Abdul Hye Sidker

আবদুল হাই শিকদারঃ এক দিগন্ত প্রসারী কবি

স্কুল জীবন থেকে লেখালেখির অভ্যাসটা আমার ছিল। দশম শ্রেণীর ছাত্র যখন, তখন এক প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগীতায় চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে একমাত্র পুরষ্কার পেয়ে ধন্য হয়েছিলাম তখন ১৯৬৯ সালের কথা। সন্দ্বীপ উপজেলা সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুলের ছাত্র আমি। পাঁচশত টাকা নগদ পুরষ্কার এবং একখানা মূল্যবান সনদ তখন চট্টগ্রাম জেলা কমিশনার আমাকে প্রদান করেন। সেই দিন আনন্দে তখনকার ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের খান স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন। আমাকে সকলে অনেক ধন্যবাদ দেন আমি এই দিন অনেক বেশী খুশী হয়েছিলাম।


সেই ধারাবাহিকতা ধরে কলেজ জীবনে এসে কিছু কিছু সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করি। কয়েকটি কবিতা ও লিখেছিলাম। তা আমার নিকট এখন নেই। ব্যবসা জীবনে এসে অনেক দিন সব থেমে ছিল। ব্যবসার সমস্যা ও তার সমাধান করতে গিয়ে আবার নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার ভাল অভ্যাসটি চালু হয়ে পড়ে। লেখালেখির সুবাদে কবি, সাহিত্যিক, লেখকদের সঙ্গে বেশ একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। বিভিন্ন পত্রিকায় নানা বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশের পর অনেকের সঙ্গে বেশ আন্তরিকতা জমে উঠে।


দৈনিক ইনকিলাবে আমার অনেক কলাম ছাপা হয়। তখন ইনকিলাবে সাংবাদিকতা করতেন কবি- আবদুল হাই শিকদার। পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই একটি সাহিত্য সভায় তার বক্তব্য, কবিতা পাঠ শোনে বেশ ভাল লাগতে থাকে।


আমার লেখা প্রথম গ্রন্থ বাংলাদেশের শিল্পঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা ১৯৯৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক বাংলা বাজার, সকালের খবর, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক পূর্বকোণ, Financial Express, দৈনিক সংবাদ প্রভৃতি পত্রিকায় নানা বিষয়ে প্রবন্ধ সমূহ প্রকাশিত হয়। ঐ সকল প্রবন্ধের সমন্বয়ে উক্ত বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সেই কি আনন্দ বলা যায় না। খুবই ভাল লাগার মধ্যে অনেক দিন আমার কেটেছে। প্রথম প্রকাশের আনন্দ অনেক দিন হৃদয়ে ছিল।


পরবর্তীতে বাংলা একাডেমী থেকে আমার পর পর দুইটি বই প্রকাশিত হয়। প্রথম বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বইঃ “ব্যবস্থাপনা উৎপাদন ও বিপণন বস্ত্র শিল্প প্রেক্ষিত” এবং দ্বিতীয় দুইটি হচ্ছে “ব্যবসায় সংস্থপন ও আমদানি রপ্তানি ম্যানুয়েল”। বই দুইটি যথাক্রমে মার্চ ১৯৯৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০২ সালে বাংলা একাডেমী প্রকাশ করে। শতকরা ১২ শতাংশ হারে নগদ সম্মানী ও বাংলা একাডেমী প্রদান করে। বই দুইটি প্রকাশের কিছু দিনের মধ্যে সকল কপি বিক্রি হয়ে যায়।


১৯৯০ সালে কোন এক সময়ে আমার একটি বই এর প্রকাশনা উৎসব জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করা হয়। তখনকার বাংলা একাডেমীর ডিজি জনাব সৈয়দ আনোয়ার হোসেন উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথির মধ্যে কবি আবদুল হাই শিকদার অন্যতম। অধ্যাপক এমাজউদ্দিন স্যার উক্ত প্রকাশ- অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সুললিত, শুদ্ধ বাংলায় চমৎকার ভাষণ আজও আমার কানে বাজছে। সেই দিন কবি আবদুল হাই শিকদার অনলবর্ষী, শত বিশেষণে, বাক্যে আমার বই “বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা উৎপাদন ও বিপণন বস্ত্র শিক্ষা প্রেক্ষিত” উপর প্রকাশনা উৎসবের বক্তব্য সকল শ্রোতাকে মোহিত করে।


বেশ কয়েক বছর পর কবি আবদুল হাই শিকদার সহ আমার গ্রামের বাড়ী সন্দ্বীপ উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলায় বেড়াতে যায়। তখন ২০০৩ সালের পরের কথা। যখন আমি সন্দ্বীপ হারামিয়া ইউনিয়নে ‘আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। কয়েক বিঘা জমির উপর মহিলাদের শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে, নারী শিক্ষার প্রসারের মনোভাব নিয়ে নিজ অর্থে সন্দ্বীপ অজগ্রামে কলেজটি স্থাপন করি। যে বছর কলেজ চালু হলো, তখনি আমার নিজ গ্রামে মগধরা ইউনিয়নে আমার পিতা-মাতার নামে ‘সেকান্দর সাফিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা’ ও প্রতিষ্ঠা করি। অবশ্য ২০১৪ সালে কিছু ব্যক্তি মাদ্রাসাটি দখল করে নেয় এবং মাদ্রাসার নাম এবং প্রতিষ্ঠাতার নামও পরিবর্তন করে মাদ্রাসাটি চালু রাখে। তাতেও আমি মনে করি আমার মরহুম পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে যে নেক নিয়তে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি, তার সওয়াব পিতা-মাতা পাবেন এবং আমরাও পাবো ইনশা-আল্লাহ। তবে মনে বেশ ব্যথা অনুভব করেছি এবং করছি। পরিস্থিতির শিকার আমার মতো আরও অনেক মানুষ এদেশে এখন আছে।


আবদুল হাই শিকদার সহ ঢাকা থেকে আমি এবং আমার এক বন্ধু শফিকুল মাওলা সহ সড়ক পথে চট্টগ্রামের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে নদী পথে পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপে আমার নিজ বাড়িতে পৌঁছি । আবদুল হাই শিকদারের আগ্রহ ছিল কবি নজরুল এক সময় সন্দ্বীপ গিয়েছিলেন, তাই তার সন্দ্বীপ দেখার আগ্রহ। কোথায় কোথায় নজরুল গিয়েছিলেন সেই সকল স্থান দেখবেন। তা ছাড়া কবি নজরুল ইসলামের বন্ধু কমরেড মোজাফফর আহম্মদ বাড়ী সন্দ্বীপ। তারই সঙ্গে কবি নজরুল সন্দ্বীপ বেড়াতে যান। কমরেড মোজাফফর আহমদ এর বাড়ীতে নজরুল বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেন। তাছাড়া একটি সন্দ্বীপ। সমুদ্র মাঝে। চারিদিকে জলরাশি। দেখতে কেমন। প্রভৃতি! কবি আবদুল হাই শিকদারকে সন্দ্বীপ যেতে আগ্রহী করে তোলে। তাই হলো। ভাল ভাবে সন্দ্বীপ পৌঁছে দুপুর খাবার আমাদের বাড়ীতে সেরে বিশ্রামে গেলাম। লেখার শেষে সন্দ্বীপ কবির ভ্রমণ ঘটনা লিখার চেষ্টা করবো। এখন কবিকে নিয়ে আমাদের লেখা।


কবি আবদুল হাই শিকদার ১লা জানুয়ারী ১৯৫৭ সালে গোপালপুর, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়াজেদ আলী এবং মা হালিমা খাতুন। পিতা ছিলেন একজন কৃষিবিদ। পিতা-মাতা দুজনই ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আসাম জীবনের ছাত্র।
মানবতা, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক এই কবির মুখে সব সময় ধ্বনিত হয়েছে শোষণমুক্ত সমাজ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদের কথা। তাই কবি তার কন্ঠে বলেনঃ

তোমার ভিতরে আজ ঘুম নেই বাংলাদেশ,
কেবল ঘুমের জন্য বোবা হাহাকার মাথা কুটে মরছে সর্বত্র
তুমি অস্থির তুমি ব্যাকুল তুমি উন্মুত্ত।
শিকড় থেকে ক্রমাগত আলগা হয়ে যাচ্ছে মাটি।
টানমাটাল অস্তিত্ব থর থর কেঁপে উঠেছে।
ভয়ঙ্করভাবে বিস্ফোরিত তোমার দু চোখ বেয়ে বেয়ে নামছে অবিরত রক্তের ধারা।

লজ্জায় তোমার ভোরের দোয়েল দেশ ছেড়ে গেছে।
অপমানে মাথানত করে দাঁড়িয়ে আছে তোমার শে^তশুভ্র শাপলা
মায়ের জঠর থেকে নেমেই তখন যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে
তোমার নবজাতক।
আর প্রেমপ্রীতি বাৎসল্য ভ্রাতৃপ্রেম সব সব কিছু
অন্তঃসারশূন্য চৈত্রের বাতাসে বিলাপ করে ফিরছে।

কবি আবদুল হাই শিকদার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বকীয়তা, সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরার জন্য তার সাহিত্যে ব্যাপক বাংলার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার কবিতা, গল্পে, ছড়ায় সর্বত্র একই ধ্বনি বার বার আমরা শোনতে পাচ্ছি। কবি তাই বলেনঃ

আসুন ঘৃণা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে
আসুন বারুদ ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে
আসুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই
যেভাবে ইউরোপীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন
গাজী সালাহউদ্দীন
আর আমাদের প্রতিটি কবিতা অর্জন করুক আশ্চর্য দ্যুতি।

কবি আবদুল হাই শিকদার ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্য চর্চা করে এসেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা অনার্স ডিগ্রী লাভ করার পর কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা দিয়ে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সকল অঙ্গনে তিনি অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। ৯০টির অধিক গ্রন্থ তার প্রকাশিত হয়েছে।

তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “আশি লক্ষ ভোর’ ১৯৮৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘বাংলাদেশের পথে’ তার খুবই মূল্যবান প্রবন্ধের বই। ‘শুকুর শামুদের চ‚য়াত্তর ঘাট’ গল্পের বই ২০০২ সালে প্রকাশের পর বেশ পাঠক সমাদৃত হয়। ভ্রমণ কাহিনী মূল গ্রন্থ বেশ কয়েকটি রয়েছে। ভ্রমণ সমগ্র ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। ‘মানিক উদদীন ইউসুফ’১৯৯২ জীবনীমূলক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদনা ছাড়াও নজরুল গবেষণামূলক গ্রন্থ কবিতা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘কবিতীর্থ চুরুলিয়া’-১৯৯৭, ‘বাংলাদেশে নজরুল চর্চাঃ মুখোশ ও বাস্তবতা’২০০৩ প্রভৃতি নজরুল বিষয়ক গ্রন্থ আমাদের সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।


শিশু সাহিত্যে কবি আবদুল হাই শিকদার অনেক বেশী কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত শিশুদের জন্য তিনি ২১টির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। শিশু গ্রন্থ সমূহ হচ্ছেঃ সান পাখিদের দিন ২০০১, ইউলিয়ারা পথ হারানো ২০০১, বাঘ বাহাদুর ২০০২, দারুন সুন্দর সুন্দরবন ২০০৫, আমাদের দাদী ২০০৩, সময় ছিল দুপুর ২০০২, টম একাত্তর ২০১৩ প্রভৃতি।

কবি শিশুদের খুব ভালবাসেন। তাই শিশুদের জন্য প্রচুর, সুন্দর সুন্দর লেখা লিখেন। কবির ছড়া সমগ্র আমাদের শিশুদের জন্য বিরাট, সুন্দর উপভোগ্য ভান্ডার। ৬৪টি সুন্দর সুন্দর, ছড়া নিয়ে ‘লেখালেখি’ প্রকাশনী ২০০৯ সালে কবির ছড়া সমগ্র প্রকাশ করে চার রঙের ছাপায়, নানা ছবি দিয়ে অলংকিত ছড়া সমূহ বেশ আনন্দ জোগায়। শিশু সাহিত্যিক আবদুল হাই শিকদার শিশুদের মাঝে দেশপ্রেম, দেশকে বেশী বেশী ভালবাসার জন্য “বাংলাদেশের লোক” শিরোনামে ছড়ায় বলেনঃ

দেশান্তরী যে হতে চায় হোক,
আমি তো ভাই বাংলাদেশের লোক।
দিল্লী লাহোর নিউইয়র্ক নয়,
আমার ভিতর মেঘনা প্রাণময়,
ডালের ধারা সকাল সন্ধ্যা বয়।”

শিশুদের মাঝে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘একুশ’ শিরোনামে লিখেনঃ

ধান এলো গো গান এলো গোএকুশ একুশ দেশে,
বুকের ভিতর রক্ত উঠে
ভালবাসায় হেসে।
একুশ আমার মাথার ওপর
পরশ মমতার,
সোনার পালক সকাল বেলা
পদ্মা যমুনার।
একুশ জেনো গর্জে ওঠে
দেখলে অবিচার,
বাংলাদেশ ও জগৎজনের
একুশ অহঙ্কার।

কবি নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কবির আগ্রহ প্রচুর। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে খুবই ভালবাসেন। প্রচুর গবেষণা নজরুলকে নিয়ে শিকদার করেছেন। প্রবন্ধ লিখেছেন। বই প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রচনামূলক গবেষণাধর্মী বই তিনি নজরুলকে নিয়ে লিখেছেন। তিনি যখন নজরুল ইন্সটিটিউটের দায়িত্বে ছিলেন, তখন নজরুল নিয়ে বেশ সময় দিয়েছেন, গবেষণা করেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন, এই প্রকাশও করেছেন। নজরুল সংক্রান্ত তিনি ৩টি তথ্যচিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেন।

  • কুমিল্লায় নজরুল মার্চ ২০০৬
  • ত্রিশাল নজরুল মে ২০০৬
  • চট্টগ্রামে নজরুল আগস্ট ২০০৬
  • কবিতীর্থ পতিসর ২০০৫


নজরুল গবেষণা মূলক গ্রন্থ সমূহ হচ্ছেঃ নজরুল রচনায় পলাশি ট্র্যাজেডী ২০০৫, নজরুল রচনায় মোহররম-২০০৬, বিশ^ময় নজরুল ২০১২, নজরুল সাহিত্য, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ২০১২ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত তার সৃষ্টি।
সকল কবি তাপিত-পীড়িত বিপন্ন জনগণের জন্য সব সময় লিখেন। কবি আবদুল হাই শিকদার ও তার ব্যতিক্রম নন। কাশ্মির, আফগানিস্তান, কি বাংলাদেশের দুঃখী, নিপীড়িত মানুষকে নিয়ে কবি তার রচনা লিখেন। কবি তার ভাষায় বলেন


“রুমীর হাতে হাত রাখলেই অনুধাবন করি
আমার পেছনের সীমা নির্দেশ করছে অতীত
আর সামনে ‘ভবিষ্যতের দেয়াল,
মাঝখানে আমার অপেক্ষা ও অশ্রæর তাওয়াফ
যা তখন লাল হয়ে উঠছে আমারই রক্তে।
খোদার কছম, এই রক্তপাতের কারণ সা¤্রাজ্যবাদ।
এখন প্রত্যয় হয়, প্রেমের পথকে নিরঙ্কুশ করার জন্যই
ফুলের মৌসুমেও হাতগুলোতে উঠে আসছে তরবারি।”


কবি আবদুল হাই শিকদারের অন্য সৃষ্টি টেলিভিশন এ ‘কথামালা’ অনুষ্ঠান। ১৯৯২ থেকে ৯৬ এবং ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই সময়ে তিনি জাতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিন্তা চেতনায় দেশী ভাবধারার অফুরন্ত সৃষ্টি সাহিত্য অনুষ্ঠান ‘কথামালা’।
কবি আবদুল হাই শিকদার তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশী বিদেশী বহু- পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

  • বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার ২০০৩
  • চুরুলিয়া নজরুল একাডেমী পুরষ্কার ভারত ২০০৬
  • নতুনগতি সাহিত্য পুরষ্কার, ভারত ১০১০
  • জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মাননা ২০০৩
  • কবি তালিম হোসেন ট্রাস্ট পুরষ্কার ২০০৩


কবি আবদুল হাই শিকদার শুধু একজন কবি নন। তিনি একজন স্বার্থক আলোকচিত্রী শিল্পী। ১৯৯৭ সালে তার একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে আর কোন পলাশী নয়, এবং ১৯৯৪ সালে তিনি একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। তা ছিল পলাশি, মুর্শিদাবাদ ও নবাব সিরাজদ্দৌলার উপর।
কবি আবদুল হাই শিকদার বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে কঠোর ও কঠিন ভ‚মিকা সব সময় পালন করে এসেছেন। ১৯৯৬ সালে সেপ্টেম্বও মাসে তিন এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু দেশের প্রশ্নে তিনি কখনও আপোশ করেন নাই।


কবি আবদুল হাই শিকদার একজন মানবতার কবি। মনুষ্যত্বের কবি। আল্লাহ প্রেমিক এক কবি। একজন একনিষ্ঠ মুসলিম হিসাবে তাই তার কবি প্রায় উচ্চারিত হয়-


জানি একদিন একটা চিঠি পাব আমি
খুব ঘন নীল প্রিয়দর্শিনীর লীলায়িত ভঙ্গির মতো
পৃথিবীর সাময়িক ভ্যানগুলোকে বোকা বানিয়ে আমাদের
উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।
আজকের জীবনের সমস্ত গ্লানি অন্ধকার
আর টুকরো টুকরো মৃত্যুর অনেক ওপারে
সেদিন কোথাও কোনো দুঃখ থাকবে না।

আমি কবি আবদুল হাই শিকদারকে খুবই ভালবাসি। তার লেখনি, বক্তব্য সব সময় আমাকে মোহিত ও উৎসাহিত করে। তার দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

Abul Quasem Haider
আবুল কাসেম হায়দার

সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি আজীবন সদস্য : এশিয়াটিক সোসাইটী বাংলাদেশ, বাংলা একাডেমী, চট্টগ্রাম সমিতি, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা ।

লেখক দৈনিক আজকের আওয়াজ ও সাপ্তাহিক প্যানোরামা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments