাই বিষয়টি জাতীয় ভিত্তিতে মোকাবেলা করতে হবে। একক কোন একটি দলের পক্ষে এই মহামারী মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি জাতি ঐক্যমতের ভিত্তিতে করোনা বিষয় সরকারকে অগ্রসর হওয়া উচিত। তাতে সরকারের সফলতা সকলের সমন্বয়ে উদ্যোগ গ্রহণ কলে শুধু কোন মন্দ কাজের জন্য সরকার দুরোরোগ হবে না। সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিকে করোনা বিষয় ছোট একটি ভাগ্যিস হতে হবে। তাতে সরকার লাভবান হবে। সমালোচনার উর্ধ্বে থেকে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হবে। দেশ এগিয়ে থাকে।

৩. এখন দেশকে ভারতের অনুকরণে জবফ, সড়ঁংব, এৎববহ তিনটি ভাগে বিভক্ত করে করোনা চিহ্নিত করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে রেড জোন এ কারফিউ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। গ্রীন জোন স্বাভাবিক জীবন শুরু করার চেষ্টা হতে পারে। ভারতের মত বন্ধু দেশের নীতি অনুকরণ আমাদের জন্য শ্রেয়।সব বিষয় আমরা ভারতকে গুরু জানি, করোনা বিষয় গুরু মানলে অসুবিধা কি!

৪. দ্রুত লক্ষ লক্ষ লোকের করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন বিদেশ থেকে করোনা টেস্ট আমদানি করে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই বর্তমানে তাকে কাজে লাগাতে হবে। বেসরকারী সকল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারী খাতের সকল হাসপাতালের করোনা রোভারে সেবা সরকার বহন করবে। তাই সকল বেসরকারী হাসপাতাল করোনা রোগীর চিকিৎসা দেবে। তাতে দ্রুত মানুষ উপকার আসবে।
প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে সরকারী বা বেসরকারী একটি হাসপাতালকে করোনা বাদে অন্যান্য রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে অন্যান্য রোগীদের সমস্যা অনেক বেড়ে থাকে।


৫. জনগণকে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে ‘রেড জোন’ এলাকায় কারফিউ দিয়ে এই আইনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রয়োজনে সকল শিল্প কারখানা, দোকান, বিপনী বিজ্ঞান, নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেড জোন এলাকায় বন্ধ করতে হবে। মসজিদ মন্দিরকে প্রার্থনা বন্ধ করতে হবে। অরেঞ্জ ও গ্রীন জোন এলাকায় ভারতীয় কৌশল অবলম্বন করে অগ্রসর হতে হবে।


৬. জরুরীভিত্তিতে দেশে পাসকৃত সকল ডাক্তারও নার্সকে সাময়িক বিশেষ আদেশে নিয়োগ দিতে হবে। পরবর্তী নিয়ম অস্থায়ী চতাদের চাকুরী স্থায়ী করা যাবে। ডাক্তার, নার্স অধিক করোনা আক্রান্ত হওয়ার ফলে ডাক্তার ও নার্সের সভা দেখা দিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সকল ডাক্তার ও নার্সকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাদের সেবার মাধ্যমে সরকার ও দেশ উপকৃত হবে।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments